বাংলাদেশে নগদ টাকা ছাপানো, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বণ্টনে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ বিপুল খরচ কমাতে ক্যাশলেস বা নগদবিহীন লেনদেন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।
রবিবার (১০ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর জানান, কাগুজে নোটের ব্যবহার কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতিমধ্যে কিউআর কোডভিত্তিক লেনদেন জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য নীতিগত সহায়তা ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। ‘লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে কিউআর কোড ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হবে’, বলেন আহসান এইচ মনসুর। এতে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ভোক্তা—সবার লেনদেন হবে দ্রুত, নিরাপদ ও স্বচ্ছ; পাশাপাশি রাষ্ট্রের খরচও উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে বলে জানান তিনি।
ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য স্মার্টফোনের গুরুত্ব তুলে ধরে গভর্নর বলেন, ‘বর্তমানে আর্থিক লেনদেন, বিল পরিশোধ বা যেকোনও অনলাইন সেবা নিতে স্মার্টফোন অপরিহার্য।’ তিনি জানান, ৬ থেকে ৭ হাজার টাকার মধ্যে ভালো মানের স্মার্টফোন বাজারে আনতে কাজ চলছে, যাতে শতভাগ মানুষ এ সুবিধার আওতায় আসে। এ লক্ষ্য পূরণে ইন্টারনেটের দাম কমানো ও সেবার মান উন্নত করার প্রয়োজনীয়তার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।
নগরায়ণ ও আবাসন খাত প্রসঙ্গে গভর্নর বলেন, ‘দেশে এখনও কয়েক মিলিয়ন নতুন আবাসনের প্রয়োজন রয়েছে। মানুষ আর গ্রামে ফিরবে না—এটা বাস্তবতা। তাই সাশ্রয়ী আবাসন পরিকল্পনা নিতে হবে। ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা জমি ডেভেলপারদের সঙ্গে অংশীদারত্বে ব্যবহারের বিষয়েও ভাবা হচ্ছে।’
সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকার ব্যাংক খাতে সংস্কারসহ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, যা রফতানি খাতকে ভালো অবস্থায় রেখেছে এবং বড় ধরনের অর্থনৈতিক বিপর্যয় এড়াতে সাহায্য করেছে। তবে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে না, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, রাজস্ব আহরণও বাড়ছে না—যা উদ্বেগজনক।’
আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স প্রমুখ।
আমার বার্তা/এমই