পাকিস্তান–তালেবান সম্পর্ক মেরামতে বেইজিংয়ের উদ্যোগ

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৪৭ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন:

কাবুলে সম্প্রতি এক বৈঠকে মুখোমুখি বসেছিলেন পাকিস্তান, আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সৌজন্যের হাসি থাকলেও আসল উদ্দেশ্য ছিল ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে আবার আস্থা ফিরিয়ে আনা। 

জানা গেছে, তিন মাসের ব্যবধানে এটিই দ্বিতীয় বৈঠক। এর আগে মে মাসে বেইজিংয়ে বৈঠক শেষে দুই প্রতিবেশী সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছিল এবং আলোচনায় উঠেছিল চীন–পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণের বিষয়।

চীনের কৌশলগত স্বার্থ ও ঝুঁকি : সিপিইসি বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

কিন্তু আফগান–পাকিস্তান অস্থিরতা সরাসরি প্রকল্পের গতিকে প্রভাবিত করছে। এক পাকিস্তানি কূটনীতিকের ভাষায়, “উন্নয়ন বা আঞ্চলিক সংযোগ সম্ভব তখনই, যখন নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।”

২০১৫ সালে ঘোষিত ৬২ বিলিয়ন ডলারের সিপিইসি পাকিস্তানের অর্থনীতিকে আমূল বদলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

কিন্তু রাজনৈতিক টানাপোড়েন, বিচ্ছিন্নতাবাদী হামলা ও চীনা নাগরিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণে প্রকল্পের অগ্রগতি ধীর হয়ে যায়। 

পাকিস্তানে এখন প্রায় বিশ হাজার চীনা নাগরিক থাকেন, যাদের নিরাপত্তা নিয়ে বেইজিং বারবার উদ্বেগ জানাচ্ছে।

আফগানিস্তানের অন্তর্ভুক্তি : চীন চাইছে, আফগানিস্তানকেও করিডরের সঙ্গে যুক্ত করতে। তবে গবেষকদের মতে, কেবল রাজনৈতিক সদিচ্ছা যথেষ্ট নয়—চীনা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো অনিশ্চিত নিরাপত্তা পরিবেশে বিনিয়োগ করতে কতটা আগ্রহী হবে, সেটিই প্রশ্ন।

ইতিহাসগতভাবে পাকিস্তান তালেবানের ঘনিষ্ঠ সমর্থক হলেও এখন ইসলামাবাদ তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করছে। 

অপরদিকে কাবুল অভিযোগ করছে পাকিস্তানের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আফগান শরণার্থীদের বহিষ্কারের বিষয়ে। 

পাকিস্তানভিত্তিক এক গবেষণা সংস্থার হিসাবে, ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে দেশটিতে সন্ত্রাসী হামলার হার পাঁচ শতাংশ বেড়েছে, আর নিহতের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।

চীনও অভিযোগ তুলেছে, পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট (ইটিআইএম) আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মুহাম্মদ ফয়সালের মতে, বেইজিং আসলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে চায়। এজন্যই তারা ইসলামাবাদ–কাবুল দ্বন্দ্ব মেটাতে সচেষ্ট।

সিঙ্গাপুরের বিশ্লেষক আবদুল বাসিতের ভাষায়, যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ত্যাগের পর দক্ষিণ এশিয়ায় চীনই হয়ে উঠেছে প্রধান শক্তি। সিপিইসির পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে পাকিস্তান–আফগানিস্তানের টানাপোড়েন কমানো ছাড়া উপায় নেই।

তবে অনেক কূটনীতিকের মতে, চীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা নিতে পারে, কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে গ্যারান্টর হিসেবে কতটা এগোবে—সেটি এখনও স্পষ্ট নয়।


আমার বার্তা/এল/এমই