১৯৭২ সালের ২৫ মার্চ রাতে বর্বর পাকবাহিনী অতর্কিতে বাংলার জনগণের ওপর মরণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ইষ্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, ছাত্র ও যুবকরা তাদের হাতিয়ার কেড়ে নিয়ে হানাদারদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়েছে। সারা বাংলাদেশ হানাদার বাহিনীকে নির্মূল করার জন্য দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছে। সে সময় বঙ্গবন্ধুকে আটকের গোটা সময় একটি প্রশ্নই ইয়াহিয়া খানকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে পাক সরকারকে। যুদ্ধরত বাংলাদেশে তখন বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার জন্য মানুষ রোজা রেখেছে। নফল নামাজ আদায় করেছে। মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে। শত্রু-মিত্র সবাই আজ এক বাক্যে স্বীকার করেন, সেদিন বঙ্গবন্ধুই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তখনও মানুষ জিয়ার নাম তেমন তেমন শোনেনি।তিনি দিব্য দৃষ্টিতে এটা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন বলেই পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেননি। তাছাড়া, পালাবার মতো নেতা বঙ্গবন্ধু কোনকালেই ছিলেন না। দেশ ও জনগণের জন্য হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করার মতো মনোবল তিনি সবসময় পোষণ করতেন। অতিবড় শত্রু ও তাঁর অসীম সাহসের প্রশংসা করেন। মৃত্যুর সময়ে ও তিনি তাঁর হত্যাকারীদের তর্জনী তুলে ধমক দিয়েছেন বলে হত্যাকারীরা স্বীকার করেছে।
প্রয়াত প্রখ্যাত অ্যান্থনী ম্যাসকারেন হাস-তার “দ্য রেইপ অব বাংলাদেশ” (The Rap of Bangladesh) এর এক জায়গায় লিখেছেন “পাঞ্জাবী রাজনীতিবিদদের শঠতায় অতিষ্ট হয়ে আওয়ামী লীগ ফিরোজ খান নুনের পক্ষ থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে ভিন্ন পথে চলার সিদ্ধান্ত নেন। শেখ মুজিব সেদিন অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বলে ফেলেন-“আমাদের স্বাধীনতা পেতে হবে” তিনি আরও বলেন, “আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও থাকতে হবে। আমি অবশ্যই এসব দেখাব।” উক্ত উক্তি বঙ্গবন্ধু করেন তখন ১৯৫৮ সাল। ফিরোজ মন্ত্রী সভার পতন হয়েছে এবং চুন্ডীগড় সরকার তার স্থলাভিষিক হয়েছে। অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন করার দৃঢ় প্রত্যয় প্রকাশ্যে ব্যক্ত করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বেতার ভাষণে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন, “ঐ ব্যক্তি (মুজিব) ও তার দল পাকিস্তানের দৃশ্যমান। তারা পূর্ব পাকিস্তানকে সার্বিকভাবে পৃথক করতে চায়।” এবার তাকে শাস্তি পেতেই হবে। ইয়াহিয়া খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসি দেবার সব ব্যবস্থার সম্পন্ন করেছিল। কিন্তু সময়াভাবে অর্থাৎ তার আগেই পদত্যাগে বাধ্য হওয়ায় সেটা কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। ইয়াহিয়া খান কথিত ‘সার্বিকভাবে পৃথক ভাবে (টোটাল সিসেসন) কি স্বাধীনতা নয় ?
