নারী ফুটবল বিশ্বকাপে খেলতে বাংলাদেশের সামনে যে সমীকরণ
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে মিয়ানমারকে হারিয়ে বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার দুয়ারে প্রবেশ করেছে। এশিয়ান কাপ ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বের ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২৭ ফিফা নারী বিশ্বকাপ ও ২০২৮ লস অ্যাঞ্জেলস অলিম্পিকে অংশগ্রহণের সুযোগ করে নিতে পারবে বাংলাদেশের মেয়েরা। তাই বাফুফে আসন্ন এশিয়া কাপের পাশাপাশি বিশ্বকাপ-অলিম্পিকের সম্ভাবনাও পরিকল্পনায় রাখছে।
বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো নারী এশিয়া কাপ নিশ্চিত করেছে। নারী ফুটবলের ভালো উপলক্ষে বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ বিগত সময়ের মতোই নিজ কক্ষে গুটিকয়েক সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করেছেন।
কিরণ বিশ্বকাপে চোখ রেখেই মন্তব্য করেছেন, '২০২৬-এর মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় এশিয়ান কাপ হবে। সেখানেও আমাদের অনেক সুযোগ আছে। সেরা ছয়টি দল চলে যাবে বিশ্বকাপে। দুটি দল আবার খেলবে অলিম্পিকে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে সেরা ছয়ে থাকার। আমাদের তো অনেক বড় স্বপ্ন, বিশ্বকাপ খেলা। সেটার জন্যই আমরা মাঠে নামব, সেটা জন্যই কাজ করব।'
এশিয়া থেকে সরাসরি ৬টি দল ও আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফ খেলে সুযোগ পেতে পারে আরও দুটি দল। এশিয়া কাপের চার সেমিফাইনালিস্ট সরাসরি সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে। কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়া চার দল দুটি প্লে-অফ ম্যাচে মুখোমুখি হবে। জয়ী দুই দল পাবে বিশ্বকাপের টিকিট আর হেরে যাওয়া দুই দল খেলবে আন্তঃমহাদেশীয় প্লে-অফে।
আগামী বছর ১-২১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া কাপে খেলবে ১২ দল। তিন গ্রুপে চারটি করে দল থাকবে। তিন গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপের পাশাপাশি তিন গ্রুপের মধ্যে সেরা দুই তৃতীয় দল খেলবে কোয়ার্টার ফাইনাল। বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ দৌড়ে থাকতে হলেব অন্তত কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে হবে।
এশিয়ান কাপে বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো খেলবে। অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ রয়েছে এশিয়ান মঞ্চে। এদের সঙ্গে লড়াই করে বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হতে দরকার পরিকল্পনা ও যথার্থ প্রস্তুতি। এ নিয়ে কিরণ বলেন, 'আগামীকাল-পরশুর ভেতরে আমি বাফুফে সভাপতির সঙ্গে কথা বলব। অবশ্যই পরিকল্পনা আছে। কারণ সুযোগ বারবার আসে না। আমাদের যেহেতু সুযোগ এসেছে আমরা সেটাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করব। আমরা অবশ্যই আরও শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলতে চাই। কারণ এশিয়ান কাপে অনেক শক্তিশালী দেশ খেলবে। জাপান, কোরিয়া, চীন, অস্ট্রেলিয়া থাকবে। তাই সেই প্রস্তুতি নিয়েই আমাদের যেতে হবে। যে কয় মাস পাব, আমি সেটাকে সেভাবে ব্যবহার করব।'
বাংলাদেশ এশিয়া কাপ খেলবে মূলত ঋতুপর্ণা চাকমার অসাধারণ জোড়া গোলে। বাফুফের নারী উইংয়ের প্রধান তাকে বাংলাদেশের মেসি আখ্যা দিয়ে বলেন, 'ঋতুপর্ণা বাংলাদেশের মেসি। হামজাও ভালো ফুটবলার কোনো সন্দেহ নেই। হামজাও আমাদের দেশের জন্য গর্বের। সামনে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের ম্যাচ আছে আমার বিশ্বাস সেখানেও হামজা ভালো করবে। ছেলেরাও এগিয়ে যাবে। ছেলে-মেয়ে দুটো দলই আমাদের, তুলনা করার কিছু নেই। কিন্তু ঋতু আমাদের মেসি, এটার বলার অপেক্ষা নেই। ও যেভাবে বল টেনে নিয়ে যায়, মেসির মতোই।'
কোচ পিটার বাটলার গতকাল বলেছেন ঋতুপর্ণা এশিয়ার শীর্ষ পর্যায়ের লিগে খেলার সামর্থ্য রাখেন। ঋতুর দেশের বাইরে ভালো লিগে খেলানো নিয়ে বাফুফের তেমন কিছু করার নেই বললেন কিরণ, 'এই যে অফারগুলো আসে এটা কিন্তু আমরা যোগাযোগ করে ওইভাবে নিয়ে আসতে পারব না। ওটা সম্ভব না। যখন অস্ট্রেলিয়াতে যাবে, ঋতুপর্ণা এই লেভেলে খেললে তখন দেখবেন ইউরোপিয়ান ক্লাব থেকে ওর কাছে অফার আসবে। বিভিন্ন দেশ থেকে অফার আসবে। খেলোয়াড়দের খেলাগুলো মানুষের দেখতে হবে। মানুষ যখন খেলা দেখবে তখন অফার আসবে।'
বৃটিশ কোচ পিটার বাটলারকে নিয়ে সাফজয়ী ফুটবলাররা আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেই সময় নারী উইংয়ের প্রধান বলেছিলেন তিনি কোচকে না রাখার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। জরুরি কমিটির সভায় বাফুফের উর্ধতন কর্মকর্তারা বাটলারের চুক্তি নবায়ন করেছেন। আজ সাফল্যের পর বাটলারকে প্রশংসায় ভাসিয়ে বলেন, 'ধন্যবাদ পিটার বাটলারকে। সে অনেক ভালো কোচ এবং সে জানে ডাগআউটে থেকে কীভাবে দলকে এগিয়ে নিতে হবে সে এই কাজটাই করেছে। তার সঙ্গে আমার অনেকবার কথা হয়েছে। আগামী দিনগুলোতেও আমরা সেভাবে এগিয়ে যাব।'
এশিয়ান কাপ নিশ্চিত করায় ঋতুপর্ণাদের পুরস্কার প্রাপ্য৷ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর নারী ফুটবলারদের জন্য দেড় কোটি টাকা ঘোষণা করেছিল বাফুফে। সাত মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও সেই টাকা এখনো দিতে পারেনি। সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে আগের প্রতিশ্রুতি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন কিরণ।
আমার বার্তা/এমই