যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই বাংলাদেশে পুশ ইন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বিএসএফ মহাপরিচালক দালজিৎ সিং চৌধুরী। তিনি বলেন, শুধু যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী তাদেরই নিয়ম মেনে পুশ ইন করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ৫৫০ জনকে বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, এ সংক্রান্ত ২৪০০ কেস যাচাই প্রক্রিয়া চলছে, বাংলাদেশ হাইকমিশন সহযোগিতা করছে।
বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীসহ বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা।
বন্ধ হয়নি পুশ ইন, মাঝেমধ্যে ভারতীয়-রোহিঙ্গাদেরও পাঠাচ্ছে বিএসএফ
শুধু বাংলাদেশিদেরকেই নয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় নাগরিককেও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, কিছু কিছু রোহিঙ্গা নাগরিককেও পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল হয়ে যাচ্ছে। এমন প্রশ্ন করা হলে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, আমরা আইনের মধ্য থেকে, যথাযথ চ্যানেলে পুশ ইন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
একজন ভারতীয় নাগরিকের মেয়েকে পুশ ইন করা হয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে থাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় জানানো হলে ভারত তাদের সমর্থন করবে।
শুধু ধর্মীয় বা ভাষাগত কারণেই কি ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ ইন করা হচ্ছে? জানতে চাইলে বিএসএফ মহাপরিচালক বলেন, ‘সীমান্ত আইন লঙ্ঘনজনিত অপরাধের ক্ষেত্রে আমাদের দুই দেশের মধ্যে প্রত্যাবর্তনের (ডিপোর্টেশন) ওয়েল স্ট্যাবলিস্ট বৈধ চ্যানেল রয়েছে। যার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। যদি কেউ ইন্ডিয়ান নাগরিক হয়ে থাকেন, তাহলে তাকে তাৎক্ষণিক গ্রহণ করা হবে।’
সীমান্তে হত্যা বন্ধের বিষয়ে বিজিবি ও বিএসএফ কি ধরনের সিদ্ধান্তে উপনীত হলো? জানতে চাইলে বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, এটা নিয়ে এবার সীমান্ত সম্মেলনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। সীমান্তে মারণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতে টহল জোরদার করে সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
উভয়পক্ষ যৌথভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা সম্পর্কে প্রেষণা দেওয়া এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধের মাধ্যমে এ ধরনের আক্রমণ, নির্যাতন ও হামলার ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয় বলে জানান বিজিবি মহাপরিচালক।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএসএফ ডিজি বলেন, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৩৫ জন বিএসএফ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন অনুপ্রবেশকারীদের ধারালো অস্ত্রের হামলায়। সীমান্ত এলাকায় বিএসএফ সদস্যরা প্রথমে সতর্ক করে, বাধা দেয় এবং শেষ পদক্ষেপ হিসেবে গুলি ছোড়া হয়।
বিএসএফ মহাপরিচালকের এমন বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বিজিবি মহাপরিচালক। তিনি বলেন, সম্প্রতি একজন অল্প বয়সী বাংলাদেশি নাগরিককে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। ওই শিশুটি বর্ডার নিরাপত্তার জন্য কতোটুকু ঝুঁকিপূর্ণ ছিল- এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেন বিজিবি ডিজি।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সকালে রাজধানী ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর মধ্যে ৪ দিনব্যাপী মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫৬তম সীমান্ত সম্মেলন। যার আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ হচ্ছে আজ।
সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক বিভাগ, ভূমি জরিপ অধিদপ্তর, যৌথ নদী কমিশন এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
অপরদিকে, বিএসএফ মহাপরিচালক দালজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছে। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়াও দেশটির স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ভারতীয় প্রতিনিধি দলটির আজই দেশে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।
আমার বার্তা/জেএইচ