মামলা করবে দুদক

ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীর অবৈধ উপার্জনে ফাঁসছেন স্ত্রী-সন্তান

ঢাকায় একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি স্ত্রী-সন্তানের নামে ব্যাংকে গচ্ছিত অবৈধ অর্থ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে -মাহাবুব হোসেন, সচিব, দুদক

প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২২, ১৭:৪৪ | অনলাইন সংস্করণ

  বশির হোসেন খান

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) ডেমরা সারুলিয়া বিভাগের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তারের ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তিনিসহ তার স্ত্রী ফেরদৌসী সাত্তার ও ছেলে সাখাওয়াত হোসেনও অবৈধ সম্পদ অর্জনে অভিযুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে। গত ৮ সেপ্টেম্বর অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন অভিযোগ অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন। প্রকৌশলী সাত্তার বর্তমানে ডিপিডিসির বনানী এলাকার এক প্রকল্পে দায়িত্ব পালন করছেন। 

যদিও ডিপিডিসির সার্ভিস রুলে বলা আছে, কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগের অনুসন্ধান চলমান থাকলে তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে শাস্তিমূলক অন্যত্র বদলি করা হবে। অথচ আব্দুস সাত্তারকে এমন একটি প্রকল্পে বদলি করা হয়েছে যেটি দুর্নীতির আঁখড়া হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছে। দুর্নীতিতে নিমজ্জিত অফিসে দায়িত্ব দিয়ে উল্টো তাকে দুর্নীতি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে ডিপিডিসির নির্বাহী প্রকৌশলীসহ তারা কেউ তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি এবং নামে-বেনামে থাকা সম্পদের আয়ের উৎস সম্পর্কে সদুত্তর দিতে পারেননি। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেন, আমার ব্যবসার লভ্যাংশ থেকে অর্জিত সম্পদ করা হয়েছে। আমার কোন অবৈধ সম্পদ নাই। সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী একজন সরকারি কর্মকর্তার নামে ট্রেড লাইসেন্সের স্বত্তাধিকারী হতে পারেন কি-না, এ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি ডিপিডিসির এই কর্মকর্তা। তদন্ত কর্মকর্তার কাছে তিনি দাবি করেন, আমার কোন অবৈধ কোন সম্পদ নেই।

অনুসন্ধান কর্মকর্তা কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. আলতাফ হোসেন জানান, ডিপিডিসির এই কর্মকর্তা-দম্পতি-সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের আয়ের উৎসের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। পরিবারের নামে থাকা সম্পদ কমিশনের তদন্তে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ করা হবে।

জানা গেছে, প্রকৌশলী সাত্তারের নামে ঢাকার পুরানা পল্টন ৪৭ নং আরবান এপার্টমেন্টে ১৪শ’ বর্গফুটের একটি ফ্লাট এবং যাত্রাবাড়ীর বিবির বাগিচা এলাকার মিয়া বাড়ি হোল্ডিং নং-৭৬/১/এন-৪ একটি বাড়ি রয়েছে। দুদকে আসা অভিযোগের সূত্র ধরে সরেজিমনে গিয়ে দেখা যায় ৫ তলা বাড়ির নীচের এক অংশে গাড়ির গ্যারেজ রয়েছে। এছাড়াও স্ত্রী-সন্তানের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থের সন্ধান পেয়েছে কমিশনের অনুসন্ধান টিম।

যাত্রাবাড়ী বিবির বাগিচা এলাকার পাঁচ তলা বাড়ির ৪র্থ তলায় গিয়ে ভাড়াটিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয় বাড়ির মালিক কত তলায় থাকেন। তিনি বলেন, ইঞ্জিনিয়ার সাত্তার সাহেব এই বাড়িতে থাকেন না। তিনি পল্টন থাকেন। ভাড়াটিয়া জানান, ৪র্থ তলায় পাশের ফ্ল্যাটে তার ছেলে সজিব থাকেন। তার ছেলের রুম তালাবদ্ধ। পাশের ভাড়াটিয়াকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, কয়েক দিন যাবত ওই রুম তালাবদ্ধ।

দুদকের দেয়া ঠিকানায় পল্টনের ভবনে গিয়ে নিচে থাকা কেয়ার টেকারকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, প্রকৌশলী সাত্তার সাত তলার ৭/বিতে থাকেন। তার সাথে ইন্টারকমে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানতে চান আপনি কোথা থেকে আসছেন? ফকিরাপুল থেকে আসছি বললে প্রথমে তিনি নিচে আসতে রাজি হন। কিছুক্ষণ পরে ইন্টার কমে কল করে কেয়ার-টেকারকে জানান, আমি তাদের চিনি না। ফের রাতে ইন্টারকমে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে টেলিফোন রিসিভ করেন তার স্ত্রী ফেরদৌসী সাত্তার। তিনি বলেন, আমি তাকে রাতে নিচে নামতে দেই না। কোন প্রয়োজন থাকলে তার অফিসে গিয়ে কথা বলবেন। ফ্ল্যাটের মূল্য সম্পর্কে সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, এই এপার্টমেন্টে ১৪শ’ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম ২ কোটি টাকার উর্ধ্বে।

এ বিষয়ে কথা বললে দুদক সচিব মাহাবুব হোসেন বলেন, ডিপিডিসির মেগা প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান আছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে। দুর্নীতি করে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তদন্ত নিয়ে অনুসন্ধান কর্মকর্তার কোন গাফিলতির প্রমাণ পেলে তাকেও আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা এবং কৈফিয়ত চাওয়া হবে।

 

এবি/এপি