স্বাধীনতা ও একুশে পদক বেচতে চান কবি নির্মলেন্দু গুণ!
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২২, ১৪:১৩ | অনলাইন সংস্করণ
সাদেকুর রহমান :
চড়ামূল্যে গ্যাস সিলিন্ডার কেনার ক্ষতি পোষাতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ ও ‘একুশে পদক’ বেচে দেয়ার কথা ভাবছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ। চেষ্টা করে দীর্ঘদিনেও ঢাকায় নিজের বাড়িতে গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খেদভরা প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রাপ্ত খ্যাতিমান এ কবি।
গদ্য কবিতার অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। তবে নির্মলেন্দু গুণ নামেই ব্যাপক পরিচিতি তার। মূলত নারীপ্রেম ও শ্রেণি-সংগ্রামের সাথে সাথে স্বৈরাচার বিরোধিতা প্রকাশ পেয়েছে তার কবিতায়। রাজনীতি-সচেতন এ কবির জীবন রাজনীতির মতোই বন্ধুর।
১৯৭০ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হবার পর জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এ-গ্রন্থের অন্তর্ভূত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা হুলিয়া কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তার ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য।
বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদান রাখায় তাকে ১৯৮২ সালে ‘বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’, ২০০১ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ এবং ২০১৬ সালে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ দেয়া হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে গুণী এ কবি লেখেন, ‘স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্ত দেশের বিশিষ্ট গুণীজনদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে গ্যাস ও বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হোক। রেল এবং বিমানের টিকিটও তাদের জন্য সংরক্ষিত থাকলে ভালো হয়। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার প্রাপকদের এরকম সামান্য বাড়তি সুবিধা তো দেয়া যেতেই পারে। আপনারা কী বলেন?’
তিনি আরও লেখেন, ‘আমি ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে একটি ত্রিতল বাড়ি বানিয়েছি ২০১৬ সালে। বিদ্যুত-সংযোগ পেলেও আজ পর্যন্ত (অক্টোবর ২০২২) আমি বারবার চেষ্টা করেও গ্যাস-সংযোগ পাইনি। ফলে খোলা বাজার থেকে চড়ামূল্যে আমাকে তরল গ্যাস কিনতে হয়। এই ক্ষতি পোষাতে আমি পুরস্কারের সঙ্গে পাওয়া আমার স্বর্ণপদক দুটি বেচে দেয়ার কথা ভাবছি। সরকারকে এক মাস সময় দেয়া হলো।’
স্ট্যাটাসটি লেখা হয় বেলা ১১টা ৪৬ মিনিটে। আর রাত পৌণে ৮টা পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ৬৭৩ জন। এছাড়া এর মধ্যে কবির পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্য রয়েছে ২১৫টি। স্ট্যটাসটি শেয়ার করেছেন কবির ১১ জন স্বজন, ভক্ত ও শুভাকাক্সক্ষী।
স্ট্যাটাসের বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করলে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, ‘প্রত্যেকবার আমার গ্যাস কিনতে হয়, বাজারে যেতে হয়, লোক পাঠাতে হয়, তাদের ভাড়া দিতে হয়, আকস্মিকভাবে রাতে গ্যাস শেষ হয়ে গেলে, দরকার পড়লেও কিছু করতে পারছি না, চা খেতে পারছি না... সমস্যা তো হচ্ছে।’
এ জন্য ‘একুশে পদক’ ও ‘স্বাধীনতা পদক’ বেচে দেয়ার বিষয়টি সত্যি সত্যি লিখেছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো সিরিয়াসলি...এইসব লেখার মধ্যে একটা রসিকতার টান থাকেই। এর ভেতর থেকে মদ্দা কথা উঠে আসে, কিন্তু লেখার ঢং তো...সবার লেখা তো একই রকম হয় না।’
তবে রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্তদের নানা সুবিধার কথা রাষ্ট্রের সিরিয়াসলি ভাবা উচিত বলেও মনে করেন কবি।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে আছে যারা রাষ্ট্রীয় পদক প্রাপ্ত হয়, তারা রেলে গেলে একটা টিকিট সে সহজে পায়, তাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। বিমানের একটা টিকিট সে সহজে পায়। গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ লাইন এগুলো সে অন্যদের চেয়ে অগ্রাধিকার পায়।
কবি নির্মলেন্দু গুণ নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার অভিপ্রায়ে বলেন, তুমি যখন তাকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দিয়ে সাধারণ নাগরিকের থেকে আলাদা করেছোই, তাকে আলাদা সুযোগ সুবিধা দাও, এটা তো সুযোগ-সুবিধাও না, আমাদেরকে তো ফ্রি দেয়ার জন্য বলছি না, মাফ করে দাও এরকমও তো বলছি না। আমি বলছি তারা (রাষ্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্তরা) যখন নতুন বাড়িঘর তৈরি করবে, যখন যেন বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পায়। কিন্তু আজকে সাত বছর হতে চললো আমাকে বিদ্যুতের সংযোগ এখনও দেয়নি। টাকাও জমা দেয়া আছে।
এবি/ এসআর/এএম