মিরপুর ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচামাল ব্যবসায়ী আড়ৎদার সমিতির ব্যানারে বৈষম্য হতে মুক্তি, সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষে হযরত শাহআলী (র) মাজার শরীফের মালিকানাধীন ১.২৮ (এক একর আটাশ শতাংশ) জায়গা বুঝে পাওয়া ও কোন রকম আগাম নোটিশ ছাড়া সাত দিনের মধ্যে উচ্ছেদ কার্যক্রম নোটিশ জারির প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানী ঢাকা মিরপুরের হযরত শাহ আলী বাগদাদি (র) মাজারের পশ্চিম পার্শ্বস্থ ওয়াকফ প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণাধীন বেশ কিছু খালি জমি বিভিন্ন নামে গত ফ্যাসিষ্ট সরকারের মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাজার প্রশাসনের সহযোগিতায় নানা নামে স্থানীয় কাঁচামাল আড়ৎ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে। নামমাত্র কিছু টাকা মাজার তবিলে দিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এদের বিরুদ্ধে।মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যবসায়ীদের কাগজপত্র সূত্রে জানা যায়,চাঁদাবাজদের জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেতে মিরপুর ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচামাল ব্যবসায়ী আড়ৎদার সমিতির পক্ষে মোঃ সাইফুল ইসলাম গং ও মোঃ শাজাহান গং নামে দুই কাঁচামাল ব্যবসায়ী মাজারের সিএস-২৯১,আরএস-১৬৪৬ ও মহানগর-৮৫০৫ নং দাগের ১.২৮(এক একর আটাশ শতাংশ) জায়গা তাদের অনুকূলে অস্থায়ী মাটিভাড়া দেওয়ার লক্ষে গত ১৬/০২/২০২১ইং তারিখে ধর্ম মন্ত্রণালয় আবেদন করে এবং মন্ত্রণালয় গত ১১/০৮/২০২১ইং তারিখে ওয়াকফ প্রশাসন বরাবরে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা প্রদান করে।দীর্ঘ তিন মাস তদন্ত শেষে ওয়াকফ প্রশাসন ০৮/১২/২০২১ইং তারিখে মাজার পরিচালনা কমিটি ও মাজার প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ প্রদান করে। মাজার পরিচালনা কমিটি গত ২০/০১/২০২২ইং তারিখে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচ্য সূচি-২ এর আলোকে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়ে উল্লেখিত সমিতির অনুকূলে ১.২৮(এক একর আটাশ শতাংশ) জায়গা দৈনিক ২৫ হাজার টাকা ভাড়া ও ফেরত যোগ্য দুই কোটি টাকা জামানত নির্ধারণ করে অস্থায়ী মাটি ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে রেজুলেশন পাশ করে। তাদের কাগজ থেকে আরো জানা যায়, মাজার পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মতে কমিটির সদস্য সচিবের স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে গত ২৩/০১/২০২২ই তারিখে সাইফুল-শাজাহান গংদের অনুকূলে জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং তারা ফেরত যোগ্য জামানতের ৫০ লক্ষ টাকার পে-অর্ডার মাজারের তহবিলে প্রদান করে। বরাদ্দের ৭(সাত) দিনের মধ্যে তাদের সাথে চুক্তি করার কথা থাকলেও এখনো পর্যন্ত সেই চুক্তি সম্পাদন করা হয়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সাল থেকে আমরা ব্যবসায়ীরা এই বাজারে পলাতক হাসিনা সরকারের মন্ত্রী-এমপি, স্থানীয় আওয়ামী লীগ এর অঙ্গ সংগঠন, স্থানীয় প্রভাবশালী মধ্যসত্ত্বভোগীদের জিম্মি দশায় ছিলাম।যারা বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। চাঁদাবাজদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে মাজারের ম্যানেজার মোর্শেদ, ফরহাদ,মিজানদের মতো ১২-১৩হাজার টাকার বেতনভোগী কর্মচারীরা হয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। তিনি আরো বলেন, চাঁদাবাজদের জিম্মি দশা থেকে রেহাই পেতে গত ১৬/০২/২০২১ইং তারিখে মাজারের ওয়াকফ করা এই ১ একর ২৮ শতাংশ জমি অস্থায়ী ভিত্তিতে মাটি ভাড়া নেওয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় আবেদন করি।