বেগুনি রঙের কাপড় পরলে মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ১৫:১৩ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক :

ছবি: ইন্টারনেট

প্রাচীন রোম ইতিহাসে নানা কারণে স্মরণীয় হয়ে আছে। রোম পুড়ে যাওয়ার সময় নিরোর বাঁশি বাজানোর ঘটনাটি সবচেয়ে বেশি চর্চায় রেখেছে রোমকে। তবে প্রাচীন রোমানদের আরও অনেক কিছু এখনো বিশ্বকে বিস্মিত করে চলেছে। রোমানরা বেগুনি রঙকে মনে করতেন আভিজাত্যের প্রতীক। এমনকি এই রঙের দাম তখন স্বর্ণের চেয়েও বেশি ছিল।

লাল ও নীলের মেশালে হয় বেগুনি। এই রঙের প্রতি নারীদের একটু দুর্বলতাও আছে। শুধু নারী দিবসেই নয় বেগুনি রঙের পোশাক পরেন নানান আয়োজনে। তবে এই বেগুনি রঙের কাপড় পরা নিষিদ্ধ ছিল প্রাচীন রোমে। একেবারে আইন করে সাধারণ মানুষকে এই রঙের কাপড় পরা থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। আইন ভঙ্গ করলে সাধারণ মানুষকে কঠিন শাস্তির মুখেও পড়তে হতো সেসময়।

রোমান সম্রাটরা এই রং সাম্রাজ্যিক মর্যাদা এবং কর্তৃত্ব বোঝাতে ব্যবহার করতেন। যে কারণে বেগুনি রং শুধু সম্রাটদের পোশাকেই শোভা পেত। সাধারণ এবং নিম্ন শ্রেণির মানুষের জন্য এই রং কাপড়ে ব্যবহার করা ছিল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। টাইরিয়ান বেগুনি রঞ্জক ফিনিশিয়ানরা তৈরি করেছিল। এটি তৈরি করা হতো হাজার হাজার সামুদ্রিক শামুক থেকে।

সামুদ্রিক এই শামুক প্রথমে অনেকদিন ধরে সীসায় সিদ্ধ করা হতো। এসময় খুবই দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতো শামুক এবং সীসার মিশ্রণে।  এরপর কারিগররা তাপের মাধ্যমে শামুক থেকে এক ধরনের রাসায়নিক তরল সংগ্রহ করতেন। এরপর বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেটি থেকে এই রং তৈরি করতেন। যে কারণে এই রঙের দাম হতো অনেক বেশি। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে ছিল তো বটেই, সেই সঙ্গে নিষিদ্ধও ছিল। এমনকি আইন অমান্য করলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেওয়া হতো।

সম্রাটদের পোশাকে ব্যবহার হতো এই রং। টাইরিয়ান বেগুনি রঙে দুইবার ঢুবানো হতো একটি পোশাক। এরপর তাতে বিভিন্ন সুতার কাজ করা হতো। এই সুতা তৈরি হতো স্বর্ণ দিয়ে। সম্রাটের অর্জনের উপর নির্ভর করতো পোশাকের ডিজাইন কেমন হবে।

তবে ১২০৪ সালের কনস্টান্টিনোপলকে বরখাস্ত করার সঙ্গে সঙ্গে টাইরিয়ান বেগুনি রঙের উপর নিষেধাজ্ঞারও অবসান ঘটে। প্রাচীন রোমানে শুধু বেগুনি রঙের পোশাকই নয় সাধারণ জনগণের জন্য বিভিন্ন ধরনের আইন কানুন চাপিয়ে দেওয়া হত। সেসময় রোমানের কোনো নারীর চুল সোনালি রাখার নিয়ম ছিল না। যাদের জন্মগত চুলের রং সোনালি তাদের কলপ বা বিভিন্ন উপায়ে সেই রং পরিবর্তন করতে হতো। কারণ সেসময় যৌনকর্মীদের চুলের রং সোনালি রাখার আইন ছিল। আসলে খুব সহজেই যেন এদের চেনা যায় তাই এই আইন তৈরি করা হয়েছিল। এতে সাধারণ নারীরা রাস্তাঘাটে সম্মানহানি থেকে রক্ষা পেতেন।

সেসময় চাইলেই বাবা তার ছেলেকে বিক্রি করে দিতে পারতেন। প্রাচীন রোমানদের আচার সংস্কৃতি বরাবরই অবাক করেছে বিশ্বকে। তেমনি এক অবাককরা আইন ছিল সেখানে। যে কোনো পিতা চাইলে তার পুত্রকে ক্রীতদাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারতেন। এমনকি পিতা চাইলে তার সন্তানকে হত্যাও করতে পারতেন। এজন্য তার কোনো শাস্তির মুখে পড়তে হবে না।

এমনই আরও অনেক অদ্ভুত আইন-কানুন তৈরি করেছিলেন রোমান সম্রাটরা। তবে ধীরে ধীরে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে রোমানদের সাম্রাজ্যে। ব্যাতিক্রম এবং বর্বর এসব আইন বন্ধ হতে থাকে একের পর এক।

এবি/ জিয়া