সফিকুর রহমান সম্পাদিত “স্বাধীনতার স্বপ্ন ও আজকের প্রেক্ষাপট” যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছি শীর্ষক জিয়াউর রহমানের একটি লেখা সংকলিত হয়েছে। এটি ১৯৯২ সালে লেখা এবং তা প্রথম সাপ্তাহিক বিচিত্রায় প্রকাশিত হয়েছিল। এতে তিনি লিখেছেন-“৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ঘোষণা আমাদের কাছে এক গ্রীন সিগন্যাল বলে মনে হলো। আমরা আমাদের পরিকল্পনাকে চূড়ান্ত রূপ দিলাম।” এই গ্রীন সিগন্যাল ও চূড়ান্তরূপ জিয়া যে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পেয়েছেন-তা তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন। জিয়া বেঁচে থাকাকালীণ কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক বলে দাবী করেননি।
বঙ্গবন্ধু হলেন শতাব্দীর মহানায়ক। তিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। জাতির জনক এবং বাংলার অবিসংবাদিত নেতা। তিনি সকল বিতর্কের উর্ধে¦। বঙ্গবন্ধুর কারণে আমরা মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র পেয়েছি। তাই বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা একই সূত্রে গাথা।
পৃথিবীর প্রতিটি জাতির একজন পিতা থাকে। যেমন: ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী এবং পাকিস্তানের কায়েদা আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। তেমনি জাতির পিতা হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিবিপ্লবী ও প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি আমাদের স্বাধীতনা ও সার্বভৌমত্বকে কখনোই মেনে নিতে পারিনি। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বঙ্গবন্ধুকে তারা নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত হয়েছিল দৈহিকভাবে। মুছে ফেলতে চেয়েছিল কোটি কোটি মানুষের হৃদয় থেকে । কিন্তু বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব ও অমর। তিনি চিরকাল বেঁেচ থাকবেন ৫৫ হাজার বর্গমাইলে সবুজ শ্যামল এই গাঙ্গের বদ্বীপে। বাংলাদেশের মতই শ্বাশত চিরায়ত ও দেদীপ্য বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব। বাংলাদেশকে মুছে ফেলতে পারলেও বঙ্গবন্ধকে মুছে ফেলা কিছুতেই সম্ভব নয়। এই সত্য বিস্মৃত হয়ে অপগান্ডের মত যারা ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টায় লিপ্ত, তারা বাস্তবিকই করুণার পাত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না লে পৃথিবির বুকে হয়তো একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশ পেতাম না। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মানেই স্বাধীনতা, শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। ও জানি। এ ইতিহাস কোন খুনি রাজাকার আলবদর, কোন ক্ষমতালোভি স্বৈরাচার ঘাতক অথবা কোন ভাড়াটে বুদ্ধিজীবীদের তৈরি করতে হবে না। আমরা যা দেখি তাও ইতিহাস হতে পারে। সে ইতিহাসই সত্য এবং নির্ভেজাল। আর সে ইতিহাসের কথা লিখতে গিয়ে আমরা কোন ক্ষমতার মোহ নয়, আর্থিক লাভবান নয়, শুধুই মানবিক কারণে লিখছি, লাখ লাখ মানুষের হত্যাযজ্ঞ আর মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের কষ্টার্জিত আর রক্তার্জিত স্বাধীনতা। একাত্তরের বিভীষিকাময় গণহত্যার দিনগুলো। আমরা হারিয়েছি সহায় সম্পত্তি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাতে কোন মতানৈক্য কোন দ্বিধাদ্ধন্ধ থাকতে পারে না। সেই দিনগুলোতে বাংলাদেশের জনগণ শেখ মুজিব ছাড়া আর কাউকে নেতা হিসেবে পায়নি এবং নেতা হিসেবে মানেনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই আওযামীলীগের পক্ষে নৌকা মার্কা নিয়ে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য একমাত্র মুজিব ছাড়া আর কেউ সাতশটি বছর জেলে কাটাননি। সেই দুঃসহ দুর্দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই ছিলেন জাতির নেতা আশা ও