রবিউস সানি : করণীয় ও বর্জনীয়

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৪০ | অনলাইন সংস্করণ

  মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৪ হিজরি সনের (২৮ অক্টোবর শুক্রবার) থেকে রবিউস সানি মাস গণনা শুরু হয়েছে। আর প্রাকৃতিক জাগতিক ও মহাজাগতিক বস্তু ও শক্তির সঙ্গে মিল রেখে সময়ের হিসাব বা ধারণা প্রকাশ করা হয়,আল্লাহ তাআলা কোরআন মাজিদে বলেন, ‘সূর্য ও চন্দ্র হিসাব নিমিত্তে।’ (সূরা-৫৫ আর রহমান : আয়াত ০৫)। মানুষ সময়কে ব্যবহারিক পর্যায়ে বছর, মাস, সপ্তাহ, দিন, দিন-রাত, প্রহর ও ঘড়ি-ঘণ্টায় বিভক্ত করে নিয়েছে। আরবি বর্ষপঞ্জি ও ইসলামি হিজরি সনের চতুর্থ মাস হলো রবিউস সানি। কেউ কেউ একে রবিউল আখির মাস বলে থাকেন। এটি রবিউল আউয়াল মাসের জোড়া মাস। ‘রবি’ অর্থ বসন্ত আর ‘আউয়াল’ অর্থ প্রথম, ‘সানি’ অর্থ দ্বিতীয়, ‘আখির’ অর্থ শেষ বা অন্য। রবিউস সানি অর্থ হলো বসন্তকালের দ্বিতীয় মাস বা অন্য বসন্ত। মহানবী (সা.)-এর দুনিয়াতে আগমনের মাস, হিজরতের মাস ও ওফাতের মাস রবিউল আউয়ালের জোড়া মাস হিসেবে রবিউস সানি মাসও বেশ তাৎপর্যম-িত।
এই মাসের মূল দিবস হিসাবে ফাতিহা ইয়াযদাহুম পালন : আগামী ৭ নভেম্বর ২০২২ সোমবার (১১ রবিউস সানি) পবিত্র ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহম পালিত হবে। ফাতিহা বলতে বোঝানো হয়, কোন মৃতের জন্য দু‘আ করা, ঈসালে সওয়াব করা। ইয়াযদাহম ফার্সি শব্দটির অর্থ একাদশ। ৫৬১ হিজরী মুতাবিক ১১৮২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ রবিউস সানী তারিখে বড়পীর শায়খ আবদুল কাদির জিলানী রহ. ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যু উপলক্ষে রবিউস সানীর ১১ তারিখে যে মৃত্যুবার্ষিকী পালন, উরস ও ফাতিহাখানী করা হয় তাকে বলা হয় ফাতিহা ইয়াযদহম। ইসলামে জন্মবার্ষিকী বা মৃত্যুবার্ষিকী পালন ও উরস করা শরী‘আত সমর্থিত অনুষ্ঠান নয়। তবে তিনি অনেক উঁচু দরের অলী ও বুযুর্গ ছিলেন। তাই এই নির্দিষ্ট তারিখের অনুসরণ না করে অন্য যে কোন দিন তাঁর জন্য দু‘আ করলে এবং জায়িয তরীকায় তাঁর জন্য ঈসালে সওয়াব করলে তাঁর রূহানী ফয়েজ ও বরকত লাভের ওসীলা হবে এবং তা সওয়াবের কাজ হবে।
রবিউস সানি মাসে কিছু ভিত্তিহীন আমল : হজরত আয়িশা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনটি আমল কখনো পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হলো ১. তাহাজ্জুদের নামাজ, ২. প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ ‘আইয়ামে বিদ’-এর রোজা পালন ও ৩. রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ। (জামিউস সগির ও সহিহ বুখারি: ১৯৭৫)। প্রতি সপ্তাহের কিছু আমলসপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতি রোযা রাখা এবং প্রতি মাসের কিছু আমল সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এসব আমল রবিউস সানীতেও রয়েছে। এগুলো ছাড়া রবিউল আখির (রবিউস সানী) মাসে শরীয়তে বিশেষ কোনো আমলের কথা বর্ণিত হয়নি; কিন্তু বার চান্দের আমল জাতীয় কিছু কিতাবে রবিউস সানী মাসের আমল হিসাবে কিছু ভিত্তিহীন নামায ও আমল আবিষ্কার করা হয়েছে। কোনো কোনোটিতে রয়েছে-‘বর্ণিত আছে যে, রবিউস সানীর নতুন চাঁদ দেখে যে ব্যক্তি মাগরীবের নামাযের পর দুই রাকাত করে মোট ৮ রাকাত নফল নামায পড়বে এবং প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার সাথে সূরা ইখলাস। কোনোটাতে আছে, “যদি কোনো ব্যক্তি এ মাসের শেষ রাতে দু’রাকাআত করে চার রাকাআত নফল নামায এ নিয়মে আদায় করে,কোনোটাতে আছে, “বর্ণিত আছে, যে এ মাসের প্রথম থেকে সূরা মুজ্জাম্মেলের আমল করবে তার খুবই উপকার হবে..” ইত্যাদি। এসব নামায ও আমল সবই ভিত্তিহীন। যেহেতু বার চান্দের আমল বিষয়ক বই লেখা হচ্ছে, ফলে আন্যান্য মাসের বিভিন্ন বানোয়াট নামাযের পদ্ধতির সাথে মিল রেখে মনগড়াভাবে কিছু নামায ও আমলের কথা রবিউস সানির আমল শিরোনামে লিখে দেওয়া হয়েছে। আর রবিউস সানীর নামায ও আমল এমন বানোয়াট বিষয় যে, জালহাদীস বিষয়ক কিতাবেও এ সম্পর্কে তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। অর্থাৎ হাদীস জালকারীরাও এ বিষয়ে তেমন কিছু জাল করেনি; বরং এগুলো বারো চান্দের আমল জাতীয় কিতাবের কিছু লেখক কর্তৃক জালকৃত। আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন হাদিসের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।
লেখক : চিকিৎসক ও প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি 
[email protected]