ই-পেপার রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

সময়ের সাথে সাথে বদলেছে ঈদ সংস্কৃতি

হেনা শিকদার:
৩০ মার্চ ২০২৫, ১৪:৪১

ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। দীর্ঘ এক মাস সংযমের পর এই দিনটি আসে এক নতুন বার্তা নিয়ে। ছোটবেলার ঈদ আর এখনকার ঈদের মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান। সময়ের সাথে সাথে আমাদের জীবনযাত্রায় যেমন পরিবর্তন এসেছে, তেমনি ঈদের সংস্কৃতিতেও লেগেছে পরিবর্তনের ছোঁয়া। ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিল এক অন্যরকম উন্মাদনা। নতুন জামা, নতুন জুতো, বন্ধুদের সাথে দেদার ঘোরাঘুরি, আর বড়দের কাছ থেকে পাওয়া সালামি – এই সবকিছু মিলিয়ে ঈদের দিনটা যেন এক স্বপ্নপুরী। সেই সময় ঈদের আনন্দ ছিল বাঁধভাঙা, কোনো চিন্তা বা ক্লান্তি সেই আনন্দে ভাগ বসাতে পারত না। সময়ের স্রোতে শৈশব পেরিয়ে কৈশোর, তারপর যৌবন এবং অবশেষে প্রৌঢ়ত্বে এসে সেই ঈদের আনন্দের তীব্রতা যেন কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়ে আসে। কেন এমন হয়? বয়স বাড়ার সাথে সাথে কি সত্যিই ঈদের আনন্দ কমে যায়, নাকি আনন্দের সংজ্ঞাটাই বদলে যায়?

মনে পড়ে, ছোটবেলায় ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। আকাশে একফালি চাঁদ দেখা গেলেই চারিদিকে আনন্দের ঢেউ উঠত। আব্বু-আম্মুর সাথে বাজারে গিয়ে নিজের পছন্দের জামা-জুতো কেনার সেই উত্তেজনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। দর্জির দোকানে গিয়ে জামার মাপ দেওয়া, ঈদের আগের রাতে জেগে অপেক্ষা করা কখন সকাল হবে – এই স্মৃতিগুলো আজও মনের মণিকোঠায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। ঈদের সকালে ঘুম থেকে উঠে নতুন পোশাকে সেজে ঈদগাহে যাওয়ার সেই আনন্দ, বন্ধুদের সাথে কোলাকুলি করা, আর নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে এসে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে সালামি নেওয়ার সেই অনুভূতি – যেন এক অসাধারণ প্রাপ্তি ছিল।

দুপুরের খাবারের এলাহি আয়োজন, আত্মীয়-স্বজনদের আগমন, হাসি-ঠাট্টার রোল – সব মিলিয়ে ঈদ যেন এক মহা মিলনমেলা ছিল। বিকেলে বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে ঘুরতে যাওয়া, মেলায় নাগরদোলায় চড়া, আর নানা ধরনের মুখরোচক খাবার খাওয়া – এই ছিল ঈদের দিনের প্রধান আকর্ষণ। সেই সময় ঈদ মানেই ছিল শুধু আনন্দ আর খুশি। কোনো দায়িত্ব ছিল না, কোনো চিন্তা ছিল না, শুধু নির্মল আনন্দ উপভোগ করা।

কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈদের সেই চিত্রটা যেন ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসে। কৈশোরে এসে ঈদের আনন্দের সাথে যুক্ত হয় কিছু নতুন ভাবনা। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া, পছন্দের মানুষের সাথে দেখা করা – এগুলো মুখ্য হয়ে ওঠে। তবে তখনও সেই বাঁধভাঙা আনন্দটা পুরোপুরি বজায় থাকে।

যখন যৌবনে পদার্পণ করি, তখন ঈদের আনন্দের সাথে যুক্ত হয় কিছু দায়িত্ব। নিজের জন্য তো বটেই, পরিবারের অন্যদের জন্যও কেনাকাটা করার দায়িত্ব এসে পড়ে। ঈদের দিনের রান্নার আয়োজন, ঘর গোছানো – এই সমস্ত কিছু মিলিয়ে ঈদের সেই আগের মতো নির্ভেজাল আনন্দটা যেন কিছুটা হলেও চাপা পড়ে যায়। কর্মজীবনের ব্যস্ততা এবং নানা ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা ঈদের সেই চিরাচরিত আনন্দকে কিছুটা ম্লান করে দেয়।

প্রৌঢ়ত্বে এসে ঈদের আনন্দ হয়তো অন্য রূপে ধরা দেয়। তখন আর নিজের জন্য নতুন জামাকাপড়ের তেমন চাহিদা থাকে না। বরং নাতি-নাতনিদের হাসিমুখ দেখলে, তাদের নতুন পোশাকে ঝলমল করতে দেখলে মন ভরে ওঠে। ঈদের দিনের সেই কোলাকুলি হয়তো কিছুটা নিয়ম রক্ষার মতোই মনে হয়, তবে প্রিয়জনদের সান্নিধ্য এবং তাদের মুখের হাসিই তখন ঈদের প্রধান আনন্দ হয়ে দাঁড়ায়।

আসলে বয়সের সাথে সাথে ঈদের আনন্দের তীব্রতা হয়তো কমে আসে, কিন্তু আনন্দের ধরণটা পরিবর্তিত হয়। শৈশবের সেই নিঃশর্ত আনন্দ হয়তো আর পাওয়া যায় না, তবে জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা ঈদের আনন্দকে ভিন্ন ভিন্ন রূপে অনুভব করি।

