বিদেশে উন্নত জীবনের আশায় পাড়ি দিতে চাওয়া শত শত তরুণ এখন চরম হতাশা ও আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি। সিলেটের জিন্দাবাজারে অবস্থিত ‘স্কাই ড্রিম’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ইউরোপে পাঠানোর প্রলোভনে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রতারণার শিকার হয়েছেন প্রায় ২০০ জনের বেশি বিদেশ গমনেচ্ছু তরুণ।
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, গত দুই বছর ধরে ‘স্কাই ড্রিম’-এর পরিচালক মো. ইমামুল হক বাঁধন নানা আশ্বাস ও চুক্তিনামার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে নেন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও কেউ বিদেশে যেতে পারেননি। বরং, টাকাও ফেরত পাননি অধিকাংশ ভুক্তভোগী।
সিলেট জেলার জালালাবাদ থানাধীন মোল্লারগাঁও গ্রামের মো. ওয়াহিদ উল্লাহর ছেলে মো. জাহেদ আহমদ উন্নত জীবনের আশায় ক্রোয়েশিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন। বিভিন্ন মাধ্যমে স্কাই ড্রিমের কথা জানতে পেরে, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. ইমামুল হক বাঁধনের সঙ্গে জিন্দাবাজারস্থ অফিসে যোগাযোগ করেন।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ৬ মাসের মধ্যে ক্রোয়েশিয়ার ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দেওয়া হবে বলে তাকে আশ্বস্ত করা হয়। এরপর তিনি ১০০ টাকার তিনটি নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে চুক্তি করেন। চুক্তি অনুযায়ী ইমামুলকে নগদ ৪০ হাজার টাকা, পাসপোর্টের কপি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন জাহেদ। তার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি একটি রসিদ প্রদান করে।
পরে, চলতি বছরের ২৩ মার্চ ইমামুল মোবাইল ফোনে একটি 'ওয়ার্ক পারমিট' পাঠান এবং আরও ১ লাখ টাকা দাবি করেন। জাহেদ নিজে অফিসে গিয়ে নগদ ১ লাখ টাকা প্রদান করেন, যার প্রমাণ হিসেবে তাকে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার একটি স্বাক্ষরিত চেক দেন ইমামুল। কিন্তু চেক পাওয়ার পর জাহেদ যাচাই করে দেখেন ওয়ার্ক পারমিটটি সম্পূর্ণ জাল। বিষয়টি জানতে পেরে তিনি ইমামুলকে প্রশ্ন করলে সে কোন সদুত্তর দিতে না পেরে পরে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
আরেক ভুক্তভোগী ইসমাইল জানান, স্কাই ড্রিম দীর্ঘ দেড় বছর ধরে একই কৌশলে প্রতারণা করছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ওয়ার্ক পারমিটে পাঠানোর নামে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রায় ২০০ জনেরও বেশি তরুণের কাছ থেকে জনপ্রতি ১ লাখ ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা আদায় করেছে।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, টাকা নেওয়ার পর কোনো ভিসা বা বিদেশ গমনের কার্যক্রম হয়নি। দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকার পর গত ৪ জুলাই হঠাৎ করে অফিস খোলা পেলে ভুক্তভোগীরা স্কাই ড্রিম অফিসে গিয়ে ইমামুল হক বাঁধনকে আটক করেন। তখন তিনি প্রতারণার বিষয় স্বীকার করেন।
সমাধানের কোনো পথ না দেখে ভুক্তভোগীরা ইমামুল হক বাঁধনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন। বর্তমানে তারা প্রশাসনের সহায়তায় তাদের কষ্টার্জিত অর্থ ফেরতের দাবি জানাচ্ছেন।
এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জিয়াউল হক সময় সংবাদকে জানান, এ বিষয়ে একটি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত চলমান রয়েছে। পাশাপাশি, অবৈধ ও প্রতারণামূলক ট্রাভেল এজেন্সির তালিকা সংগ্রহের কাজও চলছে।
আমার বার্তা/এল/এমই