সহিংস পরিবেশে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন করা যায় নাট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই) চেয়ার ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান বলেছেন, গণমাধ্যমকে দমন, অবাধ তথ্য প্রবাহ বন্ধ করা এবং সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে হুমকি প্রদর্শন গোপনীয়তার সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেয়। আর গোপনীয়তার সংস্কৃতি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি শক্তিশালী অস্ত্র। সাংবাদিকরা সত্য তথ্য তুলে ধরে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে, সেজন্য তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা জরুরি। সুশীল সমাজের কাছে সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেওয়ার কোনো মাধ্যম নেই, তবে আমরা যেটা করতে পারি তা হচ্ছে সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলতে পারি। আমরা যেটা করি তা হলো এসব ক্ষেত্রে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করি। সহিংস পরিবেশে কখনই গণতন্ত্র পুনঃস্থাপন করা যায় না।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে টিআইবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যমের ওপর দমন-হুমকি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
ফ্রাঁসোয়া ভ্যালেরিয়ান বলেন, সহিংস পরিবেশ ক্ষমতার অপব্যবহার পুনর্বহালে সহায়তা করে। তাই এটি প্রায় সব দেশেই গুরুতর উদ্বেগের যেখানে সাংবাদিক, সুশীল সমাজ এবং সাধারন মানুষ এই ধরনের সহিংসতার সম্মুখীন হয়।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিবছর দুর্নীতির সুচক প্রকাশ করি যদিও সব সেক্টরের বিষয় সেখানে পুরোপুরি আসে না। এটা সত্য যে বিগত বছরগুলোতে দুর্নীতির সুচক বাংলাদেশে কমেছে, তবে প্রতিফলন সরূপ দেখা গেছে গত বছর আগস্টে একটি দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনব্যবস্থার অবসান হয়েছে। তারপরে কি দুর্নীতি বন্ধ হয়েছে, স্পষ্টত না। তবে কি বেড়েছে? এক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে বাংলাদেশে সংস্কার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিছু কাজ শুরু হয়েছে, কিছু বাস্তবায়নের পথে আছে। এই কাজগুলো কিন্তু দুর্নীতির সুচক উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে। যে দেশগুলো তাদের সূচকে উন্নতি করে, আমরা তাদেরকে বলি যে ক্ষমতাবান লোক যারা দুর্নীতিতে জড়িত ছিল তাদের বিচারের আওতায় এনে সুশাসন নিশ্চিত করতে।
ফ্রাঁসোয়া বলেন, আমরা সবসময় ক্ষমতার সঙ্গে এবং ক্ষমতার বিপক্ষে কাজ করেছি। তার অর্থ হচ্ছে আমরা অংশগ্রহণ করছি আবার সমালচনাও করছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে কি হয়েছে, আমাদেরও সমালোচনা করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোনো সরকার নেই যে আমাদের সমালোচনা করেনি। আমি মনে করি আগামি ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার গঠন হবে, সেই সরকারও টিআইবি’র কর্মকাণ্ডে অখুশি হবে।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ অর্থ বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হয়েছে জিডিপি’র সঙ্গে তুলনা করলে দেখবেন জনগণের টাকা চুরি হয়েছে, জনগণকে তাদের অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে। ঘুষের পেছনে জনগণের যেই অর্থ ব্যয় হয়েছে সেটার হিসাব কখনও যথাযথভাবে পাচার করা অর্থের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কারণ সেই অর্থ এবং অর্থের বিনিময় প্রাপ্ত সেবার অনেক মুল্য আছে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে যে ১৬ বিলিয়ন ডলার গায়েব হয়েছে, তার চেয়ে বেশি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ক্ষতি করেছে। এই অর্থ পাচার না করলে অনেক সুযোগ তৈরি করা যেত। এই অর্থ বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, অবকাঠামো, জরুরি প্রয়োজনীয় সেবার জন্য ব্যয় করা যেত। এই অর্থ চুরি না হলে বাংলাদেশের জিডিপি আরও অনেক বেশি হতো।
ফ্রাঁসোয়া বলেন, আমাদের মতো বৈশ্বিক সুশীল সমাজ বাংলাদেশে বর্তমানে যা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশংসা করছে। তারা বাংলাদেশের দিকে নজর রাখছে। আমরা দেখছি যে বাংলাদেশের সংস্কার কাজ হাতে নিয়েছে, এই লক্ষ্যে সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন করা হয়েছে। সংস্কার সুপারিশের অনেক কিছুই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ জানিয়েছে। আমাদের স্পষ্ট পরামর্শ হচ্ছে- এই সংস্কারগুলো টেকসই হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।