এর কিছু কারণও রয়েছে। ছোটবেলায় আমাদের কোনো দায়িত্ব থাকে না, তাই ঈদের আনন্দটা পুরোপুরি উপভোগ করতে পারি। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমাদের কাঁধে অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে। পরিবারের সদস্যদের খুশি রাখা, তাদের প্রয়োজন মেটানো – এই সমস্ত কিছু করতে গিয়ে ঈদের সেই ব্যক্তিগত আনন্দটা হয়তো কিছুটা হলেও কমে যায়।

এছাড়াও, সময়ের সাথে সাথে আমাদের চারপাশের অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে যায়। হয়তো ছোটবেলার সেই বন্ধুগুলো আর আগের মতো একসাথে হয় না। প্রিয়জনদের মধ্যে কেউ হয়তো এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। এই সমস্ত কারণেও ঈদের আনন্দে একটা বিষাদের ছায়া পড়তে পারে।

তবে কি সত্যিই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ঈদের আনন্দ কমে যায়? আমার মনে হয়, আনন্দের সংজ্ঞাটাই বদলে যায়। ছোটবেলায় ঈদ মানে ছিল শুধু নিজের জন্য আনন্দ করা। কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে আমরা সকলের জন্য আনন্দ খুঁজে নিতে শিখি। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি দেখলে, গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করতে পারলে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা হয়তো শৈশবের সেই বাঁধভাঙা আনন্দের চেয়েও বেশি মূল্যবান।

তাই হয়তো বয়সের সাথে সাথে ঈদের আনন্দের তীব্রতা কিছুটা কমলেও, এর গভীরতা বাড়ে। আমরা শিখি কীভাবে অন্যের খুশিতে খুশি হতে হয়, কীভাবে ঈদের আনন্দকে ভাগ করে নিতে হয়। ঈদ এখনও আসে, সেই একই বার্তা নিয়ে – ভালোবাসা, ক্ষমা আর সহানুভূতির বার্তা। হয়তো এখন আমরা সেই বার্তাটিকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি।

তাই এই ঈদে আমরা বয়সের বেড়াজাল ভেঙে সেই ছোটবেলার ঈদের আনন্দের স্মৃতিগুলো ফিরিয়ে আনি। প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটাই, তাদের সাথে আনন্দ ভাগ করে নিই। যারা কষ্টে আছে, তাদের পাশে দাঁড়াই। কারণ ঈদের আসল আনন্দ তো এখানেই – সকলের সাথে মিলেমিশে খুশি থাকা। হয়তো শৈশবের সেই বাঁধভাঙা আনন্দ আর ফিরে পাওয়া যাবে না, তবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে ঈদের আনন্দকে খুঁজে নিতে হবে এবং সেই আনন্দকে অন্যদের সাথে ভাগ করে নিতে হবে। তবেই ঈদ হয়ে উঠবে সত্যিকারের ঈদ – আনন্দ আর ভালোবাসার এক অমলিন উৎসব।

লেখক : শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার বার্তা/হেনা শিকদার/এমই

বাবা, তুমি আমার নীরব ভালোবাসা

আমার বাবাকে আমি অনেক ভালোবাসি। কিন্তু কখনো মুখ ফুটে বলতে পারিনি— “বাবা, আমি তোমাকে অনেক

বিশ্ব বাবা দিবস : বাবা হচ্ছে সংসারের একজন বটবৃক্ষ

বিশ্বের প্রায় দেশেই জুন মাসের তৃতীয় রোববার বাবা দিবস পালন করে আসছে। সে হিসেবে এবছর

এফবিসিসিআইয়ের সংস্কার উত্তর  নির্বাচন ও কিছু কথা

গত ২০ মে ২০২৫  তারিখে ব‍্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান গণ অভ‍্যুত্থানের মাধ‍্যমে গঠিত সরকার

অর্থবছর পরিবর্তন করতে হবে

প্রথমে বলতে চাই- অর্থবছর পরিবর্তন করতে হবে। আমরা জানি, ব্রিটিশ আমল থেকে অর্থবছর জুলাই-জুন হিসেবেই
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মার্কিন হামলার জবাব দিচ্ছে ইরান, ইসরাইলজুড়ে আতঙ্ক

বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান খরচের রেকর্ড লঙ্কান স্পিনারের

ইরানে মার্কিন হামলার পর ইসরায়েলে উচ্চ সতর্কতা জারি

মার্কিন নৌবহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ও হরমুজ প্রণালি বন্ধের হুঁশিয়ারি দিলেন খামেনির উপদেষ্টা

ঈদে নতুন নোটে ভোগান্তি সাধারণের

সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে ইসিতে বিএনপির অভিযোগ

বিদ্যুতায়িত তারে স্পৃষ্ট হয়ে কৃষকের মৃত্যু

উচ্ছেদ করা ফুটপাত ফের দখল করে নির্মাণকাজ চালাচ্ছে চসিক

খামারিকে হত্যা করে গরু ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৭

দেশের বাজারে বেড়েছে স্বর্ণ ও রুপার দাম

ইরানের জন্য অপেক্ষা করছে বড় ট্র্যাজেডি, হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের

শিক্ষকদের তো একটা ট্যাগ থাকেই; হয় সাদা দল, না হয় নীল : ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ

হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে আন্তর্জাতিক নিয়মে ফিরিয়ে আনবো

হজ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন ৪২৯৫০ হাজি

বাজেটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ চান না পরিকল্পনা উপদেষ্টা

ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় সংঘাতের তীব্রতা নিয়ে জাতিসংঘের উদ্বেগ

৬ প্রতীক নিয়ে বিকেলে ইসিতে যাবে এনসিপি

পটুয়াখালীতে ৭০ হাজার কেজি জাটকা জব্দ

ইসরায়েলকে জবাবদিহির আওতায় আনার আহ্বান বাংলাদেশের

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল পারমাণবিক উপকরণ