আল্লাহর রাসূল সা.-এর উত্তম চরিত্র

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২২, ২১:২৮ | অনলাইন সংস্করণ

  মুহাম্মদ আশিকুর রহমান

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন মহান চরিত্রের অধিকারী ও উত্তম আদর্শের জীবন্ত প্রতীক। জন্মের পর থেকেই তাঁর মাঝে বিরাজ করেছিল সর্বোত্তম চরিত্র মাধুরী ও সর্বোত্তম আদর্শ। মহৎ গুণের অধিকারী ছিলেন তিনি। বাল্যকাল থেকেই তাঁর স্বভাব ছিল কলুষমুক্ত ও কর্কশতা-অহঙ্কারমুক্ত। তিনি ছিলেন দয়া ও শ্রদ্ধাতুল্য মহামানব। তার সত্যবাদিতার কারণেই, ন্যায়নিষ্ঠতার কারণেই, আরবের সাধারণ মানুষ তাকে আখ্যা দিয়েছিলো আল আমীন। 

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সর্বযুগের সেরা মহামানব ছিলেন তাতে কারো কোনো সন্দেহ নেই। নিরপেক্ষ ঐতিহাসিকগণও অশপটে তা স্বীকার করেছেন। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চরিত্র সম্পর্কে স্বয়ং মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। সূরা আল কালাম : আয়াত ৪

 নৈতিক চরিত্রের সবোচ্চ মানের উপর আপনি অধিষ্ঠিত। রাসূল সা.-এর নৈতিক চরিত্রের মান নিয়ে মক্কার মুশরিক দেব- দেবি পূজারিদেরও কোনো অভিযোগ ছিলো না। তাঁর উত্তম চরিত্র যেমন পবিত্র ছিলো তেমনি তিনি বিশ্বস্ততার ছিলেন উত্তম আদর্শ। 

নবীজীর চরিত্রমাধুরিমা সম্পর্কে হযরত আয়েশা রা. বলেন, পবিত্র কোরআনই ছিলো তার চরিত্র। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিযার তাবৎ মানুষের সামনে শুধু কোরআনের শিক্ষাই পেশ করেননি বরং তিনি নিজেকে কোরআনের জীবন্ত প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। হিম্মত, দৃঢ়তা, সাহস, ধৈর্য, কৃতজ্ঞতা, নির্ভরতা, ভাগ্যেও উপর সন্তুষ্টি, ত্যাগ, অল্পেতুষ্টি, দানশীলতা, নম্রতা, উন্নতি ও অনুন্্নতি এবং ছোট বড় সব নৈতিক বৃত্তি পাওয়া যেত রাসূলুল্লাহর জীবনে। পূর্ণাঙ্গ নৈতিকতার সমাবেশ ঘটেছিল হযরত মুহাম্মদ সা.-এর উপর। 

হযরত আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের মতো তাড়াতাড়ি কথা বলতেন না। এক নাগাড়েও কথা বলতেন না। বরং স্পষ্ট ও ধীরস্থিরভাবে কথা বলতেন। তাঁর বৈঠকে যারা উপস্থিত থাকতো, সবাই তাঁর কথা মুখস্থ করে ফেলতো। তিরমিযি

হযরত আনাস বিন মালেক রা বলেন, কথাকে ভালোভাবে বুঝার জন্য আল্লাহর রাসূল সা. তার কথাকে তিনবার করে পুনরাবৃত্তি করতেন। বুখারি
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষের সাথে নরম ও কোমল ভাষায় কথা বলতেন। আর তারা যেন ভয় না করে সে জন্য প্রবোধ দান করতেন। কেননা অনেকেই এমন ছিলো যারা তাকে ভয় পেত। 

ইবন মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এক ব্যক্তি উপস্থিত হয়ে তাঁর সঙ্গে ভয়ে ভয়ে কথা বলতে লাগলো। অুঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ভয় করো না। কেননা আমি কোনো রাজা-বাদশাহ নই। আমি তো এক মহিলার সন্তান যিনি শুকনা মাংসা খেয়েছেন। ইবন মাজাহ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিনয় ও উদারতার প্রতি যদি তাকান, দেখবেন-কীভাবে তিনি নিজের জিহ্বার মধুরতা দিয়ে চরিত্রমাধুরিমা ফুটিয়ে তুলেছেন। 

আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আত্মীয়তার বন্ধন অুঁট রাখার প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন। মক্কার কাফেররা সম্প্রদায়ও তার প্রশংসা করতো।  আল আমিন ও সত্যবাদি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলো নবুওয়তের আগেই। 

একজন শিশু হযরত হালিমার আদরের দুলাল শিশু মুহাম্মদকে অনুসরণ করতে পারে, একজন যুবক মক্কার মেষ পালক মুহাম্মদকে অনুসরণ করতে পারে। ব্যবসায়ী বা ভ্রাম্যমান মুসাফির হলে বসরা সফরকারী সেই দলের প্রধানের অনুসরণ করতে পারে।

কয়েদি হলে, হত দরিদ্র হলে, বন্দী হলে সেই শিয়াবে আবু তলেবের কয়েদী ও মদীনার প্রভাবশালী মুহাম্মদকে অনুসরণ করতে পারে। আর যদি কেউ ধনী হয়, তাহলে মক্কার ব্যবসায়ী ও বাহরাইলেন অর্থশালী সেই মুহাম্মদের অনুসরণ করতে পারে। আর যদি আদালতের বিচারক ও পঞ্চায়েতের বিাদ মীমাংসাকারী হয়, তাহলে কাবা গৃহে সূর্যকিরণ প্রবেশের আগে প্রবেশকারী এবং হাজরে আসওয়াদের বিবাদ মীমাংসাকারীকে অনুসরণ করতে পারে। আর যদি কেউ জমি জিরাত নিয়ে সংকট সমাধান চায়, তাহলে সে যেনো বনী নাজির, খায়বার ও ফাদাকের ভূ-সম্পত্তির মালিক মুহাম্মদকে অনুসরণ করে। আর যদি ব্যক্তি ইয়াতিম হয়, তাহলে যেন সে আবদুল্লাহ ও আমেনা তনয় কলজের টুকরো মুহাম্মদকে না ভুলে। 

পরিশেষে শুধু এটুক্ইু বলবো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উত্তম ও উজ্জ্বল চরিত্র মাধুরিমা অনুসরণ ও অনুকরণ করা আমাদের জন্য আবশ্যক। আল্লাহর নবী বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় এবং আিখেরাতে আমার নিকট থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে যে অসচ্চরিত্র। মুসনাদে আহমাদ

ইসলামে উত্তম চরিত্রের মর্যাদা অনেক বড়। এ তালিম ও শিক্ষা আমরা নবীজীর কাছে থেকে পেয়েছি। আল্লাহ তাআলা হযরত আদম আ. থেকে  অসণিত নবী ও রাসূূল পাঠিয়ে উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দিয়েছেন। নবী মুহাম্মদের মাধ্যমে তা পূর্ণতা দিয়েছেন। সুতরাং আমাদের নবীজীর আদর্শ ছাড়া আমাদের আর বিকল্প কিছু নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদের উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দিন। আমীন। 

লেখক : শিক্ষার্থী,  জামিয়া আফতাবনগর, ঢাকা