রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় ‘১০০ গ্রাম হেরোইন’ উদ্ধারের ঘটনায় ওসি মোহাম্মদ আলী ইফতেখার হাসানের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মামলার কোনো অস্তিত্ব না থাকায় আলোচনায় আসা এই ঘটনার রেশ না কাটতেই, সোমবার (২৮ জুলাই) বিকেলে তার বদলি ঠেকাতে মানববন্ধনে নামে জেনেভা ক্যাম্পের একদল শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং সদস্য।
বিকাল সাড়ে চারটায় মোহাম্মদপুর টাউন হল প্রধান সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে বহুল পরিচিত ইকবাল ওরফে কসাই ইকবাল, রুবেল ওরফে ইয়াবা রুবেল, খোকন, বেচু ওরফে ল্যাংড়া বেচু, ইরফানসহ অন্যান্যরা।
এছাড়াও ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং 'কবজি কাটা গ্রুপ'-এর সদস্য রাকিব ওরফে হাতভাঙ্গা রাকিব, ফাহাদ ও নীরবও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই স্থানীয়ভাবে মাদক ও গ্যাং সংশ্লিষ্টতার জন্য পরিচিত বলে জানিয়েছে পুলিশ সূত্র।
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে মমতাজ আশরাফী নামে এক ব্যক্তি বলেন, “ওসি স্যার জনগণের বন্ধু, তাকে শত্রু ভাবা যাবে না। আমরা ওনার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের প্রতিবাদে এখানে দাঁড়িয়েছি।”
একইভাবে বেচু ওরফে ল্যাংড়া বেচু বলেন, “আমরা সব সময় ওসি স্যারকে এই থানায় চাই। উনি ভালো লোক।”
কিশোর গ্যাং সদস্য রাকিব বলেন, “ওসি স্যার আমাদের পাশে ছিলেন, আমরাও তার পাশে আছি।”
"হেরোইন উদ্ধার, কিন্তু মামলা নেই—ঘনিয়ে ওঠা সন্দেহ"
এদিকে, এই বিতর্কের সূচনা হয় মোহাম্মদপুর থানার একটি আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া প্রায় ১০০ গ্রাম হেরোইনের মামলার কোনো রেকর্ড থানার নথিপত্রে নেই।
জানা যায়, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের পাশ থেকে আটক হওয়া এক ব্যক্তিকে থানায় আনা হয়। তার বিরুদ্ধে দুটি ওয়ারেন্ট থাকলেও, তার কাছ থেকে হেরোইন পাওয়া যায়নি। পরে থানার এসআই আলতাফ, এসআই শাখাওয়াত এবং এএসআই সাত্তার তার বিরুদ্ধে হেরোইনসহ মামলা দায়েরের উদ্যোগ নেন— এমনই অভিযোগ উঠে। প্রস্তুত করা হয় এফআইআর ড্রাফট, মামলা নম্বর, এবং চালান কপি। কিন্তু রহস্যজনকভাবে মামলাটি রুজু হয়নি।
এই ঘটনায় ইতোমধ্যে একাধিক গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। মামলার অনুপস্থিতি ও পরবর্তীকালে ওসির বিরুদ্ধে ওঠা 'মামলা বানিজ্য'-এর অভিযোগ ঘিরে পুরো থানা জুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
পূর্বেও উঠেছে অভিযোগ
এর আগে গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) স্থানীয় ছাত্র জনতা মোহাম্মদপুর থানার সামনে বিক্ষোভ করে ওসির অপসারণের দাবি জানায়। অভিযোগ ছিল— ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও কিশোর গ্যাংয়ের সাথে ওসির ‘আঁতাত’ রয়েছে।
সোমবারের মানববন্ধনটি অনেকের কাছে “পাল্টা কর্মসূচি” হিসেবে মনে হয়েছে, যেখানে মূলত থানা সংশ্লিষ্ট বিতর্কিত গোষ্ঠীগুলো ওসির পক্ষে কথা বলেছে।
নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি
---------------------------------
স্থানীয় সচেতন নাগরিক ও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, “এই ঘটনা তদন্ত করে দেখতে হবে কে কার স্বার্থে মাঠে নামছে। প্রশাসনকে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।”
তারা আরও বলেন, “যদি সত্যিই ১০ লাখ টাকার হেরোইন উদ্ধার হয় এবং মামলা রুজু না হয়—তা হলে এটি শুধু একটি ‘অভিযোগ’ নয়, বরং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যর্থতা।”
আমার বার্তা/এম রানা/জেএইচ