পরিচ্ছন্ন আর বাসযোগ্য খেতাব পাওয়া রাজশাহী এখন ‘দূষণের শহরে’ পরিণত হওয়ার আশঙ্কায়। পোস্টারের আগ্রাসন, যত্রতত্র ময়লা ফেলা, ফুটপাত ও সড়ক দখল ও দূষণের ছোবলে হারাতে বসেছে নগরীর সৌন্দর্য।
সরেজমিনে রাজশাহীর শহরে দেখা যায়, শহরের পথ দেখে বোঝার উপায় নেই যে, কোনটি ফুটপাত আর কোনটি হাঁটার পথ। যেখানে থাকার কথা পথচারীদের নির্বিঘ্নে চলার পথ, সেখানে দখল করে বসেছে দোকানপাট আর অস্থায়ী স্থাপনা। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক পোস্টারে ঢেকে গেছে শহরের দেয়াল, ট্রাফিক সাইন এমনকি বিদ্যুতের খুঁটিও। যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, শহরের বাতাসে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নগরীর সৌন্দর্য নষ্ট করতে যেন চলছে এক মহা আয়োজন।
পরিকল্পনা থাকলেও যথাযথ বাস্তবায়ন ও নিয়মিত তদারকির অভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে পরিচ্ছন্ন ও সৌন্দর্যের খ্যাতি পাওয়া রাজশাহীর। নাগরবাসীর সচেতনতা আর সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ ছাড়া সেই খেতাব হারিয়ে যেতে পারে- এমন শঙ্কা অনেকের।
এ দিকে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অবস্থাও শোচনীয়। শহরে প্রতিদিনের উৎপাদিত বর্জ্যগুলো নিয়ে ফেলা হয় সিটি হাটের ভাগারে; যা উপচে পড়ছে রাস্তা বা খোলা স্থানে। এতে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, বাড়ছে মশা-মাছির উপদ্রব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি মানুষের মাঝে ছড়াচ্ছে নানা রোগ।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), রাজশাহী কার্যালয়ের সমন্বয়কারী তন্ময় কুমার সান্যাল সময় সংবাদকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন অনেকদিন ধরেই চেষ্টা করছে শহরটাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও দূষণমুক্ত রাখতে। তবে তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আল্টিমেটলি ফেইল। সেটি আরও উন্নত হওয়া দরকার।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিটি হাটের যে ভাগাড় সেটির আরও ভালো ব্যবস্থাপনার দরকার। সেখান থেকে যেন পরিবেশ নষ্ট না হয় এবং রোগ ব্যাধি না ছাড়ায়, সে বিষয়ে তাদের আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার।’
ফুটপাত দখলমুক্ত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ ও দূষণ কমাতে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা প্রকৌশলী শেখ মো. মামুন।
তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘দ্রুত নগরায়নে এসব সমস্যা এখন বাস্তবতা। দেয়ালে বা রাস্তায় রাজনৈতিক পোস্টারের সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার। যেহেতু দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে এই সমস্যাগুলো থাকবেই। তবে নগরবাসী আমাদের যেভাবে সহযোগিতা করছেন সেটি অব্যাহত থাকলে এটি তেমন কোনো সমস্যা হবে না।’
প্রকৌশলী শেখ মো. মামুন আরও বলেন, ‘অবৈধ ফুটপাত দখল নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট শাখার কাজ করছে। আর পোস্টারের বিষয়টি আসলে আমাদের দেশের একটি সাংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছে। এটির জন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কমিটমেন্ট দরকার। আমরা উন্নত বিশ্ব যেমনটি দেখি যে পোস্টারের নির্দিষ্ট একটি জায়গা থাকে এবং একটি মেয়াদ থাকে সেখানে তারা পোস্টারগুলো লাগায়। এটা কিন্তু আমাদের দেশেও করা যেতে পারে।’
পরিচ্ছন্ন শহরের স্বীকৃতি ধরে রাখতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ জরুরি- এমন মত বিশেষজ্ঞ ও নগরবাসীর।
আমার বার্তা/এল/এমই