ব্যক্তিগত জীবনী: তাকুইয়া কাওয়ামুরা, একজন জাপানি অর্থনীতিবিদ। আমেরিকায় অটোমোবাইল কোম্পানিতে কাজ করাকালীন তিনি অধ্যাপক ইউনূসের বিখ্যাত গ্রন্থ "ক্রিয়েটিং আ ওয়ার্লড উইদাউট পভার্টি “ পড়ে খুবই অনুপ্রাণিত হয়ে সামাজিক ব্যবসায় যুক্ত হন । বর্তমানে তিনি সানপাওয়ার কর্পোরেশনের প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং গ্রামীণ জাপান সানপাওয়ার অটো বাংলাদেশের কো-সিইও হিসেবে কর্মরত আছেন।
জুম এ তার এ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দৈনিক আমার বার্তার কূটনৈতিক প্রতিবেদক রানা এস এম সোহেল ।
আমার বার্তাঃ হ্যালো মিস্টার কাওয়ামুরা,কেমন আছেন ?
মি.কাওয়ামুরাঃ আমি ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন?
আমার বার্তাঃ আমি ভালো আছি ।জাপানের আবহাওয়া এখন কেমন ?
মি.কাওয়ামুরাঃ জাপানের আবহাওয়া এখন উষ্ণ এবং দারুন ।
আমার বার্তাঃ আপনি এখন কোন কোন ব্যবসায় যুক্ত আছেন ?
মি. কাওয়ামুরাঃ আমি এখন অটোমোবাইল কোম্পানি সানপাওয়ার কর্পোরেশন এ প্রেসিডেন্ট পদে কর্মরত আছি । আমি এখানে প্রায় ১৫ বছর ধরে যুক্ত আছি ।
আমার বার্তাঃ আপনার ক্যারিয়্যার নিয়ে কিছু বলুন।
মি. কাওয়ানুরাঃ আমার বয়স যখন ৩৫ বছর তখন আমি সানপাওয়ার এ যোগ দেই এবং এখানে যোগ দেয়ার পূর্বে আমি একটি আমেরিকান অটোমোবাইল কোম্পানিতে নিযুক্ত ছিলাম যেটি ছিল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কোম্পানি । এছাড়াও আমি ক্যাপিটাল মার্কেটেও যুক্ত ছিলাম। ঠিক তখনই আমি ডক্টর ইউনূসের সাথে পরিচিত হই ।
আমার বার্তাঃ তাঁর সাথে কিভাবে পরিচিত হলেন ?
মি. কাওয়ানূরাঃ ফেসবুকের মাধ্যমে । তারও আগে এখন থেকে প্রায় ২০ বছর পূর্বে তাঁর একটি বই পড়ার মাধ্যমে তার সম্পর্কে জানতে পারি। আমার তখন ৩০ এর মত বয়স । তাঁর বই আমাকে খুবই অনুপ্রাণিত করে এবং আমার জীবন পাল্টে দেয় ।
আমার বার্তাঃ আপনি এখন অটোমোবাইল কোম্পানিতে যুক্ত আছেন। কোন কোন বিষয়ে আপনাকে এই ব্যবসায় যুক্ত হতে অনুপ্রাণিত করেছে ?