তারপর ওয়াকফ ও মাজার প্রশাসনের নানা তদন্তের পরে জায়গাটি আমাদের অনুকূলে বরাদ্দ পাই। বরাদ্দ চিঠিটি এই দুর্নীতিবাজ ম্যানেজার প্রায় ১৮ মাস পরে আমাদের হাতে দেয়। চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে শর্ত মোতাবেক আমরা মাজারের অনুকূলে ৫০ লক্ষ টাকার পে অর্ডার জমা করি। শর্তে সাত দিনের মধ্যে আমাদের সাথে স্ট্যাম্পে চুক্তি করার বিধান থাকলেও তখনকার মাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক স্থানীয় এমপি আগা খান মিন্টু, প্রয়ত সাবেক এমপি আসলামুল হক আসলামের বড় ভাই মফিজুল হক বেবু,৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কমিটির সদস্য সচিব কাশেম মোল্লা, ৯ নং ওয়ার্ড কমিশনার মুজিব সরোয়ার মাসুম, কাজী টিপু, তাজুল ইসলাম দেওয়ান, আকবর মোল্লা, বেবুর ম্যানেজার করিম পরবর্তীতে সাবেক এমপি মাইনুল হোসেন খান নিখিল,স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও প্রভাবশালীরা নানা ছলে- বলে-কৌশলে অদ্য পর্যন্ত আমাদের বৈধভাবে বরাদ্দ পাওয়া জায়গাটি বুঝিয়ে দেয়নি। গত বছরের ৫-ই আগস্ট স্বৈর সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশে আমাদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়। তিনি হতাশ হয়ে আরো বলেন, মাননীয় জেলা প্রশাসক মহোদয় মাজার শরীফের মোতাওয়াল্লি নিযুক্ত হওয়ার পরে অনেক আশা-ভরসা নিয়ে গত ২৭/১০/২০২৪ইং তারিখে আমাদের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে এবং বৈধ সকল কাগজপত্রের কপি যুক্ত করে জামানতের বকেয়া দেড় কোটি টাকা গ্রহণ ও চুক্তি সম্পাদনের আবেদন করে চিটি প্রদান করি।তখন থেকে বেশ কয়েকবার আমাদের বক্তব্য নেয় ও তদন্ত করে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা আমাদের বিষয়টি খুবই মানবিক এবং অল্প সময়ের মধ্যে বিষয়টি সুরাহা করার মৌখিক আশ্বাস দেন। আমাদের জায়গাটি বুঝিয়ে না দিয়ে, আমাদের সাথে কোন রকমের আলাপ- আলোচনা না করে আমরা ভাড়াটিয়া হিসেবে থাকা বাজার সাত দিনের মধ্যে খালি করা অন্যথায় উচ্ছেদ করার নোটিশ দিয়ে মাইকিং করা হয়।এটা অমানবিক নয় কি? এই অমানবিক সিদ্ধান্তে যদি আমাদের শত শত ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হয়। তাহলে, যেই কোন পরিস্থিতির জন্য মাজার প্রশাসন দায়ী থাকবে।
ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন বলেন, পট পরিবর্তনের পরে আওয়ামী চাঁদাবাজরা একাধিক ছাত্র হত্যা মামলার আসামি হয়ে পলাতক হলেও, মাজারে বহাল তবিয়তে বসে থাকা তাদের দোসর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো বাজার থেকে চাঁদা তুলে তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হয়তো অত্যন্ত সুকৌশলে আমাদের দক্ষ জেলা প্রশাসক/মোতাওয়াল্লী মহোদয়ের দুর্নাম করার জন্য এবং তাদের আওয়ামী মনিবদের অর্থনৈতিক পুনর্বাসনের জন্য ভুল তথ্য দিয়ে এই নোটিশের ব্যবস্থা করেছে। নোটিশের দুই দিনের মধ্যেই সেই চাঁদাবাজদের একটা গ্রুপ পার্কিং বলে উক্ত জায়গায় সাইনবোর্ড বসানো তার জলজেন্ত প্রমাণ বলে তিনি দাবি করেন।
ব্যবসায়ী হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, যারা ২০১৮ সাল থেকে মাজারের সাথে কোন রকমের চুক্তি ছাড়া এই বাজার থেকে চাঁদাবাজি করে আসছে, তারা বর্তমান জেলা প্রশাসক মহোদয় মোতাওয়াল্লি হওয়ার পরেও একইভাবে চাঁদাবাজি করে যাচ্ছে । অথচ তারা রাজনীতি প্রভাব খাটিয়ে বাজার কমপ্লেক্সেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ১২০ টি দোকান বাগিয়ে নেয়। বাজার কমপ্লেক্সের পশ্চিম পাশে বর্তমান বাঁশের বাজারটি নকশা অনুযায়ী পার্কিং থাকলেও তারা জোরপূর্বক আমাদের নামে বরাদ্দকৃত জায়গাটি কোন কাগজপত্র ছাড়াই পার্কিং হিসেবে দাবি করে। এবং মাজার প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তাদের সাইনবোর্ড আমাদের জায়গার উপরে স্থাপন করে।
ব্যবসায়ী শাজাহান বলেন, এই ঢাকা শহরে মানুষ বস্তিতে ভাড়া থাকলেও বাসা ছাড়ার অন্তত দুই মাস আগে জানানো হয় কিন্তু আমরা সারাদেশব্যাপী কৃষি পর্যায়ে ব্যবসার সাথে যুক্ত থাকলেও আমাদের অর্থলগ্নি করা সত্ত্বেও আমাদের মাত্র সাত দিন সময় দিয়ে উচ্ছেদ করার পায়তারা করছে।এটা বৈষম্য মুক্ত বাংলাদেশের কোন ধরনের নমুনা? তিনি মোতাওয়াল্লী মহোদয়সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরো বলেন, যদি আমাদের নামে বরাদ্দকৃত জায়গাটি বুঝিয়ে না দিয়ে অথবা আমাদের যথাযথ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে এই বাজারটি উচ্ছেদের মত ভয়ংকর সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। তাহলে, আমাদের দুই শতাধি ব্যবসায়ীদের রুটি-রুজি বন্ধ হয়ে যাবে।কর্মসংস্থান হারাবে কয়েকশো মানুষ। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমাদের বিনিয়োগ করা পুঁজি হারানোরও শংকা থাকবে। তাই দয়া করে হঠাৎ কারো কথায়, কারো ভুল তথ্যে অথবা কারো মনোরঞ্জনের জন্য যদি এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে, আমাদের আত্ম হনন করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
আমার বার্তা/এমই