মাস্কের চ্যাটবট গ্রোক থেকে ফাঁস ৩ লাখের বেশি ব্যক্তিগত চ্যাট
প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪৫ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন:

ইলন মাস্কের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক (এআই) স্টার্টআপ এক্সএআই আবারও বিতর্কের মুখে পড়েছে। কারণ ব্যবহারকারীদের অজান্তেই কোম্পানিটির তৈরি গ্রোক চ্যাটবটের লাখ লাখ চ্যাট গুগলে ফাঁস হয়ে গেছে। সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে ‘ফোর্বস’ জানায়, গ্রোক ব্যবহারকারীরা যখন ‘শেয়ার’ বোতামে ক্লিক করেন, তখন তাদের চ্যাটগুলো একটি অনন্য ইউআরএলের মাধ্যমে অনলাইনে প্রকাশিত হয়ে যায়।
এই শেয়ারকৃত সংলাপগুলোতে কোনো সতর্কতা বা গোপনীয়তাসংক্রান্ত নোটিশ না থাকায় সেগুলো গুগল, বিং এবং ডাকডাকগোর মতো সার্চ ইঞ্জিনে ইন্ডেক্সড হয়ে পড়ে। ফলে অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায় ৩ লাখ ৭০ হাজারেরও বেশি গ্রোক চ্যাট। এসব চ্যাটের মধ্যে রয়েছে সাধারণ টুইট লেখে দেওয়া থেকে শুরু করে ক্ষতিকর অনুরোধ। যেমন: ফেন্টানিল ও বোমা তৈরির কৌশল, ম্যালওয়্যার কোডিং, এমনকি মাস্ককে হত্যার বিশদ পরিকল্পনা।
ফাঁস হওয়া চ্যাটের অনেকগুলোতেই ব্যক্তিগত সংবেদনশীল তথ্যও প্রকাশ পেয়েছে। ফোর্বস এমন কিছু চ্যাট পর্যালোচনা করেছে, যেখানে ব্যবহারকারীরা নাম, ব্যক্তিগত তথ্য, পাসওয়ার্ড, এমনকি স্প্রেডশিট ও ছবি আপলোড করেছেন। আবার অনেক চ্যাটে চিকিৎসা ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার কথাও এসেছে, যা ব্যবহারকারীরা হয়তো একান্ত গোপন মনে করেছিলেন।
এ ছাড়া, কিছু চ্যাটে বর্ণবাদী ও অশ্লীল বিষয়বস্তু পাওয়া গেছে, আবার কিছু অনুরোধ সরাসরি এক্সএআইয়ের নীতিমালার পরিপন্থী, যেমন—অস্ত্র তৈরি বা ক্ষতিকর কনটেন্ট প্রচার। তার পরও গ্রোকের মাধ্যমে মাদক তৈরি, আত্মহত্যার পরিকল্পনা ও ম্যালওয়্যার তৈরির নির্দেশনা প্রকাশ পেয়েছে।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতেই চ্যাটজিপিটির কিছু চ্যাট গুগল সার্চে দেখা যাওয়ার ঘটনায় ওপেনএআই সমালোচনার মুখে পড়ে। সে সময় ত্রুটি দ্রুত ঠিক করে ওপেনএআই এবং প্রধান তথ্য নিরাপত্তা কর্মকর্তা ডেন স্টাকি এটিকে ‘সংক্ষিপ্ত সময়ের পরীক্ষা’ বলে উল্লেখ করেন, যা অনিচ্ছাকৃত তথ্য ফাঁসের ঝুঁকি তৈরি করেছিল।
সে সময় মাস্ক ওপেনএআইকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘গ্রোক ফর দ্য উইন’, অর্থাৎ ‘গ্রোকই সেরা’।
গ্রোক নিয়ে বিতর্ক ও চ্যাটজিপিটির আগের ঘটনা একসঙ্গে দেখলে বোঝা যায়, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারে এক নতুন সংকট তৈরি হচ্ছে। এখন আর শুধু ইমেইল লেখা বা কোড করার জায়গায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং এআই চ্যাটবটের সঙ্গে ব্যবহারকারীদের সম্পর্ক হয়ে উঠছে খুবই ব্যক্তিগত।
রেডিট ও ইনস্টাগ্রামে অনেকেই জানান, তারা চ্যাটজিপিটিকে ব্যবহার করেন ‘ভয়েস জার্নালিংয়ের’ জন্য। তারা এখানে তাদের সম্পর্ক, দুঃখ বা দৈনন্দিন মানসিক উদ্বেগ শেয়ার করেন। অনেকেই এটিকে একটি নিরাপদ, নিরপেক্ষ স্থান বলে মনে করেন, যেখানে বিচার ছাড়া মনের কথা বলা যায়।
তবে এই আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হওয়ায় নতুন ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান নিজেই চ্যাটজিপিটিকে থেরাপিস্ট হিসেবে ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, এসব কথোপকথনের ওপর কোনো আইনগত বা চিকিৎসাগত গোপনীয়তা প্রযোজ্য নয়।
আমার বার্তা/এমই