বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)'র প্রধান প্রকৌশলী (ড্রেজিং) রকিবুল ইসলাম তালুকদার রোকনের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আজ আর গুঞ্জনে সীমাবদ্ধ নয়। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন সব তথ্য, যা স্পষ্ট করে রাষ্ট্রীয় অর্থ কীভাবে ব্যক্তিগত সম্পদে রূপান্তরিত হয়েছে—নির্বিঘ্নে, নির্ভয়ে!
দীর্ঘদিন ধরে ড্রেজিং প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালনকারী রকিবুল ইসলাম সরকারের একাধিক উচ্চমূল্যের প্রকল্পে যোগসাজশে নিয়েছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। আর সেই অর্থেই গড়ে তুলেছেন শত শত কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়—ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকাগুলো থেকে শুরু করে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, গাজীপুরের শহরতলি ও গ্রামীণ অঞ্চলে।
প্রকল্পের নামে ‘প্রতারণা’
রকিবুলের দুর্নীতির বড় উৎস বিআইডব্লিউটিএ’র তিনটি বড় প্রকল্প:
এই প্রকল্পগুলোর মূল্য প্রায় ১২,০০০ কোটি টাকা। চুক্তিতে বলা হয় ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে উন্নত প্রযুক্তির ড্রেজার, পাইপ, ইঞ্জিন ও স্পেয়ার পার্টস আমদানি হবে। বাস্তবে রকিবুল স্থানীয় ডকইয়ার্ড থেকে নিন্মমানের ও কমদামের যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করে সরকারি অর্থের বিশাল অংশ আত্মসাৎ করেন। ইউরোপীয় দাম দেখিয়ে বিল প্রস্তুত করা হয়, কিন্তু আসল পণ্য আসে দেশীয় কারখানা থেকে—যার মানেও ঘাটতি, টাকায়ও বিশাল ফারাক।
আয় বহির্ভূত সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার
জমি ও আবাসন:
গৃহ-সম্পত্তি:
দুদকে অভিযোগ, তবু থেকেছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে
রকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, পদোন্নতিতে ঘুষ লেনদেন এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগেও একাধিকবার দুদকে মামলা হয়েছে। অভিযোগের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সবকিছু ‘ম্যানেজ’ করে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের লেনদেনে।
সূত্র বলছে, সক্রিয় প্রভাবশালী মহলের ছায়া ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে তার বিরুদ্ধে কখনও কার্যকর তদন্ত হয়নি।
নির্বিকার বিলাসজীবন, প্রশাসনের নীরবতা
একদিকে দেশের জনগণ কর দিচ্ছে উন্নয়নের নামে, অন্যদিকে সেই অর্থেই চলছে একজন সরকারি প্রকৌশলীর রূপকথার মতো জীবনযাপন। বহুতল ভবন, অভিজাত গাড়ি, বিদেশ সফর—সবই যেন নিয়মিত ব্যবহারের অনুষঙ্গ।
জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের নীরবতা, নাকি অপারগতা—তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়: একজন কর্মকর্তা কীভাবে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা নিজের করে নেয়, অথচ আইন তার নাগাল পায় না?
আমার বার্তা/এমই