সরকার ৯ মাসেও দেশকে স্থিতিশীল করতে পারেনি: গণঅধিকার পরিষদ
প্রকাশ : ২২ মে ২০২৫, ১৬:১২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বয়স ৯ মাস অতিক্রম করে ১০ মাসে পড়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকার দেশকে স্থিতিশীল করতে পারেনি বলে দাবি করেছে গণঅধিকার পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২২মে) গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১১টায় গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে সংগঠনটি। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রেখেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন। আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন। উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আব্দুজ জাহের, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মঞ্জুর মোরশেদ মামুন, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলামসহ অন্যান্যরা।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা শহরে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন সরকারের ওপর মানুষের অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। সরকার নিজ থেকে মানুষের দাবিদাওয়া পূরণের উদ্যোগ নিলে এভাবে জনভোগান্তি সৃষ্টি হয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারকে উদাসীন মনে হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন কিংবা চাপ সৃষ্টি করে দাবি আদায় করা সত্যিই দুঃখজনক।
আরও বলা হয়, আমরা লক্ষ্য করছি, সরকার তার ১০ মাসে এসেও এখনো কার্যকর সংস্কার কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। সরকার শপথ নেওয়ার পরপরই ৪টি রোডম্যাপ তথা দুর্নীতি, ব্যাংক ডাকাতি ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের রোডম্যাপ, গণহত্যার বিচারের রোডম্যাপ, ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র সংস্কারের রোডম্যাপ, নির্বাচনের রোডম্যাপ দিতে পারতো। কিন্তু সরকার লক্ষ্য উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। অনিশ্চিত যাত্রার যেমন ভবিষ্যৎ নাই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রার আমরাও কোনো ভবিষ্যৎ অনুমান করতে পারছি না।
বিশেষ করে নির্বাচনী রোডম্যাপ বা নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা সরকারের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। সরকারের দায়িত্ব গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন কোনোটাকে কোনোটার মুখোমুখি না করে তিনটাতেই সমান গুরুত্ব আরোপ করা। অন্যথায় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়লে, জাতির ভাগ্যাকাশে অন্ধকার মেঘ নেমে আসবে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরাসরি পরামর্শে ও তত্ত্বাবধানে গঠিত নির্বাচন কমিশন নিয়েও প্রশ্ন তুলছে কেউ কেউ। যখন নির্বাচন কমিশন গঠিত হয় সকল দলের মতামত নেওয়া হয়েছে। এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে নির্বাচনকে অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে নিয়ে যাওয়া। নির্বাচন বানচাল করে আরেকটি ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা কায়েম করতেই কেউ কেউ এমন দিবাস্বপ্ন দেখছে।
বরং উপদেষ্টা পরিষদ গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া হয়নি। যে কারণে উপদেষ্টা পরিষদের কতিপয় ব্যক্তি নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। ঠিক এজন্যই গণঅধিকার পরিষদ শুরু থেকেই বলে আসছে, গণঅভ্যুত্থানের সকল স্টেকহোল্ডারদের প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকারের আদলে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠন করতে হবে। কিন্তু সরকার সেটিকে গুরুত্ব দেয়নি। শুরুতে জাতীয় সরকার করা হলে আজকে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন নিয়ে এমন সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। কিন্তু একটি গোষ্ঠী ক্ষমতার লোভ সামলাতে না পেরে একটি একপাক্ষিক সরকার গঠন করেছে। যে সরকার এখনো পর্যন্ত দেশের আর্থসামাজিক দুরবস্থার উন্নয়ন তো করতেই পারেনি বরং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অস্থিরতা দূর করতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই এই উপদেষ্টা পরিষদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আরও জোরালো হবে। যা সরকারের জন্য অসম্মানের।
