রঙিন মুরগির (কালার বার্ড) জেনেটিক উন্নয়ন ও খামারিদের জন্য লাভজনক, টেকসই এবং আধুনিক প্রজনন প্রযুক্তি ছড়িয়ে দিতে রাজধানী ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো আন্তর্জাতিক সেমিনার ‘স্যাসো ব্রিডিং ফর ভ্যালু’। সোমবার মগবাজারের একটি অভিজাত হোটেলের ইলিশ কনফারেন্স হলে এই আয়োজন করে বিশ্বখ্যাত প্রাণিজ প্রজনন প্রতিষ্ঠান হেনড্রিক্স জেনেটিক্স।
সেমিনারে বাংলাদেশ ছাড়াও স্পেন, ফ্রান্স ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধি এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে খামার মালিক, হ্যাচারি উদ্যোক্তা, গবেষক, শিক্ষক, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
সেমিনারের সঞ্চালনা করেন মো. মাহিউদ্দিন, কান্ট্রি ব্যবস্থাপক (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা), হেনড্রিক্স জেনেটিক্স। তিনি বলেন, “পোলট্রি শিল্প এখন শুধু খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় নয়, এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, পুষ্টি নিশ্চিতকরণ ও কর্মসংস্থানের গুরুত্বপূর্ণ খাত। দেশি স্বাদের মুরগির প্রতি আগ্রহ থাকলেও উৎপাদনে খামারিরা পিছিয়ে থাকেন। এ সমস্যা সমাধানে স্যাসো একটি আধুনিক ও পরীক্ষিত সমাধান।”
তিনি আরও জানান, স্যাসো জাতটি দেশি স্বাদ বজায় রেখে ডিম ও মাংস উৎপাদনে সক্ষম, পালন সহজ, রোগ প্রতিরোধে সক্ষম এবং খরচ সাশ্রয়ী। ইতোমধ্যে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যা বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন স্যাসো ব্র্যান্ডের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি এদুয়ার পেরু, আলবা মেসাস রোমেরো, ডা. মিয়ং সিওব কিম, হেনড্রিক্স জেনেটিক্সের কারিগরি ব্যবস্থাপক ডা. আলী হায়দার এবং এশিয়া লেয়ার বিভাগের কারিগরি সেবা ব্যবস্থাপক ডা. মেহেদী হাসান। তাঁরা অত্যন্ত তথ্যবহুল উপস্থাপনার মাধ্যমে স্যাসো জাতের পালন নির্দেশিকা, বার্ড ফ্লু নিয়ন্ত্রণ, হ্যাচারি ব্যবস্থাপনা, খাদ্যের মান, গরমের সময় পাখির যত্ন, টিকা প্রয়োগ কৌশল এবং পানির গুণগত মান ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
সেমিনারের আলোচনা পর্ব ছিল প্রাণবন্ত ও অংশগ্রহণমূলক। অংশগ্রহণকারীরা খোলামেলা মতামত, প্রশ্ন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। এতে তাঁদের কারিগরি জ্ঞানের গভীরতা ও শিল্পের উন্নয়নে আগ্রহ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
অনেক খামারি ও উদ্যোক্তা বলেন, দেশে এখনো গবেষণালব্ধ ও টেকসই প্রজনন প্রযুক্তির বিস্তার সীমিত, যার ফলে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদনে তারা ব্যর্থ হন। অথচ সাশ্রয়ী ও উৎপাদনক্ষম জাত ব্যবহার করলে দেশি স্বাদ বজায় রেখে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
আলোচনায় উঠে আসে, শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় দেশি স্বাদের মুরগির চাহিদা বাড়ছে। তবে স্থানীয় জাতগুলোর উৎপাদনক্ষমতা কম হওয়ায় বাজারে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। এ কারণে উন্নত জাত, সঠিক ব্যবস্থাপনা ও খামারিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
অনুষ্ঠানজুড়ে অংশগ্রহণকারীদের মাঝে সহযোগিতার এক শক্তিশালী আবহ বিরাজ করে। আলোচনার বাইরে মধ্যাহ্নভোজ ও নৈশভোজে অংশগ্রহণকারীরা পারস্পরিক মতবিনিময় করেন, অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেন এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
সেমিনার শেষে আয়োজক প্রতিষ্ঠান হেনড্রিক্স জেনেটিক্স জানায়, দেশের পোলট্রি শিল্পে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়াতে তারা নিয়মিতভাবে এ ধরনের সেমিনারের আয়োজন করবে। খামারিদের দক্ষতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা নিরলসভাবে কাজ করছে।
উল্লেখ্য, স্যাসো একটি ফ্রান্সভিত্তিক মুরগির জাত, যা বর্তমানে হেনড্রিক্স জেনেটিক্স-এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। রঙিন পালক, দেশি স্বাদ ও উন্নত উৎপাদনক্ষমতার জন্য জাতটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
আমার বার্তা/এমই