ফের কষ্টের ফসল লবণপানিতে নষ্ট হয়ে যাবে না তো!

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ২৩:০২ | অনলাইন সংস্করণ

  বিশেষ প্রতিনিধি :

ঘুণিঝড় আইলা ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি। ফাইল ফটো।

উপকূলীয়  মানুষের কাছে ঝড় তুফান এসব কিছুর উপস্থিতে বুজতে পারলে বুকের ভিতর মোচড় মারে যা তাদেরকে খুদে খুদে কাঁদায়। উপকূলীয় মানুষের জীবন যেন সাগরের মত। আকাশে কালো মেঘ ঘনালে উপকূলবাসীর চোখেমুখেও মেঘ ঘনায়। আশঙ্কায় ফ্যাকাসে মুখ কৃষকের। লবণপানিতে কষ্টের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে না তো!

২০২০ সালে আম্ফান, ফণী। তারপর ইয়াস। একের পর এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। এখন নতুন ঘূর্ণিঝড়ের আভাস উপকূলের মানুষদের ভাবিয়ে তুলছে।  

আগের ঘূর্ণিঝড়ে সব তছনছ হয়ে যায়। সামান্য কিছু ত্রাণ ছাড়া আজও জোটেনি সরকারি ক্ষতিপূরণ। জোড়াতালি দিয়ে সামলে ওঠার চেষ্টা চলছে এখনো। ফের ঘূর্ণিঝড়ে যদি সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় তাহলে আর বাঁচার উপায় থাকবে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৩ সাল থেকে উপকূলে প্রায় প্রতিবছর একটি করে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিল ২০২১ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। তার প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উঁচু জোয়ার হয়েছিল। তাতে দুই হাজার ৯৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিষয়ক সংস্থা নাসাসহ বৈশ্বিক আবহাওয়া সংস্থাগুলো ইয়াসকে সুপার সাইক্লোন হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে ঝড়টি বাংলাদেশে আঘাত হানার আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও সুন্দরবনে আঘাত হানায় তা দুর্বল অবস্থায় উপকূলে পৌঁছায়। ফলে সিডর বা আইলার মতো উপকূলের এটি তেমন ক্ষতি করতে পারেনি।

ধানক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর কাজ করছিলেন ক্ষেতে কাজ করতে করতেই এমন আশঙ্কার কথা শোনালেন মধ্য বয়সের আমির। তাঁর কথা, ‘আতঙ্ক তো হবেই।  তাই এখন বাঁচব কি মরব আল্লাই জানেন। হুনছি ঝড় আইবে। ’

চরমোনতাজের বউবাজারের এক জেলে দেখালেন কিভাবে ইয়াসে গোটা ঘর উল্টে পড়েছে পাশের ফাঁকা জায়গায়। তারপর কোনো রকমে দড়ি দিয়ে বেঁধে সেটাকে আটকে রেখেছেন। আপাতত সেখানেই স্ত্রী, সন্তান এবং বয়স্ক বাবা-মাকে নিয়ে দিন কাটছে। গোটা পাড়ায় চারদিকেই শুধু ইয়াসের ক্ষত।

গ্রামের জেলে সুরুজ মিয়া বলেন, ‘নদীতে মাছ ধরে সংসার চালাই। আগের ঝড়ে এত ক্ষতি হলেও ত্রাণ ছাড়া সরকারিভাবে একটা কানাকড়িও জোটেনি। এবার কী হবে, ভেবে আতঙ্কে আছি। ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় যাব?’

সিত্রাং আশঙ্কায় বুকে কাঁপছে চরমোনতাজের আন্ডারচরের বাসিন্দাদেরও। দুই বছর আগে আম্ফানে পুরো বাড়ি ভেঙে যায় শরীফ শিকদারের। পেশায় জেলে শরীফ বলেন, ‘আম্ফান ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকাও জোটেনি আজও। প্রশাসন আর জনপ্রতিনিধিদের কাছে অনেক ঘুরেছি। সব জায়গাতেই শুনতে হয়েছে অপেক্ষার কথা।’