মি. কাওয়ামুরাঃ আমি আমেরিকাতেও দীর্ঘদিন অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রির সাথে যুক্ত ছিলাম ।এটা আমার খুব ভালো লাগার বিষয় । এজন্যই এখনো যুক্ত আছি। এটা কোইনসিডেন্ট না ।
আমার বার্তাঃ বাংলাদেশ অটোমোবাইল ইন্ডাস্ট্রিতে বিশেষ করে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি, রিকন্ডিশন্ড চাকা আমদানির বিশাল একটি বাজার রয়েছে ।কিভাবে এটিকে আরও বড় বাজার করা যায়।
মি. কাওয়ামুরাঃ ৬/৭ বছর আগে আমি প্রথম অধ্যাপক ইউনূসের সাথে দেখা করি। আমি আফ্রিকাতে রিকন্ডিশন যণ্ত্রাংশের সাথে সংযুক্ত ছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আফ্রিকার লোকজন রিকন্ডিশন গাড়ি সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখত না তারা এও জানতো না যে রিকন্ডিশন গাড়ি কি। আমি ফেব্রুয়ারি ২০১৯ এ প্রথম অধ্যাপক ইউনুস এর সাথে মিলিত হই তখন তিনি আমাকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানান ।আমি মে মাসে বাংলাদেশ সফর করি। অধ্যাপক ইউনূস গ্রামীণ কর্পোরেশনের কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে আমার সাথে কাজ করার জন্য নিয়োগ দেন ।আমি খেয়াল করলাম যে বাংলাদেশের অবস্থা আফ্রিকার মতোই । অনেকেই জানেন না যে জাপান ছাড়াও চীন থেকেও টয়োটা এবং অন্যান্য রিকন্ডিশন গাড়ি যন্ত্রাংশ আমদানি হয় । এই সুযোগে আমার গ্রামীন এবং অধ্যাপক ইউনূসের সাথে যোগসূত্র ঘটে এবং সেটা কাজের ক্ষেত্রে আরও শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে।
আমার বার্তাঃ একটু বিস্তারিত বলুন ।
মি. কাওয়ামুরাঃ অধ্যাপক ইউনুস আমার এই আইডিয়া খুব পছন্দ করেন যে গাড়িতে রিকন্ডিশন যন্ত্রাংশ ব্যবহার করার সুবিধা এই যে নতুন করে কোন যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হয় না এবং যেহেতু বাংলাদেশে প্রচুর রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয় সেহেতু এর যন্ত্রাংশ খুব সহজলভ্য। সেই সাথে এটি সহজেই গাড়ির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে ।
আমার বার্তাঃ তাহলে এই বিষয়ে আপনাদের ভীষণ কি ?
মি. কাওয়ামুরাঃ এখন ২০২৫ সাল ,আমাদের ভীশন হচ্ছে ২০৩৫ এর মধ্যে সবার একটি করে ব্যািক্তগত গাড়ি থাকবে এমনকি গ্রামের মানুষের ও এবং এর মূল্য হবে সাধ্যের মধ্যেই।
আমার বার্তাঃ বাংলাদেশে টায়ার আমদানির হার গত কয়েক বছরে বেড়েছে কিন্তু জাপান হতে সে পরিমানে বাড়েনি । এর জন্য কি কি পদক্ষেপ নেয়াযায়। এ ব্যাপারে আপনার প্রস্তাব কি?
মি. কাওয়ামুরাঃ ধন্যবাদ, দারুণ প্রশ্ন । আমরা যখন প্রথম দিকে কাজ শুরু করলাম বুঝতে পারলাম যে বাংলাদেশে রিকন্ডিশন চাকা আমদানির অনুমোদন দেয়া হয় না । কাস্টম্স গাড়ির রিকন্ডিশন পার্টস আনতে অনুমতি দেয় কিন্তু রিকন্ডিশন চাকা আনার অনুমতি দেয় না । এটা স্বাভাবিক যে প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন থাকবে যে কোনটা অনুমোদন দিবে কোনটা অনুমোদন দিবে না ।
যেহেতু আমরা রিকন্ডিশন পার্টস এবং টায়ার নিয়ে কাজ করি সেহেতু এতদিন এই বিষয়ে আমাদের কিছুই করার ছিল না। তবে মার্কেট বিবেচনা করে এ বিষয়ে আমাদের চাওয়া হল সরকার যেন রিকন্ডিশন্ড টায়ার আমদানির অনুমোদন দেয় । এটা বাংলাদেশের মার্কেটের জন্য খুব ভালো হবে বলে আমার বিশ্বাস ।
আমার বার্তাঃ রিকন্ডিশন বা সেকেন্ড হ্যান্ড চাকার গুনাগুন কেমন হবে ?
মি. কাওয়ামুরাঃ অবশ্যই ভালো হবে ,কারণ রিকন্ডিশন গাড়ি যেমন বাংলাদেশের খুব ভালো অবস্থায় পাওয়া যায় , চাকা ও ভালো হবে । তবে সে ক্ষেত্রে হয়তো ছোট কোম্পানি গুলোর চেয়ে ভালো নামী জাপানি কোম্পানিদেরকে সুযোগ দিতে হবে । এবং অবশ্যই আমরা জাপানের প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি । সুলভে গুণগত মান সম্পণ্য টায়ার সাপ্লাই দিতে পারব।
এবং আমি বিশ্বাস করি এতে বাংলাদেশে রিকন্ডিশন টায়ারের মার্কেট অনেক ভালো হবে ।
আমার বার্তাঃ আপনি কি মনে করেন গ্রামীন-জাপান সানপাওয়ার অটো সকল সুবিধা দিতে সক্ষম?
