শ্রম খাত সংস্কারের অগ্রগতি বিদেশি দূতদের জানালেন লুৎফে সিদ্দিকী
প্রকাশ : ১২ মে ২০২৫, ১৯:৫৯ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী শ্রম খাত সংস্কারে গত আট মাসের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং এ খাতের সংস্কারে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার রূপরেখা তৈরি করতে শীর্ষ স্থানীয় পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন।
সোমবার (১২ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে শ্রম অধিকার বিশেষজ্ঞ ও কারিগরি বিশেষজ্ঞরাও অংশ নেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বৈঠকে আন্তর্জাতিক বিষয় সংক্রান্ত বিশেষ দূত ২০২৪ সালের জুলাইয়ের পর থেকে শ্রম খাতে সরকারের সংস্কার প্রচেষ্টার অগ্রগতি রাষ্ট্রদূতদের সামনে তুলে ধরেন।
‘গত আট মাসে আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আইএলও রোডম্যাপ কেবল একটি নির্দেশিকা নয়, এটি একটি প্রতিশ্রুতি। আমরা সময়, শক্তি এবং সদিচ্ছা বিনিয়োগ করছি যেন সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটা ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।’
তিনি শ্রম উপদেষ্টা ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা এবং নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, শ্রম উপদেষ্টা ত্রিপক্ষীয় সভায় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে দীর্ঘসময় আলোচনা করে ঐকমত্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
বৈঠকে শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা এ বছর জুলাই মাসের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছি। প্রক্রিয়াটি দ্রুত এগিয়ে চলেছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার প্রক্রিয়াটিকে ‘অভূতপূর্ব’ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে প্রচুর সংলাপ হয়েছে।’ তিনি শ্রম খাতের সংস্কারে সরকারের দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণের প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা শিগগিরই খসড়া আইনটি দেখতে এবং বাস্তব উন্নতির দিকে নজর রাখার জন্য উন্মুখ।’
মার্কিন চার্জ দ্য’ অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, ‘আমরা বর্তমান সরকারের অধীনে সংস্কার ও আইন সংশোধনের অগ্রগতিকে স্বাগত জানাই এবং অতীতে শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতাও দেখতে চাই।’
কানাডিয়ান হাইকমিশনার অজিত সিং সভায় এখন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতির প্রশংসা করে বলেন, ‘আমরা আইএলও রোডম্যাপকে সমর্থন করি। এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রেক্ষাপটে এটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় একটি শক্তিশালী শ্রম মানদণ্ড থাকা আবশ্যক। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুরুত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কাজ করায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পৌটিয়ানেন বলেন, ‘আমরা সংশোধিত শ্রম আইন প্রণয়নের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনটি এমনভাবে করা যেন তা সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে শ্রমিকদের সুরক্ষা দেয়।’
আইন সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী সভায় উপস্থিত সদস্যদের শ্রম আইন সংশোধনে অগ্রগতির বিষয়ে নিশ্চিত করে বলেন, ‘আমরা যথেষ্ট আইনি অগ্রগতি অর্জন করেছি এবং আমাদের দল অংশীজনদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।’
লুৎফে সিদ্দিকী এসময় কূটনীতিকদের শেখ হাসিনার শাসনামলের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলো সমাধানের জন্য স্বরাষ্ট্র, শ্রম এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক, আদালতে অচলাবস্থা এড়াতে উন্নত বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা এবং শ্রম পরিদর্শকের স্বল্পতার বিষয়ে অবহিত করেন।
তিনি বলেন, ‘এটি কেবল একটি অভ্যন্তরীণ সমস্যা নয়। শ্রম অধিকার এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ট্যারিফ অ্যাজেন্ডাসহ বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সম্পর্কের সঙ্গে জড়িত। আমাদের সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।’
কূটনীতিকরা যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে শ্রম খাতের সংস্কার এবং এর বাস্তবায়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে একমত পোষণ করেন। অনেকেই বাংলাদেশে চলমান সংস্কারের সমর্থনে তাদের দেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সঠিকভাবে কাজটি সম্পন্ন করার একটি অনন্য সুযোগ পেয়েছে বলে জানান লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি জানান, শ্রম আইনের সংশোধনের বিষয়টি আইএলও গভর্নিং বোর্ডে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
আমার বার্তা/এমই