আগামী ১০ জুন অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিট যেন সোনার হরিণ। ফুটবলপ্রেমীরা মোবাইল, ল্যাপটপ, ডেস্কটপসহ নানা ডিভাইস দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা করেও টিকিট কিনতে পারেননি। এর মধ্যেই আজ (মঙ্গলবার) বিকেলে বাফুফের টিকিটিং পার্টনার টিকিফাই তাদের ওয়েবসাইটে লিখেছে, ‘টিকিট সেলস ক্লোজড।’
ওয়েবসাইটে নিচের লে আউটে গ্যালারির বিভিন্ন অংশের টিকিট ‘বিক্রিত’ প্রদর্শন করছে। যার নিচে লেখা ‘সোল্ড আউট’, আর ওপরে ‘টিকিট সেলস ক্লোজড’ এই দুইয়ের অর্থ সাধারণ ফুটবলপ্রেমীদের আর টিকিট সংগ্রহের সুযোগ নেই। আজ বিকেলে বাফুফের কম্পিটিশন কমিটির সদস্য তাজওয়ার আউয়াল বলেন, ‘আমাদের অনলাইনে যে টিকিট ছিল সব বিক্রি হয়েছে। এখন আমরা ফরেনসিক করব। কোনো টিকিট মিসম্যাচ থাকলে সেটা দেখব। যদি কোনো টিকিট মিসিং বা অবশিষ্ট ২-১টা থাকে সেটাও আমরা অনলাইনে দেব।’
টিকিফাইয়ের কাছে সাধারণ গ্যালারি ১৮ হাজার ৩০০, ক্লাব হাউজ-ভিআইপি মিলিয়ে আরও হাজার তিনেক টিকিট থাকার কথা। গতকাল বাফুফে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল পূর্ব গ্যালারির টিকিট পরবর্তীতে বিক্রি হবে। আজ টিকিফাইয়ের ওয়েবসাইটে সেই অংশের টিকিটও সোল্ড দেখানো হয়েছে। অথচ বাফুফে পূর্ব গ্যালারি নিয়ে পরবর্তীতে আর কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। টিকিফাইয়ের কাছে থাকা সকল টিকিট বিক্রি হয়েছে এটা অবশ্য পরিষ্কার করেই বললেন তাজওয়ার আউয়াল, ‘গ্যালারির ১৮ হাজার ৩০০ আসন বিক্রি হয়েছে। ক্লাব হাউজ-২ অনলাইনে ছিল সেটাও বিক্রি হয়েছে। হসপিটালিটি বক্স রবি কিনেছে। এরকম কিছু বক্স বিক্রি হচ্ছে।’
গতকাল রাত ১০টা থেকে টিকিফাইয়ের ওয়েবসাইটে পুনরায় টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু হয়। তখন ফুটবলপ্রেমীদের ওয়েবসাইটে গেলে তিন-চার ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এরপরও অনেকে কাঙ্ক্ষিত টিকিট পাননি। এমন পরিস্থিতিতে আজ বিকেলের মধ্যে সকল টিকিট কিভাবে বিক্রি হলো এটা বেশ বড় রহস্য। এ নিয়ে টিকিফাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা কর্মকর্তা ইফতেখার ইফতির যুক্তি, ‘আজ সকালের পর বেশ স্বাভাবিকভাবেই টিকিটের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল রাতে সমর্থকদের অপেক্ষার মাত্রা বেশি ছিল। কারণ আমাদের ওয়েবসাইটের অত্যধিক ট্রাফিকের জন্য আরেকটি সাইটের সঙ্গে কোলাবোরেশন করেছিলাম।’
বাফুফে টিকিটিং পার্টনার করেছে টিকিফাইকে। সংস্থাটি গত শনিবার দুপুর ১২টায় টিকিট বিক্রির কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। রাত ৮টায় শুরুর ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই সাইবার আক্রমণের শিকার হয়। এরপর টিকিট বিক্রির কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ৪৬ ঘণ্টা পর গতকাল রাতে আবার শুরু হলেও দর্শকরা ভোগান্তির মধ্যেই ছিলেন। সেই ভোগান্তি দূর করতে আরেকটি সাইটের সঙ্গে কোলাবোরেশন করেছে টিকিফাই। সেই প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ না করে টিকিফাইয়ের কর্মকর্তা ইফতি বলেন, ‘আমরা বাফুফের অনুমতি নিয়েই করেছি। নামটি বলতে পারছি না।’
টিকিফাইয়ে টিকিট কাটতে সমর্থকদের ভোগান্তি হলেও বাফুফে টিকিফাইকে সাধুবাদই জানাচ্ছে। তাজওয়ার আউয়াল বলেন, ‘গতকাল রাতে এক সময় ৫ মিনিটে ৩০ হাজার প্লাস মানুষ টিকিট কাটতে চেয়েছে। আমি ও টিকিফাইয়ের লোকজন রাতে জাগনা (জেগে) ছিলাম। টিকিটিং কোম্পানি বেশ সাকসেসফুললি কাজ করেছে।’ প্রবাসী বাংলাদেশিরাও টিকিট কেটেছে বলে চমকপ্রদ তথ্য দিলেন তাজওয়ার, ‘অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এমনকি উগান্ডা থেকেও টিকিট কেটেছে। অনেক প্রবাসী এই ম্যাচের টিকিট কেটেছে দেশের বাইরে থেকে। হয়তো ঈদের ছুটিতে দেশে আসবে এজন্য।’
বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ম্যাচের টিকিটের চাহিদা তুঙ্গে। বাফুফে এই ম্যাচ আয়োজনের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব টিকিফাইকে দিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্নের মধ্যে পড়েছে। তাদের ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট বেশ দুর্বল ও ভোগান্তির। ফুটবলসংশ্লিষ্ট অনেকে ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতাকে দায়ী করছে এজন্য।
বাফুফে এবার প্রথমবারের মতো অনলাইন টিকিট বিক্রি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নির্বাহী কমিটির অনেক কর্মকর্তাই শঙ্কিত তারা কয়টা টিকিট পাবেন, যেখানে তাদের কাছে ফুটবলের প্রকৃত অংশীদারদের অসংখ্য আবদার। সাবেক জাতীয় ফুটবলার, ক্লাব ও ফেডারশেনের অধীনস্থ সংস্থার জন্য কিছু সংখ্যক টিকিট বরাদ্দ রয়েছে। সেটা কয়জন কীভাবে পান সেটাই দেখার বিষয়।
আমার বার্তা/এমই