নির্দেশনার একমাত্র অবলম্বন। ১৯৭১ এর ৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে লাখো মুক্তিকামী মানুষের সামনে যে ভাষন দিয়ে সমগ্র দেশবাসীকে উদ্দীপ্ত আর সংগ্রামী করেছিলেন তিনি অন্য কেউ নন, তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা। এরকমের তেজোদ্দীপ্ত বাণী কেউ সেদিন ছড়াতে পারেনি। পাকিস্তানের সামরিক যদি কোন নেতাকে ভয় করে থাকে তাহলে একমাত্র শেখ মুজিবুর রহমানকেই করেছে কোন অখ্যাত মেজরের জন্য করেনি। ১৯৭১ সালের সেই ভয়াবহ যুদ্ধের দিনে সারা পৃথিবীর পত্র পত্রিকায় তথা বিশ্ব মিডিয়াই বাংলাদেশের নরহত্যাযজ্ঞের ঘটনা তুলে ধরে বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের কথা তুলে ধরেছিল। সেদিন ১৯৭১ সালে মু্িক্তযোদ্ধারা জীবন বাজী রেখে সে সংগ্রাম করেছিল তা জয বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শ্লোগানে। সেদিন মুক্তিযোদ্ধা আর স্বাধীনতাকামী মানুষের পক্ষে যে শ্লোগান তোলা হয়েছিল তোমার নেতা আমার নেতা শেখ মুজিব শেখ মুজিব। জেলের তালা ভাঙবো শেখ মুজিবকে আনবো। ১৯৭১ সালের স্বাধীতনার মুক্তিসংগ্রামে যে গানগুলো মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছিল যুদ্ধে যাবার সে গাসগুলো মুজিব ভাইয়া যাওরে। নির্যাতিত দেশের ামঝে জনগণের ানও ওরে মুজিব ভাইয়া যাওরে। শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠ থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ বলি ইত্যাদি আরো কত রকম সংগ্রামী গান লেখা হয়েছিল মুজিবকে ঘিরে। তারপর ওকি বলে দিতে হবে কে স্বাধীনতার মহানায়ক ? কে স্বাধীনতার ঘোষক ? বাংলাদেশ নামক দেশটির প্রতিষ্ঠাতা কে ? একটি দেশের জন্য, একটি জাতির জন্য, একটি ভাষার জন্য যে নেতা বছরের পর বছর জেল, জুলুম, নির্যাতন ভোগ করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুতরাং বঙ্গবন্ধু ছাড়া বাংলাদেশের কোন সঠিক ইতিহাস তৈরি হতে পারে না। বাংলা ভাষাভাষী মাুনসের মহানয়ক ও ইতিহাসের সর্বশেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু অপ্রিয় সত্য যে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেই বেঁচে থাকতে পারেননি, ঘাতকরা বেঁচে থাকতে দেয়নি। সেটার কারণ তাঁর উদারতা ও অবিশ্বাস্য ভালবাসা আর বিশ্বাস। তিনি জানতেন না, শয়তান কখনো মানুষ হয় না। হায়না রূপী পশুরা কখনো মানুষের যে উপকারি তাকে শ্রদ্ধা জানাতে জানে না। যার ফলে দেশ স্বাধীন হবার কিছুদিন পরেই স্বাধীনতা বিরোধী দেশী বিদেশী ঘাতকচক্র াবঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু নিজের জীবন দিয়ে বাংলাদেশ সৃষ্টি করলেও এখন বাংলাদেশের সর্বত্র অপরাজনীতিবিদদের বেশ্যা রাজনীতিকের পদভারে প্রকম্পিত রক্ত বাংলাদেশ। আমি বলতে চাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয় কোন বিতর্ক থাকতে পারে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির পিতা, স্বাধীনতার ঘোষক, বাংলা ভাষাভাষী মানুষের অবিসংবাদিত নেতা ও সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী।
যার জন্ম না হলে হয়তোবা বিশ্বে মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক কোন ভূখন্ড বা রাষ্ট্রের জন্ম হতো না। সেই শতাব্দীর মহানায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী, বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেবার পর বাঙালী জাতিকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে যাননি কিংবা যাওয়ার চিন্তাও করেননি। কিন্তু কিছু সমালোচক প্রশ্ন রাখেন, বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মতো বড় ঝুঁকিপূর্ণ একটা কাজ করেও কি করে নিজের বাসভবনে অবস্থান করে পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পথ প্রশস্ত করেন ? তাদের মতে, তারতো উচিত ছিল ধরা না পড়ে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া। সশস্র মুক্তিযুদ্ধের নেতারাতো ধরা দেন না। নেতাজী সুভাষ বসুতো ধরা দেননি ইত্যাদি।
