দেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে যথা সম্ভব চলমান রাখতে সরকার সারের আমদানি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সার আমদানি করে থাকে। চলতি বছরে সার আমদানির প্রথম কার্যাদেশ প্রদানেই সরকারের ২৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়েছে। অন্তবর্তীকালীন সরকার দীর্ঘ ১৬ বছর পরে সার আমদানিতে কৌশলগত ইতিবাচক ভূমিকার কারনে- একটি শক্তিশালী সার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে গেছে। ফলে তারা শুরু করেছে নানা ষড়যন্ত্র। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থার গুজব ছড়িয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের অপচেষ্টা শুরু করেছে।
এ বছর সার আমদানির দর প্রস্তাব অনুসন্ধান করে জানা যায়, কৃষি-মন্ত্রনালয় গত ১৯ আগষ্ট সার আমদানি দর প্রস্তাবে সম্মতি প্রদানকারী ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি ২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি এবং ৯০ হাজার মেট্রিক টন এম ও পি সার সরবরাহের জন্যে কার্যাদেশ প্রদান করে। পরবর্তীতে ঐ একই সরকারী মূল্যে নির্ধারিত তারিখের মধ্যে পুনরায় সম্মত ৬টি প্রতিষ্ঠানকে ২য় ধাপে চলতি মাসের ৩ তারিখে ৯০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি ও ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন ডিএপি সার সরবরাহের কার্যাদেশ দেয়া হয়। এই কার্যাদেশ প্রদানের, মাধ্যমেই সরকারের সাশ্রয় হলো ২৩৩ কোটি ৬১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। কৃষি মন্ত্রনালয়ের দেয়া এ কার্যাদেশগুলো যাচাই করলেই প্রতীয়মান হবে যে- নিদৃষ্ট কোন সারের ক্ষেত্রে একটি দেশের বেলায় সকল সার আমদানিকারককে কেবল একটি নির্ধারিত দরেই সার সরবরাহের আদেশ দেয়া হয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন দরে নয়।
কৃষি মন্ত্রনালয়ের এ বছরের সার আমদানি কার্যক্রম অনুসন্ধানে জানা যায়-সার আমদানীতে জাহাজ ভাড়া বাদে কেবল প্রতি টন সারের মূল্য (এফ ও বি) এবং জাহাজ ভাড়া সহ প্রতিটন সারের মূল্য (সিএফআর) নির্ধারিত হয়ে থাকে বিশ্বব্যাপী বহল প্রচারিত "আরগুস ও ফার্টিকন" নামীয় দুটি সার বিষয়ক সাপ্তাহিক বুলেটিনে প্রকাশিত অতি সাম্প্রতিক মূল্য তালিকা অনুসরন করে। বাংলাদেশ সরকার এবং সার উৎপাদনকারী দেশগুলো মূলত: উক্ত দুটি বুলেটিনে প্রকাশিত অঞ্চল ভিত্তিক সাম্প্রতিক সারের মূল্যের ভিত্তিতে দীর্ঘ বছর ধরে সারের মূল্য নির্ধারন করে থাকে। মূল্য নির্ধারণ সংক্রান্ত উক্ত বিষয়ে সম্যক ধারনা ব্যতিত কোন একটি স্বার্থান্বেষী মহল চক্রের মনগড়াভাবে দেয়া তথ্য ও অভিযোগের ভিত্তিতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার সাথে জড়িত জন গুরুত্ব বিষয়ে- সংবাদ প্রকাশে সংশ্লিষ্ট কৃষি মন্ত্রনালয়ের এক সাথে আলোচনা করলে- প্রকৃত তথ্য পাওয়া যেতো।
কৃষি মন্ত্রনালয়ের সার আমদানি-সংক্রান্ত কার্যক্রম অনুসন্ধানে আরো জানা যায়- কতিপয় আমদানিকারক এ অর্থবছরের দর প্রস্তাব গ্রহন প্রক্রিয়ায় সরকারী দাপ্তরিক প্রাককলিত মূল্যের চেয়ে
দেশ ভেদে টন প্রতি ২৫ মার্কিন ডলার থেকে ১৫০ ডলার বা তারও বেশী মূল্যে সার সরবরাহের প্রস্তাব করে। কৃষি মন্ত্রনালয়- সরকারি স্বার্থ রক্ষা তথা ব্যয় সাশ্রয়ের নিমিত্ত স্বাভাবিক ভাবেই তাদের প্রস্তাবিত অতি উচ্চ মূল্য গ্রহন না করে নির্দিষ্ট সারের জন্য প্রণীত দেশ ভিত্তিক দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দরে সার সরবরাহের জন্য প্রস্তাব দেয়। প্রাপ্ত দেশ ভিত্তিক সর্বনিন্ম দর বা দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দর - উভয়ের মধ্যে যেটি কম সেই সেই অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রনালয় কার্যক্রম গ্রহন করেছে এবং কার্যাদেশ দিয়েছে। ফলে সার সিন্ডিকেট চক্র ভয়ংকর ভাবে নাখোস হয়ে নানা গণ মাধ্যমে বিশেষ সুবিধা দেয়ার ভিত্তিতে অপপ্রচার শুরু করেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, কৃষি মন্ত্রনালয় রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় (জি