দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কি পরমাণু অস্ত্র থেকে মুখ ফেরাতে পারবে?

প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১৩:৫২ | অনলাইন সংস্করণ

  আমার বার্তা অনলাইন

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ক্রমবর্ধমান সংঘাতের কারণে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বলে মনে করছেন আসিয়ান দেশগুলোর নেতারা।

তাদের মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত অঞ্চল চুক্তি (SEANWFZ) বা এসইএএনডব্লিউএফজিকে ঘিরে নতুন করে আলোচনার সময় এখনই। ১৯৯৫ সালে আসিয়ান গোষ্ঠী এই চুক্তিটি গ্রহণ করে। এই চুক্তির প্রধান লক্ষ্য—একটি দেশের সাধারণ জনগণের কল্যাণে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে, সেই দেশকে পরমাণু গণবিধ্বংসী অস্ত্রের ভয়াবহতা থেকে সুরক্ষা দেওয়া।

সরলভাবে বললে, যুদ্ধ পরিস্থিতিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা আরোপই এই চুক্তির মূল কথা। সম্প্রতি কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত আসিয়ানের বৈঠকে মালয়েশিয়া—যারা বর্তমানে সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছে—আবারও এই বিষয়টি তুলে ধরে এবং পারমাণবিক শক্তিধর দেশগুলোর কাছে এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার আহ্বান জানায়।

মালয়েশিয়া মনে করে, এখনই সময় কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার। আসিয়ান অনেকদিন ধরেই আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে এই চুক্তিতে স্বাক্ষরের অনুরোধ জানিয়ে আসছে।

সাম্প্রতিক বৈঠকের পর মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মহম্মদ হাসান জানান, চীন এই চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছে। তবে কূটনৈতিক মহলের মতে, এই সিদ্ধান্তের পেছনে চীনের কোনও কৌশলগত উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

হাসান আরও বলেন, রাশিয়াও চুক্তিতে স্বাক্ষরের বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। যদিও মস্কো এখনো এই নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি। অন্যদিকে, বৈঠকে অংশ নেওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিয়ো কুয়ালালামপুরে উপস্থিত থাকলেও, যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে কি না—তা এখনো অনিশ্চিত।

উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প আমলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করতে উদ্যোগী হয়েছে।

কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সাম্প্রতিক বক্তব্য—যেখানে তিনি বলেন, বিশ্বে বহু-মেরুকরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র—তা এই অঞ্চলগুলোর কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ফলে চীনও এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অঞ্চলটিতে কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনস-এর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া গবেষক জশোয়া কারল্যান্টজিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যখন এই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর শুল্ক চাপাচ্ছে এবং চীন থেকে তাদের আলাদা করতে চাইছে, তখন চীন নিজেকে আসিয়ানের কাছে বিশ্বস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে তুলে ধরতে চাইছে।

তার মতে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পরমাণু যুদ্ধের সম্ভাবনা খুবই কম—এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই চীন চুক্তিতে স্বাক্ষরের আগ্রহ দেখাচ্ছে, কারণ এতে তাদের তেমন কিছু হারানোর নেই।

তবে চীনের এই অবস্থান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ওয়ার কলেজ-এর অধ্যাপক জাকারি আবুজা। তিনি মনে করেন, চীন হয়তো চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে, তবে বাস্তব ক্ষেত্রে তা মানবে না।

কারণ, চুক্তি অনুযায়ী কোনও স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র তার জলসীমা বা ভূখণ্ডে পরমাণু অস্ত্র সংরক্ষণ বা মোতায়েন করতে পারবে না। অথচ মার্কিন সেনাবাহিনী দাবি করেছে, গত বছর দক্ষিণ চীন সাগরে চীন একটি পরমাণু রিয়্যাক্টর বসানোর উদ্যোগ নেয়।

পেন্টাগনের মতে, চীনের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার দিন দিন বাড়ছে।

অধ্যাপক আবুজা বলেন, আসিয়ানকে এখন এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কূটনীতির কেন্দ্রস্থলে থাকতে হবে। চীনের এই চুক্তিতে আগ্রহকে কেবল প্রতীকী নয়, বরং কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচনা করা প্রয়োজন। তিনি যোগ করেন, চীন এ অঞ্চলের শান্তি ও নিয়ম-শৃঙ্খলার প্রতি দায়বদ্ধতা দেখিয়ে, মূলত যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতেই এই উদ্যোগ নিচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য, প্রমাণ করা—দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমেরিকা নয়, বরং চীনই প্রকৃত ভূমিকা রাখতে পারে।


আমার বার্তা/জেএইচ