ই-পেপার রবিবার, ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২
সাক্ষাৎকার

রাসেদ শিকদারের জাদুর পথচলা

মোঃ আবু সাঈদ
০৩ আগস্ট ২০২৫, ০০:৩৭
রাসেদ শিকদার ময়ূরপঙ্খী স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫

বাংলার মঞ্চে ‘মিস্টার বিন’ খ্যাত যে শিল্পীর নাম আজ হাজারো মানুষের মুখে মুখে, তিনি রাসেদ শিকদার। তাঁর হাস্যরস, অভিনয়শৈলী আর চমকপ্রদ জাদুকর্মে শুধু শিশু-কিশোর নয়, মুগ্ধ হন বয়স্করাও। হাসি আর জাদুর এক অপূর্ব মিশ্রণ তাঁর সৃষ্টিতে।

রাসেদ শিকদার এমন একজন বহুমুখী প্রতিভাবান যিনি একইসঙ্গে মানুষকে হাসাতে, কাঁদাতে এবং ভাবাতে পারেন। তাঁর শিল্পচর্চা শুধু বিনোদনের গণ্ডিতে আবদ্ধ নয়, বরং জীবনের গভীর ভাবনাকেও উসকে দেয়। সম্প্রতি তিনি পেয়েছেন ‘ময়ূরপঙ্খী স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’-এর সম্মান, যা তাঁর দীর্ঘ ও সংগ্রামী শিল্পীজীবনের এক গৌরবময় স্বীকৃতি।

এই প্রতিভাবান শিল্পীর সঙ্গে তাঁর অর্জন, অভিজ্ঞতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন মোঃ আবু সাঈদ।

প্রশ্ন: ‘ময়ূরপঙ্খী স্টার অ্যাওয়ার্ড ২০২৫’ প্রাপ্তি আপনাকে কী দিয়েছে?

রাসেদ শিকদার: এই সম্মানটি আমার কাছে নিছক একটি পুরস্কার নয়, এটি আমার সৃষ্টিশীল জীবনধারার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। দীর্ঘদিন ধরে মঞ্চে কাজ করছি, হাসাতে চেষ্টা করেছি, মানুষকে আনন্দ দিতে চেয়েছি। কিন্তু এই পুরস্কার আমাকে জানিয়ে দিলো আমার পরিশ্রম বৃথা যায়নি। আমার শিল্পকে মানুষ ভালোবেসেছে, স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি এক নতুন অনুপ্রেরণা হয়ে ধরা দিয়েছে আমার জীবনে।

প্রশ্ন: পুরস্কার গ্রহণের মুহূর্তে আপনার অনুভূতি কেমন ছিল?

রাসেদ শিকদার: যখন মঞ্চে আমার নাম ঘোষণা করা হলো, চারপাশে আলোর ঝলকানি, করতালির ধ্বনি, এবং সেই মুহূর্তে আমার জীবনের একেকটা দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। মনে হচ্ছিল আমি সেই ছোট্ট ছেলেটি, যে একদিন স্বপ্ন দেখেছিল মঞ্চে দাঁড়াবে, মানুষকে আনন্দ দেবে। ট্রফি হাতে নেওয়ার মুহূর্তে ভেতরটা কেঁপে উঠেছিল। আমার মনে হচ্ছিল আজ আমি নয়, জয় করেছে আমার শিল্প, আমার আদর্শ।

প্রশ্ন: আপনি তো জাদুশিল্পী, কিন্তু লেখালেখিও করেন। লেখার প্রতি এই টান কিভাবে এলো?

রাসেদ শিকদার: মঞ্চে আমি জাদু দেখাই, হাসি ছড়াই, কিন্তু মনের কথা সবসময় প্রকাশ করা যায় না। সেই অপ্রকাশিত কথাগুলোই কলম ধরিয়ে দেয় হাতে। লেখার মাধ্যমে আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি। যখন প্রথম বই 'দ্য পাসওয়ার্ড অব সাকসেস' প্রকাশ করলাম, তখন বুঝলাম মানুষ আমার কথায় সাহস খুঁজে পায়, আত্মবিশ্বাস খুঁজে পায়। এরপর ‘ফান ফিয়েস্তা’ নামের বইয়ে আমি চেষ্টা করেছি আরও খোলামেলা ও রঙিনভাবে জীবনের গল্প বলতে। লেখালেখি এখন আমার জীবনের আরেকটি অংশ হয়ে গেছে।

প্রশ্ন: আপনার শৈশব ও বেড়ে ওঠা নিয়ে কিছু বলবেন?

