আজ শ্যামা পূজা ও দীপাবলি

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ০৮:২২ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক :

শ্মশান দিপাবলী - ছবি: এন আমিন রাসেল

হিন্দু সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী শ্যামা পূজা সোমবার অনুষ্ঠিত হবে। কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে সাধারণত শ্যামা পূজা বা কালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

হিন্দু পুরাণ মতে- কালী দেবী দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালী পূজা হচ্ছে- শক্তির পূজা। জগতের সব অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুন্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।

কালী পূজার দিন হিন্দু সম্প্রদায় সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্বলন করে স্বর্গীয় পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের স্মরণ করেন। এটিকে বলা হয় দীপাবলি।

দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্ময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তবে গেরস্ত বাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্য মতে আদ্যাশক্তি কালীর রূপে কালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। 

লোকবিশ্বাস অনুযায়ী- কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা মন্দির , রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির, সবুজবাগ থানাধীন শ্রী শ্রী বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, পুরান ঢাকার রাধাগোবিন্দ জিঁও ঠাকুর মন্দির, পোস্তগোলা মহাশ্মশান, তাঁতী বাজার, শাঁখারী বাজার, বাংলাবাজারসহ বিভিন্ন মণ্ডপ ও মন্দিরে শ্যামা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এদিকে ঘুর্ণিঝড়ের মধ্যেই বরিশালে চলছে উপমহাদেশের বৃহত্তম শ্মশান দিপাবলী উৎসব। বৈরি আবহাওয়াকে যেনো কোনো বাঁধাই মনে করছেন না দর্শনার্থীরা। সূর্যাস্ত হতে না হতেই প্রদীপ হাতে বৃষ্টি কাঁদা মেখে পূর্ব পুরুষের সমাধি-মন্দিরে পূজাআর্চনা করতে শ্মশানে উপস্থিত হন স্বজনেরা। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার এই সর্ববৃহৎ দীপাবলি উৎসবে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন হাজারো দর্শনার্থী।

গতকাল রবিবার বিকাল থেকে নগরের কাউনিয়ায় বরিশাল মহাশ্মশানে রোববার সন্ধ্যায় ২০০ বছরের অধিক সময় ধরে চলা এই মহাশ্মশানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যে দিয়ে উদযাপিত হয় এবারের দীপাবলি। মোমবাতি ও প্রদীপের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে পুরো মহাশ্মশান এলাকা। কাঁচা পাকা সমাধি মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার সমাধি রয়েছে  এখানে। মহাত্মা অশ্বিনী দত্তসহ বহু খ্যাতিমান মানুষ সমাধিস্থ হয়েছেন এই মহাশ্মশানের মাটিতে। 

স্বজনরা মনে করেন প্রয়াতদের সমাধিতে পূজা অর্চনা করলে তাদের আত্মা শান্তি পায়। পাশাপাশি এসময় স্বজনদের সমাধিতে কেউ মোমবাতি, প্রদীপ প্রজ্বলন করেন, আবার কেউ কেউ মৃত ব্যক্তির পছন্দের খাবার দিয়ে নৈবেদ্য সাজিয়ে স্মরণ এবং আত্মার শান্তি কামনা করেন।

প্রতিবছর এশিয়ার বহু দেশের হাজার হাজার পর্যটক যোগ দেন এই মহোৎসবে। উৎসব প্রাঙ্গনে সিসি ক্যামেরা সহ সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা ও বিশেষ নিরাপত্তা জোড়দার করতে দ্বায়িত্বরত আছেন পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা।

এ উৎসবে রাতে বরিশাল মহাশ্মশানে পরিদর্শনে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল মহা শ্মশান কমিটির পক্ষ থেকে  এসময় তাকে ফুলেল শুভেচছা জানানো হয় তারপর তিনি মহাশ্মশান ঘুরে কুশলবিনিময় করেন।

প্রায় মধ্যরাত অবদি পুন্যার্থীরা এ উৎসব উদযাপন করেন।