মা-বাবাকে দেখতে ফরিদপুর থেকে বড় বোনের সঙ্গে বাসে রাজবাড়ীর কালুখালীতে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিল শিশু প্রকৃতি হিয়া হালদার (৬)। কিন্তু পথে রাজবাড়ী আসতেই বাসের রেডিয়েটর বিস্ফোরণে গরম পানিতে ঝলসে যায় প্রকৃতির দুই পা।
ফরিদপুর থেকে কালুখালী যাওয়ার পথে গত ২৪ জুলাই দুর্ঘটনার শিকার হয় সে। বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে শিশুটি। ঝলসানো পায়ের যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে সে।
প্রকৃতি হিয়া হালদার রাজবাড়ী জেলার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া গ্রামের গোবিন্দ হালদারের মেয়ে। ফরিদপুর শহরের চরকমলাপুর ভাড়া বাসায় বড় বোন শিল্পী হালদারের পরিবারের সঙ্গে থাকে সে এবং ফরিদপুর সানরাইজ প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্লে গ্রুপে পড়ে।
শিশু প্রকৃতির বড় বোন শিল্পী হালদার জানান, গত ২৪ জুলাই মা-বাবাকে দেখার জন্য মেজ বোন পূর্ণিমা হালদারের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিল প্রকৃতি। প্রথমে ফরিদপুর থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত একটি লোকাল বাসে পৌঁছায় তারা। সেখান থেকে কুষ্টিয়াগামী রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতির লোকাল যাত্রীবাহী বাস আলিফে ওঠে। বাসটির চেয়ার খালি না থাকায় সামনের অংশে ইঞ্জিনের পাশে থাকা একটি সিটে বসেন পূর্ণিমা হালদার এবং তার কোলে বসে ছিল প্রকৃতি।
তিনি বলেন, আমরা যখন থেকে বাসটিতে উঠেছিলাম, তখন থেকে ইঞ্জিনের পাশে থাকা সিটগুলো গরম হতে থাকে। একপর্যায়ে বিকেল ৫টায় রাজবাড়ী জেলা শহরের মুরগির ফার্ম এলাকায় পৌঁছালে বাসের চালক সালাম হোসেন হেলপারকে বাসটির ইঞ্জিনের কাভার খুলে দেখতে বলেন। তখন কোনো যাত্রীকে নামতে বলা হয়নি। ওই অংশ খুলে দেখেন, ভেতরের পাখাটি বন্ধ রয়েছে। এরপরই রেডিয়েটরের মুখ খুলতে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে। চারদিকে গরম পানি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে এবং ধোঁয়ায় ভরে যায়। তখন অনেকে ভয়ে জানালা দিয়েও বের হতে থাকে, কিন্তু আমার ছোট বোনকে নিয়ে বের হতে পারিনি। এ সময় প্রকৃতির দুই পা গরম পানি লেগে ঝলসে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেলে পাঠানো হয়।
বড় বোন শিল্পী হালদার বলেন, প্রকৃতির দুই পায়ের হাঁটু থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত দগ্ধ হয়েছে, যা শরীরের প্রায় ১০ শতাংশ। চিকিৎসক বলেছে তার স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে সময় লাগবে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় আমরা রাজবাড়ী বাস মালিক সমিতিতে অভিযোগ জানাতে গেলে আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন তারা। পরে জানতে পারি বাসটির ফিটনেস সনদ, লাইসেন্স এমনকি কোনো কাগজপত্র নেই। তিনি বলেন, আমার বোনের যে ক্ষতি হয়েছে, সে বিষয়ে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেব। যেন সড়কে ফিটনেসবিহীন বাস না চালাতে পারে, এমন যেন আর কারও সঙ্গে না হয়।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সুকুমার ভৌমিক বলেন, যখন কোনো বাস রাজবাড়ী সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের আন্ডারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় তখন তার কগজপত্র ও ফিটনেস দেখেই করা হয়। বাসের ফিটনেস সাধারণত ১ বছরের জন্য হয়ে থাকে। নতুন করে ফিটনেস সনদ দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া সড়কে চলতে গেলে অনেক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবুও ঘটনার পর থেকে আমরা খোঁজখবর রাখছি। পরিবারটির সঙ্গে আমরা বসে কি করা যায় সেটা দেখবো। আমাদের পক্ষ থেকে আমরা আন্তরিক রয়েছি।
আমার বার্তা/জেএইচ