রাসেদ শিকদার: আমার জন্ম পাবনার এক ছোট্ট শহরে। শৈশবটা খুব সাধারণ ছিল, কিন্তু কল্পনায় ভরপুর। পাড়ার নাটক, স্কুলের আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, মেলায় জাদু দেখা এই সবকিছুর মধ্যেই আমার শৈশব গড়ে উঠেছে। মা ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তিনি সবসময় বলতেন, “নিজের স্বপ্নকে বিশ্বাস করো, তাহলেই তুমি সফল হবে।” বাবার কাছ থেকে পেয়েছি শৃঙ্খলা আর নিষ্ঠা। তাঁদের কাছ থেকেই আমি শিখেছি, শিল্প শুধু আনন্দ নয়, এটা একটি দায়িত্ব।

প্রশ্ন: প্রথম মঞ্চে ওঠার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

রাসেদ শিকদার: প্রথম মঞ্চে উঠেছিলাম স্কুলে, মাত্র ১১ বছর বয়সে। মঞ্চে উঠেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল সবকিছু ভুলে গেছি। কিন্তু দর্শকের মাঝে একজোড়া হাসিমুখ আমাকে সাহস দিয়েছিল। তখন বুঝলাম, মানুষ শুধু নিখুঁত পারফরম্যান্স চায় না, তারা আন্তরিকতা খোঁজে। সেদিন থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাইনি।

প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

রাসেদ শিকদার: আমি চাই জাদুকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে যেখানে এটা শুধু চমকের বিষয় না হয়ে দাঁড়ায় একটি সামাজিক বার্তাবাহক হিসেবে। আমি পরিকল্পনা করছি একটি 'সোশ্যাল ম্যাজিক একাডেমি' গড়ার, যেখানে শিশু-কিশোররা শুধু জাদু শিখবে না, শিখবে দায়িত্বশীলতা, নৈতিকতা আর আত্মবিশ্বাস। আমি চাই বাংলাদেশের নাম আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তুলে ধরতে।

প্রশ্ন: আপনার কাজকে কীভাবে দেখেন? এটা শুধুই একটি পেশা, নাকি কিছু বেশি?

রাসেদ শিকদার: এটা নিঃসন্দেহে আমার ভালোবাসা, আমার পরিচয়। আমার প্রতিটি পারফরম্যান্সের পেছনে থাকে গভীর ভাবনা, সমাজের জন্য কিছু বলার চেষ্টা। আমি হাসি দিয়ে মানুষকে ভাবাতে চাই। আমি বিশ্বাস করি, একজন শিল্পী শুধু মানুষকে আনন্দ দেয় না, বরং চিন্তার খোরাকও দেয়।

প্রশ্ন: নতুন প্রজন্ম এবং দর্শকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?

রাসেদ শিকদার: আমি সবসময় বলি নিজের অবস্থান থেকে দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা করুন। এটা হতে পারে ছোট্ট কিছু কিন্তু তা যদি আন্তরিক হয়, তবেই তা বড় হয়ে ওঠে। আর দ্বিতীয়ত, অসুস্থ বিনোদন থেকে দূরে থাকুন। সুস্থ বিনোদন শুধু আনন্দ দেয় না, এটি আপনার মননশীলতাও গড়ে তোলে।

প্রশ্ন: আপনি কীভাবে প্রস্তুতি নেন একটি নতুন পারফরম্যান্সের জন্য?

রাসেদ শিকদার: প্রতিটি শো আমার কাছে আলাদা। আমি কখনোই আগের পারফরম্যান্স কপি করি না। আমি প্রতিটি দর্শককে মনে করি নতুন। তাদের জন্য নতুন কিছু দিতেই হবে। তাই আমি স্ক্রিপ্ট লিখি, রিহার্সাল করি, মঞ্চে দাঁড়িয়ে নিজেকে বারবার জিজ্ঞেস করি 'এই অংশটা আরও ভালো করা যায় কি না?' আমি বিশ্বাস করি, পরিশ্রমই একজন শিল্পীকে উজ্জ্বল করে তোলে।

প্রশ্ন: সামাজিক মাধ্যমে আপনি কতটা সক্রিয়?

রাসেদ শিকদার: আমি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করি, তবে গঠনমূলক কনটেন্ট শেয়ারের উদ্দেশ্যে। ফেসবুকে আমি মাঝে মাঝে রিলস আপলোড করি, যেগুলোর মাধ্যমে মানুষকে হাসানো কিংবা অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করি। আমি চাই না আমার ফলোয়াররা শুধু বিনোদন পাক আমি চাই তারা চিন্তা করুক, কিছু উপলব্ধি করুক। আমার এই প্রচেষ্টা মানুষকে একটু হলেও ইতিবাচক চিন্তায় ভাবাতে পারে এটাই আমার প্রাপ্তি।

শেষ প্রশ্ন: এখনকার বিনোদন জগৎ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

