জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস ১২-৮-২৫ দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য “প্রযুক্তি নির্ভর যুবশক্তি, বহুপাক্ষিক অংশীদারত্বে অগ্রগতি”।
দিনটি প্রথম পালিত হয় ২০০০ সালে। তারুণ্যের বিকাশ ও উন্নয়নে ১৯৯৮ সালে পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স অব মিনিস্টার রেসপনসিবল ফর ইয়ুথ’ ১২ আগস্টকে ‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ হিসেবে উদযাপনের প্রস্তাব করে। পরের বছর ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিনটি পালন করা হচ্ছে।
বিশ্বের সব দেশের সরকারের মধ্যে তাদের দেশের যুবকদের প্রতি মনোযোগ এবং তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য সচেতনতা তৈরি করা এই দিবসের লক্ষ্য। বিশ্বের সব দেশকে সচেতন করা যে যুবকদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন আছে। তাদের শিক্ষা থেকে স্বনির্ভর হওয়ার পথে তাদের সাহায্য করা সরকারের কর্তব্য। এই উপলব্ধি করতে প্রতিবছর যুব দিবস পালিত হয়।
বাংলাদেশে যুব দিবসের তাৎপর্য
বাংলাদেশের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও যুব কার্যক্রমে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতীয় যুব দিবসে যুব পুরস্কার প্রদান করা হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে ৪৯৮৫ জন যুব-কে (২৫৩৪ জন যুব ও ২৪৫১ জন যুবনারী) ৪৭ কোটি ২৬ লক্ষ ১৪ হাজার টাকা যুব ঋণ প্রদান করা হবে।
যুব উন্নয়ন অধিদফতর ১৮ হতে ৩৫ বছরের যুবদের বিগত এক বছরে ২ লক্ষ ৭১ হাজার ৭১৯ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ট্রাফিক পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করার জন্য ১০৭৬ জন যুবকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও সামাজিক সচেতনতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। ঢাকাসহ বিভাগ, জেলা ও উপজেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তারুণ্যের উৎসব পালন করা হয়েছে।
যুব উন্নয়ন অধিদফতর যুব শক্তিকে সম্পদে পরিণত করতে দেশের ৬৪টি জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ, পরিবেশবান্ধব বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন, মোবাইল ভ্যানের মাধ্যমে প্রত্যন্ত এলাকায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন চলমান রয়েছে। শিক্ষা, প্রশিক্ষণহীন, কর্মহীন ৯ লক্ষ বেকার যুবকে আর্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান উত্তর তারুণ্যের জয়যাত্রাকে কাজে লাগিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর যুবশক্তিকে মানবসম্পদে পরিণত করার লক্ষ্যে কর্মমুখী প্রশিক্ষণ, আত্মকর্মসংস্থান ঋণ, সংগঠনভিত্তিক স্বেচ্ছা ও সেবামূলক কাজে যুবদের সম্পৃক্তকরণে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানানো হয়, যুবরাই উন্নয়ন ও উৎপাদনের প্রধান হাতিয়ার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মতো বৈষম্য ও অন্যায়ের প্রতিরোধ যুদ্ধে বিজয়ী যুব সমাজকে যুব উন্নয়ন অধিদফতর আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক কারিগরি প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণোত্তর আর্থিক ও উপকরণ সহায়তার মাধ্যমে মানবসম্পদে পরিণত করার মহান ব্রত নিয়ে বছরে প্রায় ২ লক্ষ যুব কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হচ্ছে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে আজকের কর্মসূচি
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭ টায়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, যুব উন্নয়ন অধিদফতরের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী, যুব সংগঠন, আত্মকর্মী, প্রশিক্ষণার্থী, যুব উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে বর্ণাঢ্য যুব র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। যুব র্যালিটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শেষ হবে।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সকাল ১০টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বিগত এক বছর যুব কার্যক্রমে অসামান্য অবদানের জন্য শ্রেষ্ঠত্বের ভিত্তিতে জাতীয় যুব পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ, ক্রেস্ট, সনদ প্রদান করা হবে। পুরস্কারের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ১ম, ২য় ও ৩য় বিভাগীয় পর্যায়ে এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, ট্রান্স জেন্ডার, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যুবদের নির্বাচন করা হবে।
সারাদেশের সকল জেলা ও উপজেলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবস ২০২৫ উপলক্ষে শপথ বাক্য পাঠ, আলোচনা সভা, প্রশিক্ষণ সনদ ও যুব ঋণের চেক বিতরণ, পরিচ্ছন্নকরণ অভিযান, রক্তদান কর্মসূচি, ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যুব দিবসের কার্যক্রম উপলক্ষে স্মরণিকা, বার্ষিক প্রতিবেদন, জাতীয় যুব পুরস্কার প্রাপ্তদের সাফল্য সম্বলিত পুস্তিকা, ব্রশিউর, পোস্টার, প্রকাশিত হবে।
আমার বার্তা/এমই