পদবাণিজ্যের অভিযোগে বিএনপির সম্মেলনে হট্টগোল
প্রকাশ : ১৯ জুন ২০২৫, ১৬:০২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

এবার মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে হট্টগোল হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদ দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইউপি সদস্যকে।
বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যায় রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়নের লুন্দী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত বিএনপির সম্মেলনে কমিটি ঘোষণা দেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়ার ওপর চড়াও হন পদবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকেরা। এ সময় ‘জাফরের দুই গালে, জুতা মারে তালে তালে’ স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধরা। পরে পুলিশের সহযোগিতায় বিক্ষুব্ধদের মধ্যে থেকে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়া।
এর আগে জেলার রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর ইউনিয়ন, বাজিতপুর ইউনিয়ন ও হারিদাসদী-মহেন্দ্রদী ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনেও হাতাহাতি, সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
বিএনপি নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা জানায়, বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে রাজৈর উপজেলার ইশিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন লুন্দী কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। পরে একটি কমিটি ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়া। এসময় সভাপতি পদে মো. জামাল খন্দকার, সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. লিয়াকত হোসেন, সহ সভাপতি মো. মুরাদ শেখ, সাধারণ সম্পাদক পদে ইশিবপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার নুরুল ইসলাম শরীফ, সাংগঠনিক সম্পাদক রিজভী আহম্মেদ সবুজ, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আতিয়ার হাওলাদারের নাম ঘোষণা করেন তিনি।
এরপরই সেখানে শুরু হয় হট্টগোল। ইশিবপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামীলীগ আমলের ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম শরীফকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করায় ক্ষিপ্ত হয় অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইউনিয়ন যুবদলের আরেক সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আলী শেখ বয়াতি ও তার সমর্থকেরা। তারা চড়াও হয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাফর আলী মিয়াকে গাড়িতে উঠতে বাধা দেন। একপর্যায়ে রাজৈর থানা পুলিশের সহযোগিতায় গাড়িতে উঠে দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. এএইচএম মিজানুর রহমান ও গাউস-উর-রহমান, রাজৈর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ওহাব আলী মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মো. জাহিদুর রহমান লেবু কাজী, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক হিমেল আল ইমরান প্রমুখ।
ইশিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদবঞ্চিত প্রার্থী সৈয়দ আলী শেখ বয়াতি অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ইশিবপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। তারপরের কমিটিতে নুরুল ইসলাম শরীফকে সাধারণ সম্পাদক করেছিলাম। কিন্তু সে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থাকাকালীন তাদের সঙ্গে মিশে মেম্বার হইছে এবং সে আওয়ামী লীগের লোক। তারপরও প্রায় এক লাখ টাকা খাইয়া নুরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করছে। মঙ্গলবার রাতে গিয়ে জাফরের বাসায় টাকা দিয়ে আসছে নুরুল। সেই তথ্যও আমার কাছে আছে।
তিনি আরও বলেন, আমি এতো ত্যাগ স্বীকার করলাম, নির্যাতনের স্বীকার হইলাম, মামলা খাইলাম কিন্তু কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই টাকার বিনিময়ে হুট করে এসেই কমিটি দিয়ে দিছে। আমরা এই কমিটি মানি না। পুনরায় কমিটি গঠনের দাবি জানাই। এই দাবি না মানলে আমরা রাস্তা ব্লক করে দেব।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইশিবপুর ইউনিয়ন বিএনপির নব-ঘোষিত সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম শরীফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, তার (জাফর আলী মিয়া) টাকা পয়সার কোনো অভাব নাই। সে পরিমাণ টাকার মালিক। তাকে টাকা দেওয়ার সাহস কারো নাই। তার কথা একটাই তারেক রহমানের নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে। আসলে যারা হতে পারবে না বা ব্যর্থ হবে, তারা পরে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপায়। কিন্তু নিজেদের ব্যর্থতা উল্লেখ করে না। আর আমি আমার বংশের কারণে সর্বোচ্চ ভোটে মেম্বার নির্বাচিত হইছি, আওয়ামী লীগের সমর্থনে হই নাই। আমি ওয়ান-এলিভেনের পর থেকে ইশিবপুর ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এখন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। কারণ দীর্ঘদিন মাঠে বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলাম।
তবে এ ব্যাপারে জানতে মাদারীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাফর আলী মিয়ার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও তার কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
আমার বার্তা/এল/এমই