দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে প্রয়োজন ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৫:৫৭ | অনলাইন সংস্করণ
এস আর হাসান চৌধুরী খালেদ:

মো. সহিদুল হক মোল্লা, তিনি একজন আলোচিত ব্যবসায়ী। এছাড়া তিনি চেয়ারম্যান, মোল্লা গ্রুপ, মোল্লা এগ্রো ও হোটেল রয়্যাল ব্লু। তিনি বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মোটর পাম্প ইমপোর্র্টস এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হিসেবে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) এর একজন সাবেক পরিচালক। তিনি মোল্লা ইমপোর্ট এক্সপোর্ট কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও মার্কেন্টাইল ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কো. লিমিটেডের পরিচালক। তিনি মোল্লা মেশিনারিজ এবং মোটর-এর স্বত্বাধিকারী। তিনি আলমডাঙ্গা জেনারেল হাসপাতালের (প্রস্তাবিত) উদ্যোক্তা। তিনি চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন হাই স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ঈদগাহ নির্মাণসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও তিনি মদিনাতুল উলুম ইয়াতিমখানা ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও বায়তুল মামুর জামে মসজিদের পরিচালক। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ও ডায়াবেটিস হাসপাতালের আজীবন সদস্য।
রাজনৈতিক দলগুলো বলছে নির্বাচন হলে দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা ফিরবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও মনে করি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন দেওয়া সরকার তাহলে একটি নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীলতায় নিয়ে আসতে পারবে। দেশে একটি রাজনৈতিক স্মৃতিশীলতা আসলে সকলে ব্রবসামুখী হবে। বিদেশী বিনিয়োগও আসবে।
এফবিসিসিআইর গত নির্বাচন কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিলো বলে আপনি মনে করেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবারের এফবিসিসিআই নির্বাচনটি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপুর্ণ ছিল। আমরা দীর্ঘ চার বছর পর নির্বাচন অংশ নিতে পেরেছি। যার ফলে আমরা দেখেছি প্রত্যেকটি জিবি মেম্বারদের মূখে হাসি, আনন্দ, উল্লাস। কেননা নির্বাচনটি ছিল আমাদের ভোটের অধিকার আদায়ের একটা নির্বাচন। ফলে আমরা ফিরে পেয়েছি আমাদের অধিকার । ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে। আর ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে তারা তাদের পছন্দমতো প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে পেরেছে। জিবি মেম্বারদের সহযোগীতায় আমিও পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হতে পেরেছিলাম। আমি চাই প্রত্যেকটি পদেরই যেন নির্বাচন হয় পরবর্তী বছর গুলোতে।
আপনি ব্যবসায়ীদের জন্য এফবিসিসিআইয়ে কি ধরণের ভূমিকা রাখবেন, এ বিষয়ে মো. সহিদুল হক মোল্লা বলেন, প্রথমে বলবো এফবিসিসিআইকে সংস্কার করে সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। গতবারও সিলেকশনের মাধ্যমে পরিচালক নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল। কিন্তু সব জিবি মেম্বারের প্রাণের দাবি নির্বাচন। সম্মানিত সদস্যদের দাবির মুখে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ সিলেকশন নয়, ইলেকশন বা নির্বাচন চেয়ে আসছিল। আমরাও নির্বাচন চেয়েছিলাম। আর এ কারণেই এবার সব ধরনের ষড়যন্ত্র, বাধা-বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্বাচনের পথ সুগম হয়েছে। নির্বাচন হওয়ার পর প্রমাণ হয়েছে জিবি মেম্বারের ভাগ্য বদলের জন্য নির্বাচনের বিকল্প কিছু ছিলোনা। তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে সেটি প্রমাণ করে দিয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে জিবি এর সমাধান করা। যেহেতু আমাদের ভোটের অধিকার আদায়ের জন্য নির্বাচনটি আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল আর ভোটাররাও তাদের ভোটের মাধ্যমে আমাদের নির্বাচিত করেছে আমাদের দায়িত্ব ছিল বেশি।
আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষ তরুণ প্রজন্ম ভূমিকা বা সম্ভাবনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে এই পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে তারুণ্যের জয়গান। তাদের সাহস, মনোবল ও উদ্দীপনায় এই পৃথিবীতে আসে পরিবর্তন। অসম্ভবকে সম্ভব করার ঝুঁকি নিতে পারে তরুণরা। তাদের কাছে অসাধ্য বলতে কিছু নেই। তারুণ্যের জয়গান বা শক্তি নিয়ে বিখ্যাত মনীষীগণ বিভিন্ন সময়ে কথা বলেছেন। আগামী দিনের ভবিষ্যৎ হচ্ছে তরুণ সমাজ। তারা আগামীর বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির আগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তরুণরাই পারবে একটি স্মাট দেশ উপহার দিতে। একটি বৈষম্য মুক্ত অর্থনীতি ও বৈষম্য মুক্ত এফবিসিসিআই গড়তে। সুতরাং তরুণদের সম্ভাবনা অনেক সুদূর প্রসারী। বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়নের কারণে তরুণদের যাত্রা খুব সহজ হবে না, যদি না তারা সঠিকভাবে নিজেদের জ্ঞান, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, ইচ্ছা, সম্ভাবনা ও সীমিত সম্পদের সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যম তৈরি করে। এই তরুণদের সামনেই আজ সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের উন্নয়ন এবং বিশ্বের বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সমস্যাগুলো দূর করার সুযোগ রয়েছে। সুযোগ আছে দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার। সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশের তরুণদের মধ্যে থেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে এবং পাচ্ছে। আর এই সুযোগ কিন্তু শুধু বাংলাদেশের তরুণদের জন্যই প্রযোজ্য নয়। বরং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের সব তরুণই এই সুযোগ সঠিকভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে ও করবে।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে কর্মবাজারে। অটোমেশন প্রযুক্তির ফলে ক্রমে শিল্প-কারখানা হয়ে পড়বে যন্ত্রনির্ভর। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আগামী ৩০ বছর জুড়ে তরুণ বা উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকবে। বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করার এটাই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বিপুল পরিমাণ মানুষ চাকরি হারালেও এর বিপরীতে সৃষ্টি হবে নতুন ধারার নানা কর্মক্ষেত্র। নতুন যুগের এসব চাকরির জন্য প্রয়োজন উঁচু স্তরের কারিগরি দক্ষতা। ডাটা সায়েন্টিস্ট, আইওটি এক্সপার্ট, রোবটিক্স ইঞ্জিনিয়ারের মতো আগামী দিনের চাকরিগুলোর জন্য সবচেয়ে বেশি উপযোগী তরুণ জনগোষ্ঠী। বাংলাদেশের সুবিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে পারলে আমাদের পক্ষেও উন্নত অর্থনীতির একটি দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব। জ্ঞানভিত্তিক এ শিল্প বিপ্লবে প্রাকৃতিক সম্পদের চেয়ে দক্ষ মানবসম্পদই হবে বেশি মূল্যবান।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনার বিষয় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পর্যটন শিল্প আজ বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পর্যটন শিল্পের বিকাশের ওপর বাংলাদেশের অনেকখানি সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে কর্মসংস্থান ঘটবে ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সফল হবে। বর্তমান বিশ্বে পর্যটন একটি অন্যতম আয়ের উৎস। বিশ্বের যে-দেশ পর্যটন শিল্পে যত উন্নতি করতে পেরেছে সে-দেশ অর্থনৈতিকভাবে তত লাভবান হয়েছে। দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, টেকনাফ, কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত, সুন্দরবন। পর্যটন শিল্পকে দ্রুত সময়ের মাধ্যমে বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ জরুরি। পর্যটন কেন্দ্রগুলোর যথাযথ উন্নয়ন করা সম্ভব হলে বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি দেশের পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করা সহজ হবে। আমরা আশা করব, পর্যটন শিল্পের অবকাঠামো ও পর্যটনের উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসবে।
আমার বার্তা/এমই