নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে বাকি সব সংস্কার কমিশনের রিপোর্টও বাতিলযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা।
শনিবার (৩ এপ্রিল) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ কথা বলেন।
উমামা ফাতেমা লেখেন, জুলাইয়ের পর মেয়েদের সাইডে বসায় দিয়ে এখন রাজনৈতিক পাড়ায় নারী অধিকার নিয়ে সালিশ বসছে দেখছি। হায়রে নাটক! সরকার তো একটা ঐকমত্য কমিশন বানালো সংস্কার নিয়ে আলাপ করার জন্য। সবগুলো সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট ঘেঁটে দেখলেই অনেক অবাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবনা চোখে পড়বে। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রয়োরিটি বেসিসে সংস্কার প্রস্তাবনার পক্ষে/বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারবে। এর মধ্যে নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্টে সর্বস্তরের নারীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রস্তাবনা ঠিক মনে না হলে মত-দ্বিমতের সুযোগ রয়েছে। সেটা না করে পুরো কমিশন বাতিলের কথা তোলা হচ্ছে কোন উদ্দেশ্যে?! আর নারীদের কতটুকু অধিকার থাকবে সেটা নিয়ে তো নারীদের তুলনায় পুরুষদের মাথাব্যথা বেশি। এই কমিশনের রিপোর্ট বাতিল হলে বাকি সব সংস্কার কমিশনের রিপোর্টও বাতিলযোগ্য।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া উমামা ফাতেমা লেখেন, নারীরা কোনো ব্যবহারের বস্তু না যে আপনার গদি সিকিউর করে রান্নাঘরে ফিরে যাবে। অভ্যুত্থানের পর দেশের ৫০ শতাংশ জনগণের অধিকারের প্রশ্ন যাদের কাছে উটকো ঝামেলা লাগে তারা আসলে কোন ধরনের রাজনীতি করতে চায় তারাই জানে। নারী সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট নিয়ে দ্বিমত থাকতে পারে কিন্তু জনসম্মুখে সভা-সমাবেশ করে যে সকল বক্তৃতা ঝাড়া হচ্ছে তাতে আপনাদের বিরোধের পরিবর্তে নারীবিদ্বেষটাই বেশি প্রকাশ পায়। স্পষ্ট করেই বলতে চাই, নারীদের অধিকার, সুযোগ সুবিধার প্রশ্ন বাদ দিয়ে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি মেইনস্ট্রিম হবে না। জুলাই অভ্যুত্থানে তা পরিষ্কারভাবেই বোঝা গেছে। স্টেজে গলাবাজি করে, চোখ রাঙানি দিয়ে নারীদের প্রান্তিক করা সম্ভব না।
জুলাই আন্দোলনে নারী সমন্বয়কদের মধ্যে যারা সামনের কাতারে ছিলেন তাদের মধ্যে উমামা ফাতেমা অন্যতম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী উমামা তখন ছাত্র ফেডারেশনের (গণসংহতি আন্দোলনের ছাত্রসংগঠন) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত বছরের অক্টোবরে সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেখানে মুখপাত্রের দায়িত্ব পান উমামা। তিনি তখন ছাত্র ফেডারেশনের পদ থেকে অব্যাহতি নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠন করলেও তাতে যোগ দেননি উমামা ফাতেমা।
গত ১৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন। সে সময় নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে কমিশনের যেসব সুপারিশ এখনই বাস্তবায়নযোগ্য তা দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
কিন্তু প্রতিবেদনটিকে ‘ইসলাম পরিপন্থি’ দাবি করে কমিশন ও প্রতিবেদন দুটিই বাতিলের দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো।
প্রতিবেদন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল মহাসমাবেশও করেছে হেফাজতে ইসলাম। এই সমাবেশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহও বক্তব্য দিয়ে নারী সংস্কার কমিশনের ইসলামবিরোধী সুপারিশ বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন। আগামী ২৩ মে একই দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
আমার বার্তা/জেএইচ