রাসেদ শিকদার: এখন অনেক কিছুই দ্রুত জনপ্রিয় হয়, আবার তেমন দ্রুতই হারিয়ে যায়। টিকটক, শর্ট ভিডিও সবকিছুতে যেন শৈল্পিকতার চেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে 'ভিউ'। আমি বলছি না এটা খারাপ, তবে আমাদের ভাবতে হবে আমরা কী দিচ্ছি সমাজকে? আমি চাই বিনোদন হোক শিক্ষণীয়, গঠনমূলক এবং মানসম্মত।

এই সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট, রাসেদ শিকদার শুধু একজন শিল্পী নন, তিনি সমাজের জন্য এক নিঃস্বার্থ স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর হাসি, তাঁর জাদু, তাঁর লেখনী সবকিছুর মূলে রয়েছে মানুষের জন্য ভালো কিছু করার অঙ্গীকার। আর ঠিক সে কারণেই তিনি আজ হাজারো মানুষের প্রেরণার নাম।

পুরস্কার একটি নামমাত্র পদক হতে পারে অনেকের জন্য। তবে রাসেদ শিকদারের জন্য এটি এক মহামূল্যবান অভিজ্ঞতা যার মাঝে আছে জীবন সংগ্রামের গল্প, স্বপ্নপূরণের আনন্দ এবং সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিজ্ঞা।

জাদু শুধু চোখে নয় মনেও ছুঁয়ে যায়, রাসেদ শিকদার যেন তারই জ্যান্ত প্রমাণ।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি ‘রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে সুবিধাবাদীদের বিজয়োৎসব

‘জুলাই বিপ্লবের (গণঅভ্যুত্থান) বর্ষপূর্তিতে: রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে যদি সুবিধাবাদীরা বিজয় উৎসব করে, তাহলে ইতিহাস কাউকে

যেই ক্ষমতা পাবে, সেই তার অসৎ ব্যবহার করবে: শবনম ফারিয়া

অভিনয়ে আগের মতো ব্যস্ততা নেই শবনম ফারিয়ার। কয়েক মাস ধরে চাকরি করছেন তিনি। তবে সময়–সুযোগ

আসিফ আকবরের 'যত ভালোবাসি তোরে' গানে প্রিয়া অনন্যা

এ সময়ের মডেল ও অভিনেত্রী প্রিয়া অনন্যা। নিয়মিত শোবিজ অঙ্গনে কাজ করে যাচ্ছে। সম্প্রতি তার

অভিনয় ছেড়ে দিলে সাংবাদিকতা করবেন মোশাররফ করিম

দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। বহুমাত্রিক অভিনয়ের জন্য যার জুড়ি নেই। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে কখনো মফস্বলের
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী নির্বাচনী পর্ষদের উদ্বোধন করলেন প্রধান উপদেষ্টা

ফ্যাসিবাদ বিদায় করতে পারলেও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারিনি

তিস্তার পানি ফের বিপৎসীমার ওপরে, নদীপাড়ে বন্যা আতঙ্ক

গবেষণা বলছে মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তিকে কমিয়ে দিচ্ছে চ্যাটজিপিটি

এআই উন্নয়নে ২ বিলিয়ন ডলারের সম্পদ বিক্রি করবে মেটা

অংশীজনের স্বীকৃতি ছাড়া জুলাই ঘোষণাপত্রকে প্রত্যাখ্যান করবে গণঅধিকার

মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: মাইলস্টোনে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন

ট্রাইব্যুনালে হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম সাক্ষ্য দিলেন খোকন চন্দ্র

টেলিযোগাযোগ খাতে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথে ইতিহাস গড়ল বিএসসিপিএলসি

হাসিনা সব অপরাধের নিউক্লিয়াস: সূচনা বক্তব্যে চিফ প্রসিকিউটর

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারলেন স্বামী

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি মামলার প্রস্তুতি

৫ অথবা ৮ আগস্ট নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করতে পারেন প্রধান উপদেষ্টা

ব্যক্তি করদাতাদের জন্য অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক

গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে অস্ট্রেলিয়ায় লাখো মানুষের বিক্ষোভ

পূবাইলে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুর মৃত্যু, মা-বাবা আশঙ্কাজনক

রাঙামাটি-বাঘাইছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ

শাহবাগে সমাবেশের মঞ্চ প্রস্তুত, জড়ো হচ্ছেন ছাত্রদল নেতাকর্মীরা

গণ-অভ্যুত্থানের পর ইতিবাচক রাজনীতি প্রচলন করেছে ছাত্রদল: নাছির

শেখ হাসিনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাবাদী স্বৈরাচার: অ্যাটর্নি জেনারেল