ই-পেপার বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫, ১৮ আষাঢ় ১৪৩২

দেশ, রাষ্ট্র ও বিশ্বে ঐক্য ও সম্প্রীতিতে ইসলাম

আমার বার্তা অনলাইন:
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:১৪

ইসলামও মানবজাতিকে ঐক্য ও সম্প্রীতির শিক্ষা দেয়। ইসলামের মৌলিক আহ্বান হচ্ছে একত্ববাদের আহ্বান। এক আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল-এই পবিত্র বাণী তথা কালেমা তাইয়্যেবার মধ্যেই তাওহিদী আহ্বানের সঙ্গে ইসলামি ঐক্যের আহ্বান বিদ্যমান।

ইসলাম পূর্বকালে আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে অনৈক্য, দ্বন্দ্ব, সংঘাত-সহিংসতা, শত্রুতা ও অসম্প্রীতি বিরাজ করছিল। অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার কারণে পুরো আরব জাতি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। এ অবস্থা থেকে ইসলামই রক্ষা করেছিল। আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ঐক্য ও সম্প্রীতির ভূমিকা অনস্বীকার্য। জাতীয় ঐক্যের ওপর ইসলাম গুরুত্বারোপ করে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘তোমরা সবাই আল্লাহর রশি (কুরআন) আঁকড়ে ধরো এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ (সুরা আলে ইমরান : ১০৩)। এ আয়াতে ঐক্যের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিভেদ সৃষ্টি করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। বর্তমানে মানুষ ঐক্য, সহমর্মিতা ও মানবিকতার বদলে নানা অনৈক্য, অপরাজনীতিচর্চায় লিপ্ত। মানুষের হিংস্রতা ও সহিংসতা দিন দিন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অকারণে একজন আরেকজনের জীবন-জীবিকা, সম্পদ ও ইজ্জত, সম্মানহানি করছে। যার কোনোটাই ইসলাম সমর্থন করে না। মানুষ হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কাজ। ঐক্য, সম্প্রীতি ও মানবপ্রেমের পথ মসৃণ করার কথা ইসলাম বারবার বলে। স্থিতিশীল পরিবেশ, পরামর্শ করে কাজ সম্পন্ন ও সামাজিক সমঝোতার মনোভাব ইসলামের শিক্ষা।

ইসলাম মুসলমানদের ঐক্যের ওপর সবসময় জোর তাগিদ দিয়েছে। কথায় আছে ‘একতাই বল’। বিচ্ছিন্ন থাকা বিপজ্জনক। পরিবারের সদস্যদের একতা পরিবারকে সুসংহত করে। সমাজের লোকদের একতা সমাজকে সুন্দর ও অপরাধমুক্ত করে। কর্মীদের একতা নেতাকে শক্তিশালী করে। দেশের জনগণের একতা দেশের কল্যাণ নিশ্চিত করে। গল্পে পড়েছিলাম, এক ব্যক্তি মৃত্যুর প্রাক্কালে নিজ ছেলেদের ঐক্যের গুরুত্ব বোঝাতে দশটি বাঁশের কঞ্চি একত্রিত করে আটি বেঁধে প্রত্যেক ছেলেকে দিলেন ভাঙতে। কিন্তু পৃথকভাবে প্রত্যেকে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করেও তা ভাঙতে পারল না। এরপর আটি খুলে একটি করে কঞ্চি প্রত্যেককে দিলে তারা সবাই এক মোচড়ে যার যার কঞ্চি ভেঙে ফেলল। এরপর পিতা ছেলেদেরকে উদ্দেশ করে বললেন, তোমরা যদি ভাইয়ে ভাইয়ে ঐক্যবদ্ধ না থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও, তা হলে শত্রুরা তোমাদেরকে এভাবেই ভেঙে ফেলবে ও পরাজিত করবে। আর যদি সব ভাই ঐক্যবদ্ধ থাকো, তা হলে কেউ তোমাদের কারও সামান্য ক্ষতি করতে পারবে না।