টু জি) সার আমদানির পাশাপাশি বেসরকারী আমদানিকারকদের মাধ্যমেও সার আমদানি করে আসছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নন-ইউরিয়া সার আমদানি, বিক্রয় এবং ভর্তুকি বিবরণ ও নন-ইউরিয়া প্রদান পদ্ধতি সংক্রান্ত ২০১৫ সালের জারীকৃত পরিপত্রের অনুচ্ছেদ ৮ (গ) “মোট মূল্যে দাখিলকৃত আবেদনসমূহ হতে সর্ব নিম্ন মূল্যের ক্রমানুসারে বেসরকারী পর্যায়ে আমদানিকারকগনের সার ভর্তুকির অর্ন্তভুক্তির জন্য মনোনীত হবে। মূল্যের যৌক্তিকতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে সমসাময়িক সময়ে বিএ ডিসি কর্তৃক আমদানিকৃত সারের মূল্য এবং সারের আন্তর্জাতিক মূল্য প্রকাশকারী বুলেটিন আরগুস (ARGUS-FMB) ও ফার্টিকন (FERTECON) এর মূল্য তালিকায় প্রদর্শিত দরের সাহায্য নেয়া হবে। তবে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত মর্মে বিবেচিত হবে”। এ ক্ষেত্রে বর্তমান সার আমদানির দর প্রস্তাব কার্যক্রম ও কার্যাদেশ প্রদানে-দীর্ঘ ১৬ বছর পরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে রাষ্ট্রের প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, নন ইউরিয়া সারের আমদানি কার্যক্রমে- কৃষি মন্ত্রনালয়ের চলতি বছরের, দর প্রস্তাব ও কার্যাদেশ কার্যক্রম ব্যর্থ হলে টন প্রতি ২৫ মার্কিন ডলার থেকে ১৫০ মার্কিন ডলার বা তারও চেয়ে বেশী ব্যবধানে সার সরববাহের সুযোগ তৈরী হতো। এতে সরকার বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় ঘটতো। কিন্তু কৃষি মন্ত্রনালয়-উপদেষ্টা ও কৃষি সচিবের সচেতন সিদ্ধান্তে সেই প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়েছে। সাশ্রয় হয়েছে প্রায় ২৩৪ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সচিব ডঃ মোহাম্মদ এমদান উল্লাহ মিয়ান এই প্রতিনিধি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন- “বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করার পর দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার আমদানির ক্ষেত্রে- নিদৃষ্ট সারের জন্য নিদৃষ্ট দেশের আমদানি কারকগন কর্তৃক প্রদত্ত সমুদয় দরের মধ্যে কেবল সর্বনিম্ন দরে সার সরবরাহে সম্মতি প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহকে ক্রয়াদেশ প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে এবং গত অর্থ বছর থেকেই তা কার্যকর করা হয়। এর ফলে চলতি অর্থ বছরে সরকারের বিপুল পরিমান অর্থ সাশ্রয় হয় এবং আমদানিকারকদের ও অসম লাভের পথ সংকুচিত হয়”।
এ প্রসঙ্গে কৃষি সচিব আরো বলেন- “কৃষি মন্ত্রনালয় যথাযথ ও নিখুঁত ভাবে দেশ ভেদে সারের সঠিক মূল্য নির্ধারন ও তা অনুসরণ করছে। এ ক্ষেত্রে নিদৃষ্ট কোন প্রকারের সারের জন্য একটি দেশের ক্ষেত্রে কেবল মাত্র একটিই মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তা সকল আমদানিকারকের জন্যই প্রযোজ্য রয়েছে। কারো প্রতি কোন প্রকার অনুরাগ বা বিরাগ প্রদর্শন করা হয়নি। এটাই বর্তমান সরকারের নীতি”।
কৃষি মন্ত্রনালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম নিবিড় অনুসন্ধানে জানা যায়- কৃষি উপদেষ্টা লেঃ জেঃ মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর ইতিবাচক নির্দেশনায় কৃষি সচিব ডঃ মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিযান- কৃষি মন্ত্রনালয়কে সর্বোচ্চ সততা ও নিষ্ঠার সাথে পরিচালনার চেষ্টা করছেন। জুলাই আন্দোলনের চেতনা ও মূল্যবোধকে ধারন করে একটি বৈষম্যহীন ও দুর্নীতি মুক্ত দেশ গঠনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে। এ ক্ষেত্রে কৃষি-মন্ত্রনালয় - এবছর কৃষিখাতে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে গন মানুষের প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। শাক-সবজি, আলু, পেয়াজ, ধান, আম সহ ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে । অতি প্রতিকূল সময়েও সার সরবরাহ নিশ্চিত করায় এ অর্জন সম্ভব হয়েছে। এর অন্যতম কারণ কষি মন্ত্রনালয়-যে কোন ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছে।
আমার বার্তা/এমই