ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে প্রথমবারের মতো ৫ লাখ কোটি টাকা অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাথমিক তথ্যানুযায়ী, ২০২৫ সালের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। তিন মাসের ব্যবধানে এ ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। আর এক বছরে বেড়েছে ৩ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা বা ১৫১ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে নীতিগত ছাড়ের ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র গোপন রাখা সম্ভব হতো। বড় ঋণগ্রহীতারা নতুন নামে ঋণ নিয়ে বা ঋণসীমা বাড়িয়ে আগের ঋণ ‘নিয়মিত’ দেখাতেন। তবে সরকার পরিবর্তনের পর এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যায়। মার্চ থেকে নতুন নিয়মে ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময় পেরোলেই তা মেয়াদোত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা, শিল্পখাতের দুরবস্থা, অনেক উদ্যোক্তার কারাবরণ বা পলায়ন এবং ব্যাংকের কাঙ্ক্ষিত আদায় না হওয়াই এ ঋণ বৃদ্ধির মূল কারণ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, মার্চ শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। আর গত বছরের জুনে ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। সে অনুযায়ী, বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫১ শতাংশ। এমনকি ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে জুন ২০২৫ সময়েও ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা বা ৫৩ শতাংশ।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। শুরুতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পরিচালিত হলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ঋণ পুনঃতপশিলের সুবিধা চালু হয়। এরপর নানা ছাড়ের ফলে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কম দেখাতে পারতো।
বর্তমান গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ব্যাংক খাতে অনিয়ম রোধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। খেলাপি ঋণ গোপন করার সুযোগ বন্ধ করে প্রকৃত চিত্র প্রকাশে জোর দেওয়া হচ্ছে। কোনো ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতি রেখে লভ্যাংশ দিতে পারছে না। ৩৬টি তালিকাভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে ২০টি এবার লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আগামী বছর ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি থাকলে, কোনো ব্যাংকই লভ্যাংশ দিতে পারবে না- এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এক কর্মকর্তা জানান, আগে ৬ মাস অনাদায়ী থাকলেই ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ ধরা হতো। ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রীর এক নির্দেশনায় সেই সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে করোনার সময় খেলাপি হওয়া বন্ধ রাখা হয়। সামান্য কিস্তি দিলেও ঋণ নিয়মিত দেখানো যেতো। এসব সুবিধা এখন বন্ধ হওয়ায় প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে।
আমার বার্তা/এল/এমই