বিশ্ববাজারে যৌথভাবে হালাল পণ্য উৎপাদন করতে পারে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ: ড. ইউনূস
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ২০:৫৩ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

বাংলাদেশে হালাল পণ্যের উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমাদের সম্পদ একত্র করতে পারলে হালাল খাতই হবে ঢাকা ও পুত্রজায়ার মধ্যে অংশীদারত্ব বৃদ্ধির সবচেয়ে স্বাভাবিক ক্ষেত্র।’
১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে দেশটিতে সফর করেন। তিন দিনের সরকারি সফর শেষে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন মুহাম্মদ ইউনূস।
সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বারনামার প্রধান সম্পাদক অরুল রাজু দুরার রাজ। সঙ্গে ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের সম্পাদক ভুন মিয়াও পিং ও বারনামা ইকোনমিক সার্ভিসের সহকারী সম্পাদক কিশো কুমারি সুসেদারাম।
সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হালাল সার্টিফিকেশন ও ব্র্যান্ডিংয়ে মালয়েশিয়ার দক্ষতা আর বাংলাদেশের পর্যাপ্ত জমি, শ্রমশক্তি ও অবকাঠামোর সমন্বয় (এ পণ্যের) উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে। আন্তর্জাতিক বাজারে হালাল পণ্যের চাহিদা মেটাতে এটি উভয় দেশকেই ভালো অবস্থানে রাখবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, হালাল বাজার শুধু বাংলাদেশ বা মালয়েশিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি বৈশ্বিক বাজার; যেখানে বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান ভোক্তা রয়েছেন।
বাজার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ফিউচার মার্কেট ইনসাইটস ইনকরপোরেটেডের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে বৈশ্বিক হালাল খাদ্যবাজারের আকার হবে ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন (দেড় লাখ কোটি) মার্কিন ডলার। এটি ২০৩৫ সালে বেড়ে দাঁড়াবে ৩ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন (৩ লাখ ৮০ হাজার কোটি) ডলারে।
বাজার পরামর্শক সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিষ্কার লেবেলযুক্ত, নৈতিকভাবে উৎপাদিত ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে যাওয়াই এ প্রবৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে এবং কাজ শুরু করার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সুযোগ–সুবিধা যাচাইয়ে মালয়েশীয় বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন অধ্যাপক ইউনূস। বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় জনশক্তি সরবরাহে সহায়তা করতে পারি।’
প্রধান উপদেষ্টা জানান, হালাল পণ্য উৎপাদনে মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন সহজে কারখানা স্থাপন এবং উৎপাদন বাড়াতে পারে, সে জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা ও সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘আমরা সব সুবিধা দেব, বিশেষ করে হালাল পণ্য উৎপাদনের জন্য শ্রমিক সরবরাহ করব। আপনারা আমাদের এলাকায় কারখানা স্থাপন করুন, যা যা প্রয়োজন আমরা দিতে পারব। এটি দ্রুত বেড়ে ওঠা একটি শিল্প। তাই আমাদের এর সুযোগ নিতে হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, বাংলাদেশের উদ্বৃত্ত তরুণ শ্রমশক্তি মালয়েশিয়ার শ্রমিকসংকট কাটাতে সহায়ক হতে পারে।
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মালয়েশিয়া যেসব পণ্য উৎপাদন করছে, সেসবের কারখানা এখানে স্থানান্তর করতে পারে। কারণ, আপনাদের শ্রমিক দরকার, আর বাংলাদেশে শ্রমিক রয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ নিজেই ১৭ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের বিশাল ভোক্তা বাজার; যেখানে সব সময় পণ্যের ক্রেতা থাকবে।’
যদিও হালাল উৎপাদন যৌথ অংশীদারত্বের এক স্বাভাবিক ক্ষেত্র; তবু পোশাকশিল্প, সেমিকন্ডাক্টর, সামুদ্রিক অর্থনীতি, ডিজিটাল সেবা, আন্তসীমান্ত বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ইউনূস।
সফরে মুহাম্মদ ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহিম মালয়েশিয়া–বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। গুরুত্বারোপ করেন বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রমশক্তি, শিক্ষা, পর্যটন ও প্রতিরক্ষা এবং পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদিতে।
মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়ার ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট ও হালাল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ ছাড়া প্রোটন হোল্ডিংস, সানওয়ে গ্রুপ, অজিয়াটা গ্রুপ বিহাড ও খাজানাহ ন্যাশনাল বিহাডের কর্মকর্তা এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও রপ্তানির গন্তব্য বাংলাদেশ। দেশটিতে মালয়েশিয়ার প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, পাম তেল ও রাসায়নিক দ্রব্য। আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হয় তৈরি পোশাক, জুতা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও অন্যান্য উৎপাদিত পণ্য।
২০২৪ সালে মালয়েশিয়া–বাংলাদেশের বাণিজ্য ৫ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মালয়েশীয় রিঙ্গিত (২ দশমিক ৯২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার)।
আমার বার্তা/এমই