চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজ দেশের অন্যতম প্রধান রাজস্ব সংগ্রাহক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানি, আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে বড় পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অপচেষ্টা প্রতিহত করেছে। ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় গঠিত ‘এআইআর’ (অ্যাডভান্সড ইনভয়েস রিভিউ) শাখা জুলাই ২০২৪ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত মোট ৭৬২টি রাজস্ব ফাঁকির ঘটনা উদ্ঘাটন করেছে।
এমন ঘটনায় প্রায় ১১০ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে শুল্ক ফাঁকি রোধে প্রাপ্ত অর্থ প্রায় ৫০ কোটি এবং জরিমানা থেকে আয় হয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের নবনিযুক্ত কমিশনার মোহাম্মদ শফি উদ্দিন জানান, এআইআর শাখার কঠোর তদারকির মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কাজ করা হচ্ছে। রাজস্ব ফাঁকি প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি কঠোরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে এবং প্রয়োজনে সরেজমিন অভিযান পরিচালনা করা হবে।
পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১১ মাসে মাসিক রাজস্ব আয় ও অতিরিক্ত আদায়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। জুলাইয়ে ১০ কোটি ১৩ লাখ, আগস্টে প্রায় ১১ কোটি, সেপ্টেম্বর ৬ কোটি ৩৪ লাখ, অক্টোবর ৭ কোটি ৫৩ লাখ, নভেম্বর ৬ কোটি ৪২ লাখ, ডিসেম্বর প্রায় ১০ কোটি, জানুয়ারি ৬ কোটি ৭৭ লাখ, ফেব্রুয়ারি ১০ কোটি ৬৮ লাখ, মার্চ ১৮ কোটি ৮২ লাখ, এপ্রিল ৯ কোটি ৩৫ লাখ এবং মে মাসে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে।
রাজস্ব প্রবৃদ্ধির শতকরা হার হিসেবে জুলাইতে -৫১.৬৮%, আগস্টে -৫.১৯%, সেপ্টেম্বর +১৫.২৭%, অক্টোবর +৯৩.৫৭%, নভেম্বর +৫১.৭৭%, ডিসেম্বর +৪৮.২১%, জানুয়ারীতে +৪০.৪৬%, ফেব্রুয়ারীতে +৭.৫৫%, মার্চে +৮৮.৬০%, এপ্রিল -৮.৩৩% এবং মে মাসে +৫৪.১৬% প্রবৃদ্ধি হয়েছে। উল্লেখযোগ্য, এই সময়কালের রাজস্ব আয় আগের অর্থবর্ষের তুলনায় ১৫ কোটি টাকা বেশি এবং রাজস্ব ফাঁকির ১৪৬টি অতিরিক্ত ঘটনা উদ্ঘাটন করা হয়েছে।
কাস্টমস হাউজ বলছে, “আমাদের ‘এআইআর’ শাখার সাফল্য শুধু রাজস্ব বৃদ্ধি নয়, বরং এটি বিদেশে অবৈধ অর্থ পাচারের মতো অপরাধ প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা অনেকাংশে শক্তিশালী হয়েছে।”
দায়িত্বশীলরা আরও জানান, সন্দেহজনক চালানগুলো দ্রুত চিহ্নিত করার জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা বাড়ানো হচ্ছে। আমদানিকারক, পরিবহনকারী এবং সংশ্লিষ্টদের মাঝে নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করে ফাঁকির পথ বন্ধ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের এই কার্যক্রম দেশের রাজস্ব আদায় বাড়াতে এবং অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির সফল বাস্তবায়ন হিসেবে স্বীকৃত। সরকারের রাজস্ব অর্জন ও অর্থনীতির উন্নয়নে এর প্রভাব ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আমার বার্তা/এল/এমই