বাংলাদেশের সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেশ কয়েকটি গোপন ফোনালাপ সম্প্রচার করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। চ্যানেলটির অনুসন্ধানী ইউনিটের দাবি, এই অডিও ক্লিপগুলো সরবরাহ করেছে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ মহলে থাকা নিজস্ব গোয়েন্দা সদস্যরা। ফোনালাপগুলো বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ছাত্র আন্দোলন দমনে সরাসরি প্রাণঘাতী নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা নিজেই।
আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, গত বছর দেশজুড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে অন্তত ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন, আহত হন কয়েক হাজার। ওই সময়কার দমন-পীড়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা—এমনটিই দাবি প্রতিবেদনে।
প্রকাশিত একটি ফোনালাপে, ১৮ জুলাই ২০২৪ তারিখে শেখ হাসিনা ঢাকার দক্ষিণের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপশকে বলেন- ‘আমার নির্দেশ তো আগেই দেওয়া হয়ে গেছে। আমি তো পুরোপুরি ওপেন অর্ডার দিয়ে দিয়েছি। এখন ওরা মারবে, যেখানে পাবে সেখানে গুলি করবে... আমি তো এতদিন থামিয়ে রেখেছিলাম। আমি ছাত্রদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবছিলাম।’
অন্য এক রেকর্ডিংয়ে তিনি বলেন- ‘যেখানে তারা কোনো জটলা দেখছে, সেটা উপর থেকে- এখন তো উপর থেকেই হচ্ছে এরই মধ্যে কয়েক জায়গায় শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে। কিছু সরেছে।’
প্রামাণ্যচিত্রে একজন চিকিৎসক নিশ্চিত করেন, বহু আন্দোলনকারী হেলিকপ্টার থেকে চালানো গুলিতে নিহত ও আহত হয়েছেন।
আন্দোলনের মধ্যমণি হয়ে ওঠা আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনাও প্রতিবেদনে বিশদভাবে তুলে ধরা হয়। তার মৃত্যুর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর সরকার ব্যাপক চাপের মুখে পড়ে। আল জাজিরার ভাষ্য অনুযায়ী, পুলিশ শুরুতে বিক্ষোভকারীদের দোষারোপের চেষ্টা করে। কিন্তু এক পুলিশ কর্মকর্তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, ‘প্রতিবার রিপোর্ট জমা দিতে গেলেই পুলিশ অখুশি হয়।’
এক মন্ত্রীর ফোনালাপও প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করার ইঙ্গিত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘রংপুর মেডিকেলে পোস্টমর্টেম হয়েছে তো? তাহলে প্রতিবেদন দিতে দেরি কেন? কে লুকোচুরি খেলছে—রংপুর মেডিকেল?’
এছাড়া এক নিরাপত্তা কর্মকর্তার মন্তব্যও তুলে ধরা হয়, যেখানে বলা হয়, ‘সরকারের সবচেয়ে উচ্চপর্যায় থেকেই আবু সাঈদের রিপোর্ট বিকৃত করার চেষ্টাই সবচেয়ে বেশি হয়েছে।’
আল জাজিরার দাবি, শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আদালতে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গৃহীত হয়েছে। তবে হাসিনা এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। তার বক্তব্য, তিনি কখনোই প্রাণঘাতী হামলার নির্দেশ দেননি। পাশাপাশি, তিনি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সত্যতাও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনা এখনও তদন্তাধীন বলেও জানান তিনি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এই ফোনালাপসমূহ ভবিষ্যতে আদালতের বিচারিক প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
পুরো প্রতিবেদনের সম্প্রচার সময় নির্ধারিত হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা এবং আগামীবাল শুক্রবার রাত ১টায়, আল জাজিরার পর্দায়।
আমার বার্তা/জেএইচ