চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেয়া অযৌক্তিক: আনু মুহাম্মদ
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৫, ১৮:৩৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

নিজেদের সক্ষমতা না বাড়িয়ে চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেয়া অযৌক্তিক। বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভর না হয়ে দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ দিতে হবে— এমন মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
শনিবার (২১ জুন) ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে আয়োজিত চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা কেন ঝুঁকিপূর্ণ? শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
চট্টগ্রাম বন্দরের একটি টার্মিনালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের কাছে দেওয়ার বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করতে সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানকে ‘স্বৈরতন্ত্রের ভাষা’ বলে মন্তব্য করেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনুস বাংলাদেশে পরিবর্তনের সূচনা করার দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে এসেছিলেন। অথচ তিনি বলছেন, যাঁরা প্রশ্ন উত্থাপন করছেন, তাঁদেরকে প্রতিহত করতে হবে। ঠিক স্বৈরতন্ত্রের ভাষা।
টার্মিনালটিতে জাহাজ থেকে বার্ষিক ১০ লাখ একক কনটেইনার ওঠানো-নামানোর স্বাভাবিক ক্ষমতা রয়েছে। দেশীয় অপারেটর গত বছর এই টার্মিনালে জাহাজ থেকে ১২ লাখ ৮১ হাজার কনটেইনার ওঠানো-নামানোর কাজ করেছে। এভাবে টানা ১৭ বছর ধরে দেশীয় প্রতিষ্ঠান দিয়ে চালানো হচ্ছে টার্মিনালটি।
প্রয়োজনীয় সবকিছু আছে এবং ভালোভাবে চলতে থাকা এই টার্মিনাল আওয়ামী লীগ আমলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আমলের সেই ধারাবাহিকতা এগিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম টার্মিনাল অপারেটর সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ডকে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে জিটুজি ভিত্তিতে টার্মিনালটি পরিচালনার ভার দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এর বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরে সরব বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারীরা। আন্দোলন-বিক্ষোভও করছেন তাঁরা।
আজকের আলোচনা সভার প্রধান ছিলেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রতিহত করার ঘোষণা যতই দেন না কেন, বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়ার বিরোধিতাকারীদের সংখ্যা ও কণ্ঠস্বর আরও জোড়ালো হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন মিলে একটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। এই মঞ্চ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর টার্মিনাল ইজারা দেওয়ার অস্বচ্ছ ও জাতীয় স্বার্থবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে ২৭ ও ২৮ জুন রোডমার্চ হবে।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, রামপাল, রূপপুরের মতো বড় ধরনের প্রকল্পের বিষয় কথা বলতে গেলে আগের সরকারের তল্পিবাহক লোকজনেরা বলতেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। তাঁকে দিয়ে এই দেশের কোনো ক্ষতি হবে না। তাই প্রশ্ন দরকার নেই, টেন্ডার দরকার নেই, স্বচ্ছতার দরকার নেই, কিছু দরকার নেই। শেখ হাসিনা আছেন, তিনি সবকিছু দেখবেন। ‘একটা পর্যায়ে তো শেখ হাসিনা চলেই গেলেন। মুহাম্মদ ইউনূস এলেন, তাঁর ভাষাও ঠিক একই রকম। তাঁর তল্পিবাহক যাঁরা, তাঁরাও বলছেন, উনি আছেন, কোনো অসুবিধা হবে না। কাজেই এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না, টেন্ডার করার দরকার নেই, স্বচ্ছতার দরকার নেই। এখনো কিন্তু ওই কথাটা আসছে, এই যে টেন্ডার করা লাগবে না মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে। এখনো কিন্তু টেন্ডার ছাড়াই ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া হোক।’
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলছেন, এটা পৃথিবীর সেরা। তিনি বললেই এটা বিশ্বাস করতে হবে কেন, এমন প্রশ্ন তোলেন আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, প্রশ্ন তোলা হলে উত্তর দিতে হবে। উত্তর না দিয়ে বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করার কথা বলা হচ্ছে। এই ভাষা শোনার জন্য, এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেশ চালানোর জন্য বাংলাদেশের মানুষ জীবন দেয়নি।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, কোনো দেশে সরকার যদি দায়িত্বশীল না হয়, কোনো দেশের সরকার যদি জাতীয় সক্ষমতার দিকে অমনোযোগী হয়, কোনো সরকার যদি কমিশনভোগীদের দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে সেই ধরনের বিদেশি বিনিয়োগই সেই দেশে আসে। আর কোনো দেশ যদি দায়িত্বশীল সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে বিদেশি বিনিয়োগ যদি কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনও থাকে, তাহলে ওই রকম বিদেশি বিনিয়োগই সেখানে আসে, যার একটা জবাবদিহি থাকে। চীন ও মালয়েশিয়ার বিদেশি বিনিয়োগ এবং বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের মধ্যে তুলনা করলে বিষয়টা পাওয়া যাবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন লেখক ও গবেষক মাহা মীর্জা, লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা, চট্টগ্রাম বন্দরের সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লা বাহার প্রমুখ।
আমার বার্তা/এমই