মি. কাওয়ামুরাঃ আমি মনে করি সকল সেবা দিতে আমরা সক্ষম । তবে আমরা আমাদের সক্ষমতা আরো বাড়ানোর চেষ্টা করছি এবং আশা করছি সরকারের নীতিগত সহযোগিতা এবং এই বিষয়ে সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন বাংলাদেশের জন্য সুফল বয়ে আনবে ।
আমার বার্তাঃ আপনি তো আট বছর ধরে বাংলাদেশে কাজ করছেন বা বাংলাদেশের সাথে কাজ করছে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ?
আমার বার্তাঃ আমি মূলত গ্রামীণ এর সাথে কাজ করছি । আমি দেখেছি যে গ্রামীণ তার গ্রাহকদের সাথে খুবই আন্তরিক । সব সময় গ্রামীণ চায় গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সুবিধা এবং সেবা দেওয়ার । তারা চেষ্টা করছে আরো কিভাবে জনগণের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করা যায় ।আমি তাদের সাথে কাজ করে খুবই আনন্দ পাচ্ছি । আমি খুব ইম্প্রেসড । গ্রামীণ এর সকল কর্মকর্তার কর্মচারী আন্তরিক এবং দক্ষ।
আমার বার্তাঃ আমি আসলে খুব স্পষ্ট করে জানতে চাচ্ছি যে, বাংলাদেশ সরকারের এমন কি কোন পলিসি বা সেবা আছে যা আরো ভালো করা দরকার যেন বিদেশি বিনিয়োগকারী এখানে সহজে বিনিয়োগের জন্য আসতে পারে ?
মি. কাওয়ামুরাঃ হা হা আমি রাজনীতিবিদ নই । এটা রাজনীতিবিদরা ভালো বলতে পারবেন। আমি একজন সামাজিক ব্যবসায়ী । কিন্তু আমি যা বুঝেছি আপনাদের এক্সপোর্ট- ইমপোর্ট ট্যাক্স রেট খুবই বেশি। এটি নিয়ে কিছু করা উচিত । কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স চার্জ ও খুব বেশি এছাড়াও এ বিষয়ে আনুষাঙ্গিক সকল ধরনের খরচ অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক বেশি
এটা শুধু নতুন এর ক্ষেত্রে নয় রিকন্ডিশন যন্ত্রাংশের জন্যও এর পরিমাণ অনেক বেশি | আমি বলব শুধু ট্যাক্স ই খুব ঝামেলা পূর্ণ নয় ধরুন যদি কোন কাগজপত্রে কোন প্রকার অনিচ্ছাকৃত ভুলও হয় সরকারি লোকজন আপনার সকল মালামাল বাজেয়াপ্ত করে ফেলে। যা খুবই অপ্রত্যাশিত ।সমগ্র ব্যাপারটা মনে হয় একটা আমলাতান্ত্রিক জটিল অবস্থায় পরিণত হয়েছে ।
এই ধরনের কাজ বিদেশি কোম্পানিগুলোকে এখানে আসতে প্রচন্ডভাবে বাধাগ্রস্ত করছে বলে আমি মনে করি।
তবে আমি জানি অধ্যাপক ইউনুস একজন প্রফেশনাল ব্যক্তি তিনি এর সঠিক এবং সুষ্ঠু সমাধান করবেন এবং কিভাবে এর থেকে উত্তোলন ঘটানো যায় তা তিনি ভালো করে জানেন।
আমার বার্তাঃ আপনি প্রায় অনেক বছর ধরে অধ্যাপক ইউনুসকে জানেন তার সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
মি. কাওয়ামুরাঃ তার সাথে এতদিন কাজ করে আমি এটা বুঝতে পেরেছি যে তিনি কাজ করতে ভালোবাসেন এবং তার একমাত্র চিন্তাই হচ্ছে মানুষকে সুখী করে তোলা। মানুষকে খুশি দেখলে তিনি খুব আনন্দ বোধ করেন । তিনি বাংলাদেশের সরকারের থাকুন বা সোশ্যাল বিজনেসেই থাকুন তার একমাত্র ইচ্ছাই হল মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, এটা আমি নিশ্চিত।
আমার বার্তাঃ মিস্টার তাকুইয়া কাওয়ামুরা আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
মি. কাওয়ামুরাঃ আপনাকে ও ধন্যবাদ। আগামী জুন এর শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসব তখন আশা করি আপনাদের সাথে দেখা হবে।
আমার বার্তা/রানা এস এম সোহেল/এমই