বিশেষ করে সরকার থেকে একজন পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দল গঠন করেছে। কিন্তু তাদের নেক্সাসের আরও দু’জন উপদেষ্টা হিসেবে রয়ে গেছেন। তারা এখন ওই দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু সরকারে থেকে দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা শপথ ভঙ্গের শামিল। ইতোমধ্যে তারা নানামুখী বিতর্কেও জড়িয়ে পড়েছে।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কর্তৃক এনসিপির প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার তথ্য উপাত্ত গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। একজন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের নেতাকে নিয়োগ প্রদানের মাধ্যমে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার পদে থাকার নৈতিকতা পুরোপুরি হারিয়েছেন। এমনকি তার এপিএসের বিরুদ্ধে দুদকে তদন্ত চলছে। কিন্তু তার মন্ত্রণালয় কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। এপিএসের দুর্নীতির দায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কোনো ভাবে এড়াতে পারেন না।
উপদেষ্টা মাহফুজ আলমও বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও নেতাদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের মাধ্যমে সমাজে ও রাজনৈতিক অঙ্গনে অনৈক্য ও অস্থিরতা তৈরি করেছে। উপদেষ্টা পদে থেকে এভাবে শপথ ভঙ্গ করার পরে তিনি কোনো ভাবেই পদে থাকতে পারেন না।
অনতিবিলম্বে এই দু’জন ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করছে গণঅধিকার পরিষদ। নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর নেতা মুহাম্মদ এজাজকে উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে অপসারণ করে গ্রেপ্তার না করা হলে যমুনা ঘেরাও করা হবে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা ফেরত পাঠানো নিয়ে সরকারের মিথ্যাচার জনগণকে বিব্রত করেছে। উল্টো ১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ দেশের মানুষকে হতাশ করেছে। এছাড়া ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে ‘পুশ ইন’ বাড়ছে। চলতি মাসে প্রায় ৩৫০ জন ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন হয়েছে। এক্ষেত্রে বিজিবির ভূমিকা আমরা জানতে চাই। মানবিক করিডর নিয়ে সরকারের নানামুখী বক্তব্য জনগণকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছে। আমাদের স্পষ্ট অবস্থান, কাউকে মানবিক করিডর দেওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম বন্দরকেও সরকার বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে চায়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত জনগণ মানবে না। দেশের মধ্যে যেসব কোম্পানির যোগ্যতা রয়েছে ও বিতর্কমুক্ত তাদের মাধ্যমেই চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনা করতে হবে। বিদেশি বিনিয়োগ নিয়েও সরকারের ধোঁয়াশা সৃষ্টি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসা অনিশ্চিত। সুতরাং রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও স্থিরতার দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
সংস্কার নিয়ে বলা হয়, এখনো পর্যন্ত সচিবালয় ও প্রশাসনের কার্যকর সংস্কার হয়নি। আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগী সচিব, কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে। ছাত্র জনতার বুকে সরাসরি গুলি চালানো পুলিশের সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়নি। শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের ডামি এমপিরা কেনো গ্রেপ্তার হচ্ছে না? কেনো বিতর্কিত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কমিশনারগণ, সচিব, ডিসি-এসপিদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা হচ্ছে না? কেনো তাদের পাসপোর্ট, সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হচ্ছে না? কেনো আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আর্থিক ব্যবস্থা রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হচ্ছে না? জনমনে এমন অসংখ্য প্রশ্ন রয়েছে। এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর ও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গৃহীত না হওয়ায় সরকারের প্রতি ধীরে ধীরে অনাস্থা বাড়ছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে না পারলে গণঅভ্যুত্থানের স্বাদ সাধারণ মানুষ ভোগ করতে পারবে না উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। গত রমজানে সবকিছুর দাম সহনশীল রাখা গেলেও রমজানের পরে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। সরকারকে এদিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে।
দাবিগুলো হলো–
১। শেখ হাসিনার রাষ্ট্র দখলের আইন প্রয়োগ করে প্রশাসক নিয়োগ চলবে না। এই অবৈধ আইনে নিয়োগকৃত প্রশাসকদের নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
২। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংলাপ শুরু করতে হবে।
৩। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে হবে।
৪। এনসিপির উপদেষ্টা ও সরকারের সকল দপ্তর থেকে এনসিপির ছাত্র প্রতিনিধিদের পদত্যাগ করতে হবে।
৫। করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।
আমার বার্তা/এমই