আদালতের হাজতখানার নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগ হাসানুল হক ইনুর

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৪:৫৫ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা দুর্নীতি মামলায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত তাকে গ্রেপ্তার দেখানো আবেদন মঞ্জুর করেন।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর আসামিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি করেন।

হাসানুল হক ইনুর আইনজীবী মোহাম্মদ সেলিম শুনানিতে বলেন, আদালতের হাজতখানায় নিরাপত্তাহিনতায় ভুগছেন হাসানুল হক ইনু। এদিন সকাল ৯টার দিকে তাকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নিয়ে আসা হয়। এরপর সেখানে প্রায় ৫০ জন অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে তাকে রাখা হয়। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী এসব আসামিদের মধ্যে তাকে রাখা নিরাপত্তাহীনতায় শামিল। সকল ভিআইপি আসামিদের জন্য আলাদা হাজতখানার করার দাবি জানান এই আইনজীবী।

এরপর বিচারক বলেন, আসামিদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পুলিশের। আমরাও চায় না এই সমস্ত আসামিদের আদালতে নিয়ে আসা হোক। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। কেননা বিচার ব্যবস্থা এখনও ডিজিটাল হয়নি। আমরা পুরাতন ব্যবস্থার মধ্যেই রয়ে গিয়েছি। এ কারণে তাদের প্রায়ই আদালতে নিয়ে আসা হয়।

এসময় প্রকাশ করে এই বিচারক বলেন, অনেক সংস্থার অনেক বড়বড় বিল্ডিং হয়েছে কিন্তু বিচার বিভাগের কোন উন্নতি হয়নি। মহানগর দায়রা জজ আদালতের এই বিল্ডিংও নিজের না এটি জেলা জজ আদালতের বিল্ডিং। এখানে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের জন্য টয়লেটেরই ব্যবস্থা নাই, বসাতো দূরের কথা। এজলাসের মধ্যে আইনজীবীদেরই বসার জায়গা থাকে না বিচারপ্রার্থীদের তো দূরের কথা। আওয়ামী সরকারের আমলে অনেক বড়বড় মন্ত্রী এমপিরা আইনজীবী ছিলেন আইনমন্ত্রী নিজেও এই আদালতে প্র্যাকটিস করতেন কিন্তু আইন ব্যবস্থার কোন উন্নতি করেননি।

বিচারক আরও বলেন, সেদিন সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক আদালতে আসছিলেন আমি তাকেও বলেছি, আপনারা যদি বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজেশন করতেন তাহলে আজকে তার সুফল ভোগ করতে পারতেন। কারাগার থেকে আর আদালতে আসা লাগতো না। করাগারে বসেই মামলার কার্যক্রম করতে পারতেন। আমাদেরও এত ভোগান্তি হতো না। ভিডিও কলের মাধ্যমে আসামিদের শনাক্ত করে শুনানি করতে পারতাম।

এরপর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় হাসানুল হক ইনু বলেন, আমার মামলার বিষয়বস্তু পত্র-পত্রিকায় আগেই দেখেছি। বিচারের আগেই মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে বিচার করে ফেলছে দুদক। তখন বিচারক তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, আপনাকে কথা বলার সুযোগ পরে দেওয়া হবে। আজ শুধু গ্রেপ্তার দেখানোর শুনানি। এরপর বিচারক তাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

এজলাস থেকে নামার সময় ইনু বিচারককে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আপনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এজলাসের ব্যবস্থা করায় আপনাকে ধন্যবাদ।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অসাধু উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ ৪ কোটি ৮৪ লাখ ২৫ হাজার ৫০৭ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও দখলে রাখেন হাসানুল হক ইনু।

তার ৪টি ব্যাংক হিসাবে মোট ১১ কোটি ৮৮ লাখ ১৬ হাজার ১৯ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করে মানিলন্ডারিং-এর সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তিনি অস্বাভাবিক লেনদেন করে মানিলন্ডারিং-এর সম্পৃক্ত অপরাধ 'দুর্নীতি ও ঘুষ' সংঘটনের মাধ্যমে এবং সংসদ সদস্য হিসাবে একজন পাবলিক সার্ভেন্ট ও মন্ত্রী হিসেবে সরকারের দায়িত্বশীল পদে দায়িত্বে থেকে অপরাণমূলক অসদাচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ বা সম্পত্তির অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার উদ্দেশ্যে উহার হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তর করেন, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

গত ১৬ মার্চ দুদকের সহকারী পরিচালক মো. মেহেদী মুন্সা জেবিন মামলাটি দায়ের করেন।


আমার বার্তা/এমই