ইসলামে ঐক্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সংঘবদ্ধভাবে জীবন পরিচালনা করা ইসলামের নির্দেশনা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা সকলে মিলে আল্লাহর রশিকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করো এবং বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমাদের প্রতি সে নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে (ইসলাম গ্রহণের পূর্বে যেমন আউস ও খাযরাজ গোত্রদ্বয়ের মাঝে দীর্ঘকাল যুদ্ধ-বিগ্রহ চলছিল)। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। ফলে তোমরা আল্লাহর মেহেরবানিতে পরস্পর ভাই ভাই হয়ে গেছো। আর তোমরা জাহান্নামের গর্তের কাছে ছিলে, (অর্থাৎ কাফের হওয়ার দরুন জাহান্নামের এত নিকটবর্তী ছিলে যে, জাহান্নামে যাওয়ার জন্য কেবল মৃত্যুরই বিলম্ব ছিল)। অতঃপর আল্লাহ তোমাদেরকে তা থেকে রক্ষা করেছেন। অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণের সৌভাগ্য দান করেছেন। এভাবে আল্লাহ স্বীয় নিদর্শনগুলো বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা সঠিক পথে থাকো’ (সুরা আলে ইমরান : ১০৩; তাফসিরে বায়ানুল কুরআন)।

এ আয়াতে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ থাকাকে আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা আরও বলেছেন, ‘তোমরা সেসব লোকদের মতো হয়ো না যাদের কাছে স্পষ্ট ও প্রকাশ্য নিদর্শন আসার পরও বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নানা ধরনের মতানৈক্য সৃষ্টি করেছে। তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি’ (সুরা আলে ইমরান : ১০৫)। পবিত্র কুরআনের সুরা সাফে উল্লেখ আছে, ‘যারা আল্লাহর রাস্তায় সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়তার সঙ্গে যুদ্ধ করে আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন’ (সুরা সাফ : ৪)।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, সালাত কায়েম করো এবং কখনো মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের দ্বীনকে টুকরো করে দিয়েছে এবং নিজেরা নানা দলে বিভক্ত হয়েছে, এদের প্রত্যেকটি দলই নিজেদের যা আছে তা নিয়েই মত্ত।’ (সুরা তাওবা : ৩১-৩২)

ঐক্য বিনষ্ট করা মহাপাপ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর সাহায্য ঐক্যবদ্ধতার সঙ্গে। যে ব্যক্তি মুসলিম ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, সে জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হলো’ (তিরমিজি : ২১৬৭)। হজরত আবু জর গিফারি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিম ঐক্য থেকে এক বিঘত বিচ্ছিন্ন হলো, সে তার গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল’ (আবু দাউদ : ৪৭৫৮)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি আনুগত্য থেকে বের হয়ে যায় এবং ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, সে জাহেলি যুগের মৃত্যুবরণ করবে। অর্থাৎ কবিরা গুনাহ নিয়ে মরবে’ (মুসলিম : ১৮৪৮)।

হজরত আবু মালেক আশআরী (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আমি তোমাদেরকে পাঁচটি জিনিসের আদেশ করছি, যেগুলো আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন-

১. আদেশ শ্রবণ করা। ২. খলিফা ও আলেমদের আনুগত্য করা। ৩. একতাবদ্ধ থাকা। ৪. হিজরত (তথা দ্বীনের প্রয়োজনে জন্মভূমি ত্যাগ করা)। ৫. আল্লাহর পথে সংগ্রাম করা। যে ব্যক্তি ঐক্যবদ্ধতা থেকে এক বিঘত পরিমাণ দূরে সরল, সে তার থেকে ইসলামের নিরাপত্তার রশি খুলে ফেলল’ (তিরমিজি : ২৮৬৩)। এসব আয়াত ও হাদিস থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, ইসলাম মুসলমানদের ঐক্যের ওপর সবসময় গুরুত্বারোপ করেছে। বিভেদ-বিচ্ছিন্নতাকে সর্বদা অপছন্দ ও অনুৎসাহিত করেছে। বরং কঠোরভাবে দমন করেছে।