এর অনেকগুলো ব্যাখ্যা রয়েছে। প্রথম ব্যাখ্যা হচ্ছে, সে সময়কার জিওপলিটিক্যাল পরিস্থিতি। বঙ্গবন্ধু আশা করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রশ্ন আমেরিকার সমর্থন পাওয়া যাবে। সেই মোতাবেক তিনি ওয়াশিংটনের সাথে যোগাযোগ করেন। তদানীন্তন মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস্ ফারল্যান্ড বঙ্গবন্ধুকে পরিস্কার জানিয়ে দেন যে, এ ব্যাপারে আমেরিকা কোন সহাযোগিতা করবে না। বঙ্গবন্ধু তাঁর সকল নেতা কর্মীকে ভারতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে তাদের জানিয়েছিলেন যে, ভারত ও রাশিয়ার সাথে তাঁর যোগাযোগ হয়েছে। দেশ দু’টি যথাসাধ্য সাহায্য ও সমর্থন যোগাবে। তিনি স্বয়ং ভাবতে যাননি যে, তাহলে আমেরিকা দারুণভাবে রেগে যাবে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কেন্দ্র করে বৃহৎ শক্তির এ অঞ্চলে অনিবার্য হয়ে পড়বে। তাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনিশ্চিত ও দীর্ঘায়িত হয়ে পড়তে বাধ্য। তখন পরাশক্তির স্নায়ুযুদ্ধ ছিল তুঙ্গে। তিনি যদি পাকিস্তানের হাতে বন্দি থাকেন তাহলে আমেরিকা স্বাধীনতা যুুদ্ধে ভারত রাশিয়ার যড়যন্ত্র আবিস্কার করবে না। পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য অগ্রসরমান সপ্তম নৌ-বহর বঙ্গোপসাগরের মোহনায় এসেই হঠাৎ করে মোড় ঘুরিয়ে নেয় এবং তার বদলে ইয়াহিয়াকে সরিয়ে ভূট্টোকে বসিয়ে বঙ্গবন্ধুকে কারামুক্ত করে বাংলাদেশে পাঠায়। মার্কিন প্রশাসনের শেষ ভরসা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুই তার দেশকে তাদের ভাষার ভারত রাশিয়ার খপ্পর থেকে উদ্ধার করতে পারবেন। তাই পাকবাহিনীর হাতে গ্রেফতার বরণ ছিল বঙ্গবন্ধুর আরেকটি প্রজামন্ডিত রাজনৈতিক কৌশল যা আমাদের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়াকে অতীব চাতুর্যের সঙ্গে প্রতিহত করে।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের ধরা পড়ার অজস্র দৃষ্টান্ত রয়েছে। আলজেরিয়ার মুক্তিযুদ্ধের বহু নেতাকে ফরাসী াবহিনী আটক করেছিল। নেলসন ম্যান্ডেলা দিক্ষণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ বাহিনীর হাতে প্রায় তিন যুগ আটক ছিলেন। এতে অনুকূল বিশ্বজনমত সৃষ্টি হয় এবং শ্বেতাঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে স্বদেশবাসীরেদ ঘেরাও তীব্রতর হয়। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আটকের গোটা সময় এই একটি প্রশ্ন ই ইয়াহিয়া খানকে দেশে বিদেশে মোকাবেলা করাকে হয়েছে। বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে পাকিস্তান সরকারকে। যুদ্ধরত বাংলাদেশে তখন বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার জন্য মানুষ রোজা রেখেছে। নফল নামাজ আদায় করেছে। মুক্তিযুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে। শত্রু-মিত্র সবাই আজ এক বাক্যে স্বীকার করেন, সেদিন বঙ্গবন্ধুই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু দিব্য দৃষ্টিতে এটা আগেই বুঝতে পেরেছিলেন বলেই পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেননি। তাছাড়া, পালাবার মতো নেতা বঙ্গবন্ধু কোনকালেই ছিলেন না। দেশ ও জনগণের জন্য হাসিমুখে মৃত্যুবরণ করার মতো মনোবল তিনি সবসময় পোষণ করতেন। অতিবড় শত্রু ও তাঁর অসীম সাহসের প্রশংসা করেন। মৃত্যুর সময়ে ও তিনি তাঁর হত্যাকারীদের তর্জনী তুলে ধমক দিয়েছেন বলে হত্যাকারীরা স্বীকার করেছে। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাকালের খাতায় পাতায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী এবং শতাব্দীর মহানায়ক হিসেবে চিরদিন অমর ও অক্ষয় হয়ে থাকবেন। বঙ্গবন্ধু আমাদের গৌরব এবং অহংকার।
লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিষ্ট, কবি, ঢাকা।
আমার বার্তা/এমই