এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি জনাব মো. রেজাউল করিম। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে তিনি দায়িত্ববার গ্রহণ করেছেন।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস উইংয়ের পুলিশ সুপার ব্যারিস্টার মাহফুজুল আলম রাসেল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মাহফুজুল আলম রাসেল বলেন, মো. রেজাউল করিম ১৫তম বিসিএসে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। তিনি তার বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে বিভিন্ন পদে বগুড়া, লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, ঝিনাইদহ জেলা, কেএমপি, হাইওয়ে পুলিশ, সিআইডি, এসবি, পিটিসি নোয়াখালী, আরআরএফ ঢাকা, এটিইউ এবং সর্বশেষ সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার হিসেবে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সততা, মেধা ও দক্ষতার সঙ্গে স্বীয় দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতি স্বরূপ পিপিএম পদক এবং ২ বার আইজিপি ব্যাজ পেয়েছেন।
তিনি জানান, মো. রেজাউল করিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে পেশাগত উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে লাইবেরিয়া ও পূর্ব তিমুর—এ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। মো. রেজাউল করিম কুষ্টিয়া জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের কৃতি সন্তান। যোগদানের সঙ্গে সঙ্গেই তিনি এটিইউ’র সর্বস্তরের পুলিশ সদস্যদের ভবিষ্যতে আরও দক্ষ, যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, নবনিযুক্ত এটিইউ প্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণের পর একইদিন এটিইউ সদর দপ্তরে সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে ফরাসি দূতাবাসের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দুপুরে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফরাসি প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফরাসি দূতাবাসের ডেপুটি হোমল্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাটাশে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ক্রিস্টেল ফন্টেইন।
আরও উপস্থিত ছিলেন ফরাসি দূতাবাসের ডেপুটি হেড অফ মিশন মিস্টার ফ্রেডেরিক ইনজা। এছাড়া, এটিইউ’র বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি জানান, আলোচনার শুরুতে এটিইউ’র সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিং দেওয়া হয়। এ সময় ফরাসি প্রতিনিধি দল সন্ত্রাসবাদ দমনে এটিইউর কর্মকৌশলের প্রশংসা করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে সাগ্রহে জানতে চান। হোলি আর্টিজান ঘটনার পর বাংলাদেশে বড় ধরনের কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয়নি বলে এসময় তাদের জানানো হয়। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং উচ্চপর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করে সন্ত্রাসবাদ দমন কার্যক্রম পরিচালনা, দেশ ও বিদেশ থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ প্রাপ্তি, নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রাখা, ইন্টারনেট ফোরাম, সোশ্যাল মিডিয়া এবং পাবলিক ডেটাবেস পর্যবেক্ষণের জন্য ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স (OSINT) টুলস্ ব্যবহার, জনবল বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিনিধি দলকে অবহিত করা হয়। বৈঠকে উভয় পক্ষই সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং তথ্য বিনিময় অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত হন।
একইদিনে এটিইউ সদর দপ্তরে অতিরিক্ত আইজিপির কার্যালয়ে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিকেল পর্যন্ত এটিইউ প্রধানের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমনে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।
যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি দলে ছিলেন– মিজ সাকিনা আলম, ডেপুটি হেড, কাউন্টার টেরোরিজম ডিপার্টমেন্ট, ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস এবং মিস্টার মুলিন। এছাড়াও, এটিইউর বিভিন্ন পদমর্যাদার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আলোচনায় সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি অনুসরণের বিষয়ে প্রতিনিধি দলকে অবহিত করা হয়। অন্যদিকে এটিইউর বিভিন্ন কার্যক্রম এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সামগ্রিক অবস্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। উভয় পক্ষই নিজ নিজ দেশের অভিজ্ঞতা ও কৌশল বিনিময়ের পাশাপাশি পারস্পরিক সহযোগিতা এবং গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় অব্যাহত রাখার বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করেন।
আমার বার্তা/এমই