জাকির নায়েক কে?  বিশ্বে এত জনপ্রিয় কী কারণে হলেন

প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২২, ১২:২৩ | অনলাইন সংস্করণ

  অনলাইন ডেস্ক

জাকির আবদুল করিম নায়েক। যিনি জাকির নায়েক নামে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও পরিচিত। একাধারে একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, বক্তা ও লেখক। পেশাগত জীবনে তিনি একজন ডাক্তার। 

জন্ম, বেড়ে ওঠা, পড়াশোনা

জাকির আবদুল করিম নায়েক ১৮ অক্টোবর ১৯৬৫ সালে ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মুম্বাইয়ের সেন্ট পিটার্স হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। এরপর তিনি কিশিনচাঁদ চেল্লারাম কলেজে ভর্তি হন। তিনি মেডিসিনের ওপর টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড নাইর হসপিটালে ভর্তি হন। অতঃপর, তিনি ইউনিভার্সিটি অফ মুম্বাই থেকে ব্যাচেলর অব মেডিসিন সার্জারি বা এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন।

১৯৯১ সালে তিনি ইসলাম-ধর্ম প্রচারের কার্যক্রম শুরু করেন এবং আইআরএফ প্রতিষ্ঠা করেন। নায়েকের স্ত্রী, ফারহাত নায়েক, ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের নারীদের শাখায় কাজ করেন।


ধর্ম প্রচারে জাকির নায়েক

১৯৯১ সাল থেকে জাকির নায়েক ইসলামের দায়ী বা ইসলাম-ধর্ম প্রচারক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন এবং আইআরএফ প্রতিষ্ঠা করেন। তার স্ত্রী ফরহাতও আইআরএফ এর নারীদের শাখায় কাজ করেন। ফারিক নায়েক, রুশদা নায়েক, জিকরা নায়েক নামে জাকির নায়েকের তিন সন্তান রয়েছে।=


আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনপ্রিয়তা

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ধর্ম ও বস্তুগত বিষয়ের সঙ্গে ইসলামের তুলনামূলক ব্যাখ্যা ও আলোচনার মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান ড. জাকির নায়েক। এছাড়াও বাইবেল, বেদ-উপনিষদ প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থের রেফারেন্স, মুখস্থবিদ্যা, বিজ্ঞান ও ইতিহাসের উদ্ধৃতি দিয়ে তার আলোচনাও শ্রোতাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়।  ডা. জাকির নায়েকের অন্যতম জনপ্রিয় থিম হলো বিজ্ঞানের সূত্র দিয়ে কোরআনকে যাচাই করা। 


ধর্ম নিয়ে তুলনামূলক বিতর্ক

জাকির নায়েক ইসলাম ধর্মসম্পর্কিত অনেক বিষয়ে লেকচার দিয়েছেন ও বিতর্ক করেছেন। ২০০০ সালের ১ এপ্রিল আমেরিকার শিকাগো শহরে ‘বিজ্ঞানের আলোকে কুরআন ও বাইবেল’ শীর্ষক এক বিতর্কে খ্রিষ্টান পাদ্রি উইলিয়াম ক্যাম্পবেলকে জাকির পরাজিত করেন।

তিনি বলেন, ‘ইসলাম একটি কার্যকারণ ও যুক্তির ধর্ম এবং কুরআনে বিজ্ঞানবিষয়ক প্রায় ১০০০ আয়াত আছে।’ সেখানে তিনি পশ্চিমা কনভার্টের সংখ্যা ব্যাখ্যা করেন।

২১ জানুয়ারি ২০০৬ সালে শ্রী শ্রী রবি শঙ্করের সাথে ‘প্রধান ধর্মগ্রন্থের আলোকে হিন্দুইজম এবং ইসলাম’ বিষয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালুরু টিভিতে প্রকাশ্যে যে বিতর্ক হয় এতে তিনি ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হন।

২০০৭ সালে মুম্বাইয়ে সুমাইয়া গ্রাউন্ডে করেন ১০ দিনব্যাপী শান্তি সম্মেলন, এতে ইসলামের মহিমাকে তুলে ধরেন সব ধর্মের প্রতিনিধিদের সামনে। ২০১০ সালে তিনি এ টিভি বিতর্কে ইসলামের সত্যতা প্রমাণ করেন। অক্সফোর্ডে ভিডিও কনফারেন্সে ভাষণ দেন ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সালে। ২০১৪ সালে আফ্রিকার গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের আমন্ত্রণে তিনি সে দেশে চারটি বক্তৃতা প্রদান করেন। 

