ইরানে ট্রাম্পের যুদ্ধচেষ্টা থামাতে জোরালো অবস্থানে মার্কিন আইনপ্রণেতারা
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৫, ১২:১০ | অনলাইন সংস্করণ
আমার বার্তা অনলাইন

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল-ইরান উত্তেজনা তুঙ্গে উঠতে থাকায় মার্কিন আইনপ্রণেতারা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে বাধা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর পেছনে মূল লক্ষ্য—একটি আরও বিস্তৃত যুদ্ধ এড়ানো।
এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরও যুদ্ধবিমান পাঠাচ্ছে এবং আগে থেকেই মোতায়েন কিছু বিমান বহরের মিশন বাড়াচ্ছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের একজন জানিয়েছেন, নতুন করে মোতায়েনের মধ্যে রয়েছে এফ-১৬, এফ-২২ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান।
বুধবার (১৮ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে জিও নিউজ।
এর আগে অ্যাক্সিওস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছিল, ইসরাইল গত দুই দিনে যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের ইরানবিরোধী সামরিক অভিযানে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত এধরনের কোনো পদক্ষেপ বিবেচনা করছে না।
ইসরাইল দাবি করেছে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে—এই ‘উপসংহার’-এর ভিত্তিতে তারা অভিযান শুরু করেছে। ইসরাইলের এই আকস্মিক হামলায় ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্ব ও পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের বড় একটি অংশ নিহত হয়েছেন।
এই হামলায় এখন পর্যন্ত ইরানে ২২০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। পাল্টা জবাবে ইরান ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যাতে ইসরাইলে অন্তত ২০ জন প্রাণ হারিয়েছেন।
ইসরাইল দাবি করেছে, তারা এখন ইরানের আকাশসীমার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে এবং আগামী দিনে অভিযান আরও জোরদার করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইরান এখন পর্যন্ত ৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর এক কর্মকর্তা।
এ পরিস্থিতিতে ট্রাম্প দাবি করছেন, যদি ইরান যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শর্ত মেনে নেয়, তাহলে এই যুদ্ধ ‘সহজেই’ শেষ হয়ে যেতে পারে। তবে ইরান বারবার বলে আসছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায় না এবং পরমাণু প্রযুক্তি শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের অধিকার তাদের রয়েছে—যেটি তারা পারমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি)-এর সদস্য হিসেবেই উপভোগ করে।
উল্লেখ্য, ইসরাইল এই এনপিটি চুক্তির সদস্য নয় এবং দেশটি মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র দেশ, যাদের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে বলে বিশ্বজুড়ে বিশ্বাস করা হয়—যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেটা স্বীকার বা অস্বীকার করে না।
এই প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের দুই দল থেকেই বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের যুদ্ধক্ষমতা খর্ব করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্যানটাকির রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান থমাস ম্যাসি প্রতিনিধি পরিষদে একটি বিল উত্থাপন করেছেন, যাতে বলা হয়েছে—ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিতে চাইলে ট্রাম্পকে অবশ্যই কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে হবে।
এই বিলের আওতায় প্রেসিডেন্টকে কংগ্রেস অনুমোদনহীন চলমান হামলাও ‘তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ’ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে আল জাজিরা জানিয়েছে।
এদিকে সিনেটেও একই ধরনের একটি প্রস্তাব পেশ করেছেন ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের যুদ্ধঘোষণার ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পক্ষে কাজ করে আসছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একমাত্র তখনই যুদ্ধ গ্রহণযোগ্য, যখন সেটি যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করতে অপরিহার্য হয়।
সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স আরও একধাপ এগিয়ে অভিযোগ করেছেন, ‘ইসরাইল ইচ্ছাকৃতভাবে ইরানে হামলা চালিয়েছে, যাতে করে চলমান কূটনৈতিক প্রচেষ্টা—বিশেষ করে পারমাণবিক সংলাপ—বিকল হয়ে যায়।
স্যান্ডার্স বলেন, ‘কোনো দেশেই—ইরান হোক বা অন্য কেউ—কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমোদন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ব্যবহার করা যাবে না’।
সিনেটর র্যান্ড পলও সামরিক হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে বলেন, ‘এই যুদ্ধে জড়ানো আমাদের দায়িত্ব নয়’। কংগ্রেসম্যান ম্যাসিও এক্স-এ লিখেছেন, ‘এটা আমাদের যুদ্ধ নয়’।
এদিকে কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর এক্স-এ লিখেছেন, ‘কেউ আমেরিকানদের ওপর আক্রমণ করছে না বা করেনি। এখন সময় এসেছে আমেরিকানদের এই যুদ্ধে টেনে আনা বন্ধ করার। ইসরাইল যেন তাদের ‘পছন্দের যুদ্ধ’-এ আবারও আমেরিকাকে জড়িয়ে ফেলতে না পারে। যারা শান্তির কথা বলেছিলেন, তাদের প্রতি আস্থা রাখা আমেরিকানদের জন্য দাঁড়ান—আর নতুন কোনো প্রজন্মকে ব্যয়বহুল যুদ্ধে ঠেলে দেবেন না।’
আমার বার্তা/জেএইচ