অটোরিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি, উৎপাদন ও বিক্রি নিষিদ্ধের দাবি
প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫, ১৪:০২ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

আগামী ৭ দিনের মধ্যে অটোরিকশার যন্ত্রাংশ আমদানি, অটোরিকশা উৎপাদন ও বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করাসহ ৩ দফা দাবি জানিয়েছে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন (নিসআ)।
রোববার (৪ মে) শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানান নিসআর সভাপতি আব্দুল্লাহ মেহেদি দীপ্ত। দাবি না মানলে আগামী ৭ দিন পর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি কথা জানানো হয়েছে।
২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকারীদের সমন্বিত এই সংগঠনের আরও দুটি দাবি হচ্ছে— মহাসড়ক ও মূল সড়কে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ঘোষণা ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা এবং অটোরিকশা, থ্রি হুইলার চালকদের ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ বাস ও হিউম্যান হলার চালক হিসেবে পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। এবং এই ঝুঁকিপূর্ণ যান সারাদেশ থেকে সম্পূর্ণ রূপে ফেইজ-আউটের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহ মেহেদি দীপ্ত বলেন, আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দিনে দিনে চলাচলের রাস্তার অন্যতম শীর্ষ ঘাতক হয়ে উঠছে। এই যান দুর্ঘটনাপ্রবণ হওয়ার পেছনে রয়েছে একাধিক বৈজ্ঞানিক ও প্রায়োগিক কারণ। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাগুলোকে কোনো বৈজ্ঞানিক নকশা মেনে তৈরি করা হয় না, তাই এর ভরকেন্দ্র ভারসাম্যপূর্ণ না হওয়ায় সামান্য আঘাত বা বিচ্যুতিতেই এই রিকশাগুলো উল্টে যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে নিয়ে আসা যন্ত্রাংশ দিয়ে কারিগরের ইচ্ছেমতো ডিজাইনে অটোরিকশাগুলো তৈরি হওয়ার কারণে এর ব্রেকিং সিস্টেম এবং কন্ট্রোলিং সিস্টেম একপ্রকার অকার্যকর।
তিনি বলেন, অটোরিকশা চালকদের নেই কোনো প্রশিক্ষণ বা মূল্যায়ন ব্যবস্থা। যে কারণে তাদের মধ্যে দক্ষতা বা সড়ক সচেতনতা গড়ে উঠার কোনো সুযোগ ছিল না কখনোই। ফলে নিরাপত্তার শঙ্কা ঠিকঠাক অনুধাবন করতে না পারায় ঘন ঘন লেন পরিবর্তন, উল্টো পথে চালনা, যেকোনো জায়গাতে ইউ টার্ন নেওয়া ইত্যাদি ঘটছে হরহামেশাই। অপরদিকে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই অটোরিকশাগুলো স্বীকৃতিপ্রাপ্ত না হওয়ায় বা অবৈধ হওয়ায় এর জন্য নির্ধারিত নেই কোনো গতিসীমা।
নিসআর সভাপতি বলেন, নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন শুধুমাত্র সড়ক দুর্ঘটনাই নয়, সড়কে যানজটের একটা বড় কারণও এই অটোরিকশাগুলো। যত্রতত্র পার্কিং, রোড ক্যাপাসিটির চেয়ে গাড়ির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ঢাকার গড় গতি কমেছে ভয়ানক হারে। বাৎসরিক কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে ৫০ লাখ ঘণ্টা, যার অর্থনৈতিক লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী অটোরিকশার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ প্রায় এক-চতুর্থাংশ, এমনকি গেল ঈদযাত্রায় এই দুর্ঘটনার পরিমাণ ছিল ৩২ শতাংশেরও বেশি। এসব সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। আবার যত্রতত্র ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠা চার্জিং স্টেশনগুলোর কারণে তৈরি হয়েছে বিদ্যুৎ সংকট।
তিনি বলেন, এসব বাস্তবতার প্রেক্ষিতে একাধিকবার এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তার পরিকল্পনা ছিল সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। বরং ফাঁকফোকর খুঁজে গড়ে তোলা হয়েছিল রেকার বিল বাণিজ্য। যন্ত্রাংশ আমদানি, অটোরিকশা উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ না করে রাস্তায় গরিব রিকশা চালকদের ধরে ধরে উচ্ছেদের চেষ্টা বাস্তবতা বিবর্জিত নিপীড়ন ব্যতীত কিছুই নয়। অন্যদিকে এই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালকসহ বিভিন্ন মহল থেকে অটোরিকশা নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে অজুহাত হিসেবে বৃহৎ সংখ্যক চালকদের জীবিকার কথা তুলে ধরে। অথচ দেশের পরিবহন সেক্টরেই গণপরিবহন বাসের দক্ষ চালকের বেলায় প্রবল সংকট রয়েছে।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন ভুল ও স্বৈরাচারী সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে ‘রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল’, ‘টেক্সটাইল মিল’ চিনি কলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকারখানায় লাখ লাখ কর্মসংস্থান নষ্ট হয়, যেগুলো পুনরুদ্ধার নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারেরও কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এসব সংকট মোকাবিলা করে ও নষ্ট হয়ে যাওয়া কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের পদক্ষেপ গ্রহণের ইস্যু সামনে না এনে এই ঝুঁকিপূর্ণ যানকে পরোক্ষভাবে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা একদমই অবান্তর।
সংবাদ সম্মেলনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের (নিসআ) সাধারণ সম্পাদক তানজিদ মোহাম্মদ সোহরাব রেজাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
আমার বার্তা/জেএইচ