বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) গভীর শ্রদ্ধা, শোক ও জাতীয় দায়িত্ববোধে উদ্ভাসিত হয়ে পালন করা হয়েছে ‘জুলাই শহীদ দিবস’।
বুধবার (১৬ জুলাই) ২০২৪ সালের আন্দোলনে আত্মত্যাগকারী ছাত্র-জনতার স্মরণে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটি। শোকর্যালি, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটভিত্তিক ভিডিওচিত্র প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হয় এক গাঢ় আবেগ ও প্রত্যয়ের পরিবেশে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শহীদ পরিবারের সদস্যদের সরব উপস্থিতি দিনটির তাৎপর্য আরও গভীর করে তোলে।
সকাল ১০টায় প্রশাসন ভবনের করিডোর থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একটি শোকর্যালি বের হয়। র্যালিতে কালো ব্যাজ ধারণ করে অংশ নেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। র্যালিটি টিএসসি, কোষাধ্যক্ষ ভবন ও বোটানিক্যাল গার্ডেন প্রদক্ষিণ করে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।
র্যালি শেষে মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় মূল অনুষ্ঠান। এতে সভাপতিত্ব করেন ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল হক এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
মঞ্চে আরও ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার এবং জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ময়মনসিংহ অঞ্চলের তিন শহীদের নিকটাত্মীয়—রেদোয়ান হোসেন সাগরের পিতা মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, শহীদ মাওলানা সাদেকুর রহমানের ভাই মো. সাদ্দাম হোসেন এবং শহীদ আছির এম.টি শারাল হকের পিতা এইচ.এম. এনামুল হক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের শহীদ ও আহতদের স্মরণে বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর জনসংযোগ ও প্রকাশনা দফতরের পরিচালক আন্দোলনভিত্তিক তিনটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করেন।
আলোচনা পর্বে গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা ও স্মৃতি তুলে ধরেন। এছাড়া বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হেলাল উদ্দীন, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম আজাদ, অধ্যাপক ড. মো. আলী রেজা ফারুক ও অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমানসহ অনেকে।
উপস্থিত শহীদ পরিবারের সদস্যরা জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবি জানান। এসময় উপাচার্য তাদের হাতে স্মারক সম্মাননা তুলে দেন।
প্রধান পৃষ্ঠপোষকের বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, "১৬ জুলাই একটি শোকের দিন, একটি অনুপ্রেরণার দিন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৬ জুলাই একটি অবিস্মরণীয় দিন।" তিনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে আত্মদানকারী ছাত্র-জনতাকে সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান। উপাচার্য বলেন,
"আমরা তোমাদের ভুলিনি, ভুলব না কোনোদিন।"
তিনি আরও বলেন,"২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের ঢেউ বাকৃবিতেও আছড়ে পড়েছিল এবং তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে আন্দোলনে সক্রিয় শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।"
বক্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি জানান,"বাকৃবিতে গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট ও সিন্ডিকেটের সুপারিশ অনুযায়ী ফ্যাসিস্টদের দোসরদের বিচার শিগগিরই দৃশ্যমান হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সকল অন্যায়ের বিচার করা হবে।"
এসময় তিনি বৈষম্যহীন এবং গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী নারীদের এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকাও সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করেন।
আমার বার্তা/জয় মন্ডল/এমই