মালয়েশিয়ায় প্রবাসী কর্মীদের নিয়ে হাইকমিশনের ঈদ পুনর্মিলনী

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ১৯:৩৯ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

মালয়েশিয়ায় কর্মরত শ্রমজীবী প্রবাসীদের নিয়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও আনন্দ উৎসবের আয়োজন করে কুয়ালালামপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন। শনিবার (২১ জুন) মালয়েশিয়ার পাহাং প্রদেশের কুয়ান্তানে একটি মিলনায়তনে প্রবাসী কর্মীদের চিত্তবিনোদনের উদ্দেশে এ আয়োজন করা হয়।

দুই শতাধিক শ্রমজীবী প্রবাসীদের নিয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। দূতাবাসের অন্য কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার ফার্ম মালিকদের প্রতিনিধি সাইফুল আমিরুল মোহাম্মদ বিন গাজালী, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী অলি ইসলাম, মালয়েশিয়ার অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউজ, ন্যাশনাল ব্যাংক মানি ট্রান্সফার এবং সিবিএল মানি ট্রান্সফারের প্রতিনিধিরা।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রবাসী কর্মীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান। প্রথমেই প্রবাসীদের মধ্য থেকে একজন প্রতিনিধি পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) সৈয়দ শরিফুল ইসলাম। এ ছাড়া মালিক, শ্রমিক, রেমিট্যান্স হাউজের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া হয়।

হাইকমিশনার তার বক্তব্যের শুরুতে ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ’২৪ এর জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং তাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রবাসীবান্ধব এ সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে বহুমাত্রিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রবাসীদের প্রয়োজনীয় সেবা যেমন– পাসপোর্ট-ভিসা, কনস্যুলার সেবা, কর্মসংস্থানসহ কল্যাণমূলক সকল প্রকার সেবা প্রদানে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে।

তিনি বলেন, কুয়ালালামপুর থেকে দূর প্রদেশে যারা বসবাস করছেন তাদের সুবিধার জন্য দূতাবাসের সেবা ডিজিটালাইজ করা হয়েছে ও পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হচ্ছে। ছুটির দিনগুলোতে বিভিন্ন স্থানে নিয়মিতভাবে হাইকমিশনের ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার সেবা দেওয়া হচ্ছে।

কুয়ান্তানেও পাসপোর্টসহ অন্যান্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নিয়মিত কনস্যুলার ক্যাম্প চালু আছে জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ কনস্যুলার সেবা অব্যাহত রাখা হবে বলে প্রবাসীদের আশ্বস্ত করেন মো. শামীম আহসান।

হাইকমিশনার বলেন, প্রবাসীবান্ধব এ সরকার প্রবাসীদের কল্যাণে বহুমাত্রিক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। হাইকমিশনার প্রবাসীদের ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, বৈধপথে টাকা পাঠানো হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

অন্য বক্তারা বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তাদের ধন্যবাদ জানান এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের সুনাম ধরে রাখার জন্য মালয়েশিয়ার আইন মেনে চলাসহ সচেতন থাকার আহ্বান জানান। কষ্টার্জিত অর্থের সুরক্ষা ও সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বক্তারা বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বাংলাদেশে ব‍্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার আহ্বান জানান।

মালিকপক্ষের প্রতিনিধি তার বক্তব্যে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কর্মদক্ষতার প্রশংসা করেন এবং মালয়েশিয়ার পাম অয়েলসহ অন্য ক্ষেত্রে তাদের অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানান।

মতবিনিময়কালে শ্রমিকরা তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবিদাওয়ার কথা হাইকমিশনারের কাছে তুলে ধরেন। হাইকমিশনার কর্মীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন এবং সেসব সমস্যা সমাধানে হাইকমিশন নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান।

প্রবাসীদের পক্ষ থেকে ঈদ পুনর্মিলনী আয়োজনের জন্য হাইকমিশনকে ধন্যবাদ জানানো হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য লাউঞ্জ খোলাসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য প্রবাসীরা সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

আলোচনা শেষে প্রবাসী শিল্পীদের পরিবেশনায় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে কর্মীদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন হাইকমিশনার। সবশেষে অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া শ্রমজীবী প্রবাসীদের হাতে ঈদ উপহার তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানজুড়ে প্রবাসী কর্মীদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রবাসী কর্মীরা এ আয়োজনের জন্য সন্তোষ প্রকাশ। প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রতিনিধিরা এ অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেন।

উল্লেখ্য, ঈদ পুনর্মিলনীর পাশাপাশি কুয়ান্তানে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ পাসপোর্ট ও কনস্যুলার সেবা দেওয়ার কার্যক্রমও গ্রহণ করা হয়েছে, যা রোববার পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।


আমার বার্তা/এমই