আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত যাঁরা

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ১৯:৩৬ | অনলাইন সংস্করণ

  মুস্তাকিম আল মুনতাজ

মানুষ-আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। আর এই শ্রেষ্ঠ জীব তথা মানুষের একমাত্র কাজ-মহান রবের হুকুম আহকাম মেনে চলা এবং তাঁর হক তথা ইবাদত বন্দেগি করা। যখনই একজন মানুষ সঠিকভাবে ঈমান, ইখলাস (সততা), ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে মহান রবের ভালোবাসা, সান্নিধ্য ও রহমতের দৃষ্টি লাভে সক্ষম হবে; পার্থিব জীবনে সে কখনই আল্লহর অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবে না। আর যখনই কেউ আল্লাহর প্রিয় হয়ে ওঠবে, তখন আল্লাহ-ই তার জন্য যথেষ্ঠ হয়ে যাবেন। এমনকি জীবন চলার পথে সকল মুসিবতে আল্লাহ-ই তাকে আগলে রাখবেন-তাঁর অদৃশ্য ক্ষমতার মাধ্যমে। এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল (সা.) বলেন, জেনে রেখো! যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোনো উপকার করতে চায়, তবু তারা আল্লাহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনই তোমার উপকার করতে পারবে না। আর যদি সব সৃষ্টি একত্র হয়ে তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায়, তবু তারা আল্লহর নির্ধারিত পরিমাণ ছাড়া কখনই তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং দপ্তরসমূহ শুকিয়ে গেছে।’ (সুনানে তিরমিজি)
বিশেষজ্ঞ আলেমরা আল্লাহ সঙ্গে থাকার দুটি অর্থ করেন। এক. সাধারণ অর্থে আল্লাহ সঙ্গে থাকা। তা হলো- আল্লাহ তাঁর জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও ক্ষমতার মাধ্যমে সব সৃষ্টির সঙ্গে থাকেন। দুই. বিশেষ অর্থে সঙ্গে থাকা। আর তা হলো- সতর্কীকরণ, সাহায্য, সহযোগিতা ও সুযোগ দানের মাধ্যমে সঙ্গে থাকা। কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী আল্লাহ তা’য়ালা নবী-রাসূল, মুমিন ও তাঁর নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের দয়া, অনুগ্রহ ও সহযোগিতার মাধ্যমে সঙ্গে থাকেন। ওহী ও ইলহামের মাধ্যমে তাদের সতর্ক করেন। তাছাড়া আরও কয়েক শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ থাকেন। নিম্নে তা আলোকপাত করা হলো-
১. আল্লাহভীরু ও দয়াশীল মানুষ: আল্লাহ তা’য়ালা মুত্তাকি ও দয়াশীল মানুষের সঙ্গে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সঙ্গে আছেন, যারা আল্লাহভীরু ও অনুগ্রহকারী।’ (সূরা নাহল-১২৮)
২. আল্লাহর পথে আহ্বানকারী : যারা মানুষকে আল্লাহর পথে আহ্বান করে আল্লাহ তা’য়ালা তাদের সঙ্গে থাকেন। আল্লাহর মহান দুই নবী মুসা ও হারুন (আ.)-কে ফেরাউনের কাছে দ্বীনি দাওয়াত নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সঙ্গে আছি, আমি শুনি ও দেখি।’ (সূরা তাহা-৪৬)
৩. বিপদগ্রস্ত মুমিন : যখন কোনো মুমিন বিপদগ্রস্থ হয় এবং তারা আল্লাহর সাহায্য কামনা করে, আল্লাহ সাহায্যের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে থাকেন। কোরআনে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, ‘যখন দুই দল পরস্পরকে দেখল, মুসার অনুসারীরা বলল, নিশ্চয়ই আমরা ধরা পড়ে যাব। মুসা বলল, কখনোই না। নিশ্চয়ই আমার প্রভু আমার সঙ্গে আছেন। তিনি আমাকে পথ দেখাবেন।’ (সূরা আশ-শুরা- ৬২)
৪. আল্লাহর পথে হিজরতকারী : আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করছিলেন, তখন আবু বকর (রা.) শত্রুর হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কার সময় সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তারা গুহায় ছিল, তখন সে তার সঙ্গীকে বলেছিল, বিষন্ন হয়ো না। আল্লাহ আমাদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা তাওবা- ৪০)
৫. ধৈর্যশীল ব্যক্তি : যারা দ্বীনের ওপর চলতে গিয়ে বিপদের শিকার হয় এবং ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সূরা বাকারা-১৫৩)
৬. পাপীদেরও সঙ্গে থাকেন : কোনো মানুষ আল্লাহর জ্ঞান ও ক্ষমতার বাইরে নয়। সুতরাং কেউ পাপ কাজ করলেও আল্লাহ তার সম্মুখে থাকেন। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তাদের সঙ্গে আছেন রাতে যখন তারা, তিনি যা পছন্দ করেন না এমন বিষয়ে পরামর্শ করে এবং তারা যা করে তা সর্বতোভাবে আল্লাহর জ্ঞানায়ত্ত।’ (সূরা নিসা-১০৮)৭. 
সাহায্যকারী : নিজের জীবনে আল্লাহ তা’য়ালার সাহায্য পাওয়ার একটি সহজ উপায় হলো, অন্যকে সাহায্য করা। মানুষকে সহযোগিতা করলে নিজের কাজেও আল্লাহ তা’য়ালার সাহায্য পাওয়া যায়। এটা অনেক বড় সওয়াবের কাজ। এর ফজিলতও অনেক। বিভিন্ন হাদিসে রাসূল (সা.) মানুষকে সাহায্য করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। এক বিখ্যাত হাদিসে এসেছে, ‘বান্দা যখন তার ভাইয়ের সাহায্যে নিরত থাকে, আল্লাহও তার সাহায্যে থাকেন। (সহীহ মুসলিম-২৬৯৯) 
আল্লাহ তা’য়ালার সাহায্য ছাড়া মানব জীবন অচল। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বান্দা আল্লাহ তা’য়ালার সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তিনি সাহায্য না করলে মানুষের পক্ষে কোনো কাজ করাই সম্ভব নয়। এজন্য সর্বদা তাঁরই কাছে সাহায্য কামনা করা বান্দার কর্তব্য। তাইতো বান্দা প্রতি নামাজে, প্রতি রাকাতে বলে, ‘আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই’। (সূরা ফাতিহা-০৪)
লেখক : আলেম ও প্রাবন্ধিক।
শিক্ষার্থী, শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজ।
[email protected]