কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন- তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক- মো. রেজাউল আমীন বলেছেন- “দেশের অতিসম্ভাবনাময় বস্ত্র শিল্পের উন্নয়ন, অধিক ভোজ্য তেল উৎপাদন ও দেশের আমদানি কার্যক্রমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে তথা তুলা আমদানি খরচ কমাতে তুলা চাষের সম্প্রসারণ আরো বাড়াতে হবে-“তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল আমিন- দেশের তুলা চাষের সাফল্য সম্ভাবনার ক্ষেত্রে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কাজের পরিধি বর্ণনা করতে গিয়ে এই প্রতিনিধিকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন- “তুলা উন্নয়ন বোর্ড গত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে দেশের ১৬টি জোনে ৪৭০০০ হেক্টর জমিতে তুলা চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ৪৬৭৬০ হেক্টর জমিতে। এ সব জমিতে বীজ তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১১৫৩০ মেট্রিক টন, এর মধ্যে অর্জিত হয়েছে ৯৯৭৯৮ মেট্রিক টন। আঁশ তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৫২৩০ বেল, অর্জিত হয়েছে ২১৯৩৩৮ বেল। ১ বেল ১৮২ কেজি হিসেবে।” এ বিষয়ে তিনি বলেন- “দেশের যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, ঠাকুরগাঁও, ঢাকা, ময়মনসিংহ, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি অঞ্চলে এই তুলার চাষ হয়েছে”।
তিনি বলেন- “ভোজ্য তেল উৎপাদনে তুলা বীজ একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। গত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ৮০০ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল ও খৈল উৎপাদিত হয়েছে। এছাড়া Bt Cotton জাত অবমুক্তকরনে তুলার চাষ সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা আমেরিকান বোল ওয়ার্ম প্রতিরোগী Bt Cotton of NCB এর অনুমোদনক্রমে চাষী পর্যায়ে চাষ করা হয়েছে। হাইব্রীড তুলার জাত উদ্ভাবনে গবেষণার মাধ্যমে সিবি হাইব্রীড-১ নামক ১টি হাইব্রীড জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। মিউটেন্ট তুলার জাত উদ্ভাবনে-বাংলাদেশ পরমানু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিটিউট (BINA) এবং IAEA (International Atomic Energy Agency) এর কারিগরি সহায়তায় তুলার একটি জাত (সিডিবি তুলা এম-১) উদ্ভাবন করা হয়েছে”। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন- “তুলার উফশী জাত উদ্ভাবন গবেষনার মাধ্যমে এ পর্যন্ত ২৪টি জাত অবমুক্ত করা হয়েছে। তুলার প্রযুক্তি উদ্ভাবনে এ পর্যন্ত গবেষণার মাধ্যমে ৬০ টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। দেশের ঐতিহ্যবাহী মসলিন তৈরীর প্রযুক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ফুর্টিকার্পাস এর অনুসন্ধান ও গবেষণার কাজে তুলা উন্নয়ন বোর্ড সহযোগীতা করে প্রযুক্তি পুনরুদ্ধারে অবদান রাখছে। একই সাথে যৌথ গবেষনা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে দেশের ৯টি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ২টি নার্সভূক্ত বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠান ও ২টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে তুলার উপর যৌথ গবেষনা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। এ সব কার্যক্রমে তুলা উন্নয়ন বোর্ডে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কৃষি বিজ্ঞানী ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীরা একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়- এ বিষয়ে তুলা উন্নয়ন বোর্ডকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করছে”।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের- নির্বাহী পরিচালক মোঃ রেজাউল আমিন- আরো বলেন- তুলা চাষের সম্ভাবনাকে আরো সম্প্রসারিত করতে সরকার গত ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ২৬টি জেলার ২১১০০ তুলা চাষীদের মধ্যে ১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার প্রণোদনা সহায়তা প্রদান করছে। সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যৌথ সহযোগিতায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে”।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম সম্প্রসারণ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন- “তুলা উন্নয়ন বোর্ড মূলত বিভিন্ন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে প্রয়োগ উপযোগী পরিবেশ বান্ধব স্বল্প ব্যায়ের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য মৌলিক ও প্রয়োগিক গবেষনা কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রশিক্ষন, পাটিসিপেটরী রিসার্চ, প্রদশনী, মাঠ দিবস ইত্যাদির মাধ্যমে চাষী পর্যায়ে তুলা চাষের আধুনিক কলাকৌশল হস্তান্তর ও বিস্তার করে। এ ছাড়াও তুলা চাষের জন্য চাষীদের উৎসাহিত করতে নানা প্রযুক্তিগত সহায়তা ও উপকরণ প্রদান করে। যেমন উন্নত বীজ সার ও কীটনাশক জাতীয় ঔষধ। এছাড়া বীজ তুলা বাজারজাত ও উপজাত প্রক্রিয়াকরণে উৎসাহিত করে। সাহায্য করে ঋণ প্রাপ্তিতে”। এ ছাড়া তুলা চাষের সম্ভাবনাকে সামনে রেখে গবেষনা কার্যক্রম, তুলা চাষ সম্প্রসারণ, বীজ উৎপাদন ও বিতরণ, মার্কেটিং ও জিনিং কার্যক্রম ও ক্ষুদ্রঋণ বিতরণে সংশ্লিষ্টদের সাথে নানা পর্যায়ের সভা করে কৃষকদের সহায়তা করে আসছে”।
পরিশেষে নির্বাহী পরিচালক মো. রেজাউল আমিন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন- “প্রাচীনকাল থেকেই দেশের পার্বত্য এলাকায় দেশীয় জাতের তুলা এবং ঢাকা ও পাশ্ববর্তী এলাকায় মসলিন কাপড় তৈরীর উপযোগী তুলার উৎপাদিত হতো। পরবর্তীতে দেশে স্বাধীনতা লাভের পর দেশের বস্ত্র শিল্পের বিকাশের জন্য অভ্যন্তরীণভাবে টেক্সটাইল মিলে ব্যবহার উপযোগী আঁশ তুলার যোগান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠিত হয়। ১৯৯১ সালে তুলা গবেষণার দায়িত্ব বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট হতে তুলা উন্নয়ন বোর্ডের উপর ন্যাস্ত হয়। তুলা উন্নয়ন বোর্ড বর্তমানে একটি পূর্ণাঙ্গ আদশিক ও সম্ভাবনায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে তুলা চাষের সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে কাজ করছে”।
আমার বার্তা/এমই