ইসলাম ঐক্য ও আনুগত্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে বিধায় মুসলমানদের সামাজিক ছোট ছোট ঝটিকা সফরেও একজনকে আমির বানিয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে ও আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছে। বিভিন্ন যুগের জয়-পরাজয়ের ইতিহাসেও দেখা যায়, মুসলমানরা যখনই ঐক্যবদ্ধ থেকে আল্লাহর আনুগত্য করেছে তখনই সফলতা তাদের পদচুম্বন করেছে। মুসলিম কমিউনিটির শান্তি ও নিরাপত্তা সুসংহত হয়েছে।

তাদের একতা পৃথিবীর অন্যতম প্রভাবক শক্তি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। শুধু মুসলিমদের নিরাপত্তা নয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা পৃথিবীতে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলমানদের ঐক্য নিয়ামক ভূমিকায় থাকবে। অতএব, আজও মুসলিম বিশ্বের একতা এবং তাদের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত পৃথিবীর নির্যাতিত-নিপীড়িত মুসলিম মানবতার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে। মহান আল্লাহ তওফিক দান করুন।

আমার বার্তা/এল/এমই

হজ শেষে দেশে ফিরেছেন ৬০ হাজার ৫১৩ হাজি

পবিত্র হজ পালন শেষে এখন পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৬০ হাজার ৫১৩ জন বাংলাদেশি হাজি। সোমবার (৩০

হজ শেষে দেশে ফিরেছেন ৫৮, ৯০৬ জন হাজী,মৃত্যু ৪১

সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন শেষে দেশে ফিরেছেন ৫৮ হাজার ৯০৬ জন। শনিবার (২৮ জুন)

পবিত্র হজ শেষে এখন পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৫৬ হাজার ৭৪৮ জন

২০২৫ সালের পবিত্র হজ শেষে এখন পর্যন্ত দেশে ফিরেছেন ৫৬ হাজার ৭৪৮ জন বাংলাদেশি হাজি। শনিবার

আশুরার রোজা কয়টি ও এর ফজিলত

আশুরার সঙ্গে মিশে আছে ইসলামের ইতিহাসের তাৎপর্যময় বহু ঘটনা। আশুরা শব্দের উৎপত্তি আরবি আশারা থেকে।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নিরাপদ সড়কের দাবিতে পালংখালীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

দীঘিনালায় বিদ্যুৎ অফিস এর দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ধর্মপাশায় বিয়ের প্রলোভনে তরুণীকে ধর্ষণ, পুলিশ কনস্টেবল গ্রেফতার

ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান

সংস্কারের কথা বিএনপিই সবার আগে বলেছে: মির্জা ফখরুল

শহীদদের আত্মত্যাগে গড়া হবে নতুন বাংলাদেশ: খালেদা জিয়া

বাংলাদেশ ও বুর্কিনা ফাসোর মধ্যে সরাসরি তুলা বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব

হাতিয়ায় যৌথ অভিযানে অস্ত্র-চোরাইমালসহ আটক ৪

হালদা নদীকে নারী নির্যাতনের মতো নির্যাতন করা হয়: ফরিদা আখতার

অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে লিভ-টু-আপিলের শুনানি ১৬ জুলাই

ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ চিহ্নিত করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

জুলাই বিপ্লবের শহিদরা দেশ ও জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে: ধর্ম উপদেষ্টা

দেশে কোনো জঙ্গি নেই, আছে ছিনতাইকারী : ডিএমপি কমিশনার

বুলাওয়ে টেস্টে জিম্বাবুয়েকে ৩২৮ রানে হারালো দক্ষিণ আফ্রিকা

প্রহসনের নির্বাচনে দায় স্বীকার করলেন সাবেক সিইসি নূরুল হুদা

যেসব ইস্যুতে ঐকমত্য, সেসবেই সংস্কার হবে: মাহমুদুর রহমান মান্না

জুলাই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত না করা অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা

‘নিছক ছাত্র আন্দোলন’ বলেছিল, এখন বলছে আমাদের ছাড়া সংস্কার নয়

সারজিস-হাসনাতকে ১০০ বার ফোন দিলেও একবারও ধরেন না

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত বুধবার: সাখাওয়াত হোসেন