‘একমাত্র ইসলাম ধর্ম নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং নারীকে সমতা দেয়’ এ বিষয়ে জাকির ২০০৪ সালে ইসলামিক ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক অফ অস্ট্রেলিয়া এর আমন্ত্রণে মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটিতে বিতর্ক করেন। তিনি বলেন, ‘যে পশ্চিমা পোষাক মেয়েদের ধর্ষণের অন্যতম কারণ। কারণ এটা মেয়েদেরকে পর পুরুষের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলে।’

জাকির নায়েকের অনুপ্রেরণা

জাকির নায়েক ইসলাম বিষয়ক আলোচনার নতুন যেই ধারার মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছেন তা মূলত শুরু করেছিলেন তারই গুরু ভারতীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকান নাগরিক শায়খ আহমাদ দিদাত (১৯১৮-২০০৫)। ইসলামের এই প্রখ্যাত দায়ীর মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হওয়ার কথা নিজেই এক বক্তৃতায় শিকার করেন জাকির নায়েক। ১৯৮৭ সালে আহমাদ দিদাতের সঙ্গে সাক্ষাতও করেন তিনি।

আহমদ দিদাতের পর ডা: জাকির নায়েক দ্বিতীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত, যিনি ইসলাম ও মহানবী সা:-এর বিরুদ্ধে একশ্রেণীর ইহুদি; খ্রিষ্টান ও হিন্দু বুদ্ধিজীবীর আনীত নানা অভিযোগ লেকচারের মাধ্যমে খণ্ডন করে ইসলামের সর্বজনীন আদর্শ ও কালজয়ী শিক্ষা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। তার হাতে বহু অমুসলিম ইসলামে দীক্ষিত হয়েছেন।

ইসলাম সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ভাঙতে চান জাকির নায়েক

জাকির নায়েক মনে করেন, প্রত্যেক মুসলিমের উচিত ইসলাম সম্বন্ধে ভুল ধারণা গুলো ভেঙে দেওয়া এবং পশ্চিমা মিডিয়ার ইসলামের ওপর অপপ্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তাঁর কিছু নিবন্ধ ‘ইসলামিক ভয়েস’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

নিউ এজের সুশি দাস মন্তব্য করেন নায়েক ইসলামের উপদেশের এবং আত্মিক শ্রেষ্ঠত্বের উচ্চ প্রশংসা করেন এবং পশ্চিমা বিশ্বে সাধারণভাবে যে বিশ্বাস দেখা যায় তাকে ব্যাঙ্গ করেন।

জাকির নায়েক সবচে’ বেশি সফলতা পান ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামক একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার মাধ্যমে; যেটি পিস টিভি নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে থাকে বিভিন্ন ভাষায় অন্তত ১৫০টি দেশে। টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিভিন্ন ভাষায় কোরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা ও তার ইসলাম প্রচারের কৌশল স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করেন সাধারণ মুসলমানদের অনেকে। 

ধর্মীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে জাকির নায়েকের অবস্থান

বর্তমানে সোশ্যাল মাধ্যমে ইসলামী জনপ্রিয় আলোচকদের তালিকায় অন্যতম জাকির নায়েক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার ২২ মিলিয়ন (২ কোটি ২০ লাখ) ফলোয়ার রয়েছে। ইসলামপন্থী দায়ীদের মধ্যে সবার আগে তার পেজই ভেরিফাইড করে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া ইউটিউব, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, টাম্বলারের মতো ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সাইটগুলোতে ও ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। এই সাইটগুলোতে তার প্রায় ১০০ মিলিয়ন ফলোয়ার (১০ কোটি) রয়েছে।

একটি জরিপে ২০০৯ সালে তিনি ‘সমকালীন বিশ্বে সবচেয়ে ধর্মীয় প্রভাবশালী তৃতীয় ব্যক্তি’ হিসেবে পরিগণিত হন। ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১২ সালের ৫০০ সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমের তালিকায় তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

মুসলিম বিশ্বে জনপ্রিয় হলেও জাকির নায়েক তার কোন কোন বক্তব্য ও মতের জন্য সমালোচিত হয়েছেন। ২০১৬ সালে এক বক্তৃতার কারণে নিজ দেশ ভারতে তিনি তীব্র আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েন। বন্ধ করে দেওয়া হয় তার প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনসহ (আইআরএফ) ও পিস টিভি। সে বছরই ১ জুলাই ভারত ছেড়ে মালয়েশিয়ায় যান তিনি। দেশটির তৎকালীন নাজিব রাজাক সরকার তাকে মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি দেয়। এরপর থেকে তিনি মালয়েশিয়ার পুত্রজায়া শহরে বসবাস করে আসছেন।

উইকিপিডিয়া, আল জাজিরা ও অন্যান্য মিডিয়া অবলম্বনে

এবি/ওজি