নির্বাচনের কথা বললেই অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নারাজ হন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
শনিবার (৩১ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনা সভা আয়োজন করে কৃষকদল
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন ‘‘আগামী ২ জুন প্রধান উপদেষ্টা আলোচনার জন্য যমুনাতে বিএনপিকে ডেকেছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও ডেকেছেন। আলোচনার জন্য আনুষ্ঠানিকতার কমতি নেই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। নির্বাচনের কথা বললেই নারাজ হন প্রধান উপদেষ্টা। ‘’
তিনি বলেন, ‘‘সংস্কারের নামে কলা ঝোলানো হচ্ছে। ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন দিতে হবে, এটা জনগণের দাবি। ডিসেম্বরের পর নির্বাচন দেওয়ার কোনো কারণ নাই। ডিসেম্বরের পর নির্বাচনের জন্য একটি যুক্তি থাকলেও তা যেন সরকার প্রকাশ করে।’’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘যারা নির্বাচন চায় না, তারা বিএনপি নেতাদের দেশদ্রোহী ও অন্য দেশের এজেন্ট বলছে। ১৭ বছরের ত্যাগের প্রতিদান দিচ্ছে একটি মহল। নির্বাসনে, নির্যাতনে, কারাবাসে, আয়নাঘরে যারা ১৭ বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন করেছে, তাদের দেশদ্রোহী বানানো হচ্ছে। বিএনপির বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই অপপ্রচার, গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে কলঙ্কিত করবে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ফ্যাসিবাদবিরোধী শক্তির মধ্যে ফাটল ধরাতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা উঠেপড়ে লেগেছে। একটি গোষ্ঠী তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে অথবা ফ্যাসিবাদ পুনর্বাসিত করতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরাচ্ছে।’’
কৃষক দলের আলোচনা সভায় সালাহউদ্দিন আহমদ প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, সংস্কার কমিশনে আপনারা নিজেদের মতো করে যেসব সংস্কার সংবিধানে চান, সেই সংস্কারগুলো জাতিকে মেনে নিতে হবে, এই ইগো কেন আপনারা লালন করেন? আপনারা কেন মনে করেন যে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলকে (এনসিসি) সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিয়ে রাষ্ট্রের সব অঙ্গকে বেকার করে দেবেন? সেটা আমাদের কেন মানতে বলেন?’
সংস্কার কমিশন আরও কিছু অভিনব সংস্কার প্রস্তাব নিজেরা দিয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মনে হয় যেন আমাদের বাধ্য হয়ে সেসব সংস্কার প্রস্তাবে একমত হতেই হবে। তাহলে তো এটা বাকশাল তৈরি হলো!’ তিনি বলেন, ‘আমরা লিখিতভাবে বলেছি, আলোচনা করেছি কী কী বিষয়ে আমরা কাছাকাছি এসেছি, আর কী কী বিষয়ে নীতিগতভাবে একমত; সেগুলো কম্পাইল করে আপনারা জাতির কাছে প্রকাশ করুন। সংস্কার হবে, সংস্কার আমাদের প্রধানতম এজেন্ডা। তার চেয়েও বেশি জরুরি মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার। সবাইকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসতে হবে।’
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, যারাই রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে, তারা সংস্কার ও বিচার চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। স্বাধীন বিচার বিভাগ তাদের মতো বিচারকার্য চালিয়ে যাবে। সংস্কার তো কখনো শেষ হয় না। দেশের চাহিদা অনুযায়ী সংস্কার হতেই থাকবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘কেন আপনি ডিসেম্বরের বাইরে গিয়ে নির্বাচন দেবেন? এর পক্ষে একটিও যুক্তি নেই। শুধু বলেন ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা। ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন দিতে হবে, এটা বাংলাদেশের মানুষের দাবি, আমাদের দাবি।’ ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি যুক্তিও যদি অন্তর্বর্তী সরকারের থাকে, সেটি সরকারকে প্রকাশের অনুরোধ জানান তিনি।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম। সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক ইউসুফ আলী মোল্লা ও প্রচার সম্পাদক শামসুর রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি নেতা ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি তাবিথ আউয়াল, কৃষক দলের সহসভাপতি কর্নেল (অব.) এস এম ফয়সাল, মামুনুর রশীদ খান, নাসির হায়দার, আবুল বাশার আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক হাজী মো. কামাল হোসেন ও সদস্যসচিব মীর হাসান কামাল তাপস, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আসজাদুল আরিশ ও সদস্যসচিব শফিকুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
আমার বার্তা/এমই