দীর্ঘ ১০ মাসের বেকার জীবনে আমি কোন সেলিব্রেটিকে ফোন করিনি

প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ০০:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ

  তানভীর তারেক

দীর্ঘ ১০ মাসের বেকার জীবনে আমি কোনো সেলিব্রিটিকে [ so called] ফোন করিনি..।

তারাও অনেকেই করেননি। স্বার্থের সম্পর্ক ফুরালে যা হয়! তবে এক অর্থে ভালো হয়েছে। অনেক মুােশধারীদের চিনে নিয়েছি সহজে, খুব অল্প দিনে।

 সংকেত দা আমার বড় ভাই। তিনি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব.. বিখ্যাতজন। আমার কাছে তিনি অভিভাবক। প্রাণের বড় ভাই। এই বেকার জীবনে তিনি ফোন করে খবর নিয়েছেন, আমার গুটিকতক ভালোবাসার মানুষদের সাথে তিনি সর্বাগ্রে।

সেই বেকারত্বের বিষন্ন বিকেলে দাদার ফোন

 

- কিরে , কী কাজ কর্ম করছিস?

- কিছু না, গান বাঁধি আর কাজের খোঁজ করি। 

 

এরপর হঠাৎ ফোন করে বললেন, এটিএন বাংলায় যাবি.. একটি সাপ্তাহিক প্রোগ্রাম উপস্থাপনা করবি। সব বলে এসেছি। [ আমি কিন্তু তাকে কিছুই বলিনি ! ].. বললাম ,

- আমি তো উপস্থাপনার কিছুই বুঝি না..।

তুই পারবি, শুরু কর। টাকা পয়সা ভালো দেবে। 

 

এরপর বিকল্প আয়ের সংযোগ। এটিএন বাংলায় ‘টক চার্ট’ নামের অনুষ্ঠানটিতে আমি উপস্থাপনা শুরু করি, মূলত আমার বেকারত্ব ঘোঁচানোর তাগিদে। তখন আমি মিরপুর সাড়ে দশে থাকি।

 

কম দামে ভালো বাসা। আমার বিবাহ বিচ্ছেদের পর, কঠিন টানাপোড়েনের জীবন। মামলা মোকদ্দমা... আমার দিগ্বিদিক অবস্থা ! অসহনীয় দিন-রাত। তার ক’দিন বাদেই বাবার আকষ্মিক মৃত্যু। আমি প্রায় অথৈ সাগরে ! এসব আমার একান্ত ব্যক্তিগত বেদনা। যে বেদনার অনেকখানি জানেন আমার বড় ভাই ‘হানিফ সংকেত’।

প্রায় প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে..মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামের পেছনে সংকেত দা’র অফিসে যাই। তার কাছে যেতাম মূলত জীবনের শক্তি নিতে। কোনো কোনো বেলা দুপুরের খাবার খেয়ে বের হতাম। ..এরকম অনেক স্মৃতি । এখনও কোনো কোনো বিষয়ে মেজাজ মর্জি খারাপ থাকলে বড় ভাইকে ফোন দিই। হুদাই। কোনো কারণ নাই..সেই সব ফোনের। কোণো অফিসিয়াল প্রয়োজনে না..

 

এরকম একাধিক বিশেষ কিছু কারণে এই লোকটির প্রতি আমি মোহনষ্ট করতে পারি না।

এছাড়া ইদানিং কালের বাঘা বাঘা মিডিয়া ব্যক্তিত্বগণ নিজেদের জন্মদিন উৎসবের অতি বাড়াবাড়ি এমন এক বেহায়া পর্যায়ে নিয়ে যান, যেন এই দিনটি ছাড়া নিজেকে বিজ্ঞাপিত করার কোনো সময় তিনি জীবদ্দশায় পাবেন না! 

অথচ জন্মদিন আল্লাহ প্রদত্ত একটি পূণ্যের দিন- এই দিনটির প্রতি সেই ব্যক্তির কোনো কৃতিত্ব নেই- কোনো অর্জন নেই! তাই এদিন নিয়ে বাড়াবাড়ির প্রয়োজনীয়তা আমার কাছে হাস্যকর লাগে [ একান্ত ব্যক্তিগত মত ]

অথচ দেখি কোনো কোনো বাঘাব্যক্তিত্ব নিজের জন্মদিনের ঢোল পেটাতে পেটাতে অন্যদের অস্থির করে ফেলেন।

হানিফ সংকেত - এখানেও ব্যতিক্রম। কোনো বাড়াবাড়ি নাই। চুপচাপ। এইজন্য এই মানুষটার প্রতি আমি মোহবিষ্ট হয়ে থাকি। আশেপাশের অনেক মেকী হাসি দেবার মানুষ আমাদের সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে.. সংকেত দার সাথে আমার সম্পর্কে কোনো মুখোশের ঢাকনা নেই । 

নিরেট-স্বচ্ছ-স্বার্থহীন-নির্ভেজাল।

কোনোদিন জীবনে আমি অনৈতিক অপরচুনিটি খুঁজিনি। এই মানুষটির কাছেও না। 

প্রাণের বড় ভাইটির সাথে আমার আড্ডার তুলনায় ছবি কম। এই ছবিটি বছর কয়েক আগে একটি ফটোশুটে তুলেছিলাম। ছবি তুলতে তুলতে বলেছিলেন সংকেত দা-

হ’ তুইলা রাখ। আমি মরলে.. এই ছবিটার সাথে বড় বড় স্মৃতিকথা লিখবি।

মরার পর কেন লিখবো ..দাদা। 

কৃতজ্ঞতার উচ্চারণ সবসময় সমস্বরেই করি, করতে হয়। 

আপনি বেঁচে থাকুন বড় ভাই। অনেকবছর। অনেক ব-ছ-র। 

যত বছর বাঁচলে এই সমাজের ভন্ডামির নোংরা আবর্জনা গুলো পরিস্কার করা যায়। 

আপনাকে দরকার। খু উ উ উ ব ..দরকার। 

জন্মদিনের শুভকামনা বড়ভাই।